সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বাংলার ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আরও এক যুগান্তরকারী পদক্ষেপ আবারও সামনে এল। বাংলার প্রায় ১৫ লক্ষ মৎস্যজীবীর নামে ৫ লক্ষ টাকা করে বিমা করিয়ে দিচ্ছে মমতার সরকার। আর সেটাও বিনামূল্যে। অর্থাৎ এই বিমার জন্য কোনও মৎস্যজীবীকে ১টাকাও খরচা করতে হবে না। তবে এই সুবিধা পাওয়ার জন্য তাঁদের অবশ্যই নাম নথিভুক্ত করতে হবে এই প্রকল্পের মধ্যে। আগামী ১ নভেম্বর থেকেই সেই নাম নথিভুক্তকরণের কাজ শুরু হয়ে যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে হাওড়া ও দুই মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবীদের এই বিমার আওতায় আনা হচ্ছে। রাজ্যের উপকূলবর্তী দুই জেলা যথা পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই সব থেকে বেশি মৎস্যজীবী থাকেন এবং এই দুই জেলার মৎস্যজীবীরাই সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারান। সেক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মৎস্যজীবীরা বিমার আওতায় এলেও কেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মৎস্যজীবীরা কেন এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়লেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।জানা গিয়েছে, আগামী ১ নভেম্বর থেকে রাজ্যে যে দুয়ারে সরকার চালু হচ্ছে সেখানেই রাজ্যের মৎস্যজীবীদের গিয়ে নিজের নাম এই প্রকল্পের জন্য নথিভুক্ত করতে হবে। দুয়ারে সরকারের পর মৎস্যজীবীদের তথ্য ভাণ্ডার তৈরি হলে বাকিদেরও সুবিধা দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের প্রাথমিক ধারনা এই প্রকল্পের জন্য ১৫ লক্ষ মৎস্যজীবী তাঁদের নাম নথিভুক্ত করবেন। এর ফলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে একজন মৎস্যজীবীর পরিবার পাবে ৫ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি, জখম হলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ খরচ পাবেন মৎস্যজীবীরা। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য ১ লক্ষ টাকাও পেতে পারেন উপভোক্তারা। বাংলার মৎস্যজীবীদের জন্য সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবি দীর্ঘদিনের। বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকজন সচিত্র পরিচয়পত্র পেলেও অধিকাংশের কাছেই তা নেই। স্বাভাবিক কারণেই মৎস্যজীবী এবং মৎস্যচাষি সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ কোনও তথ্যও নেই রাজ্য সরকারের কাছে। অথচ প্রতি বছর বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বণ্টন করা হয় মৎস্যজীবীদের মধ্যে। সেই কারণে এবার দুয়ারে সরকার শিবিরের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের নিবন্ধীকরণ প্রক্রিয়া চালাবে রাজ্য। তার ভিত্তিতে প্রত্যেক মৎসজীবীকে একটি করে বারকোড যুক্ত পিভিসির তৈরি সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে শুধুমাত্র নিবন্ধীকৃত মৎস্যজীবী এবং মৎস্যচাষিরাই সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা পাবেন।
এই বিষয়ে রাজ্যের মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, ‘মৎস্যজীবীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। মাঝেমধ্যেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েন তাঁরা। প্রাণহানির খবর আসে কখনও কখনও। সেই কারণে তাঁদের বিমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। বিমার সুবিধা পেতে দুয়ারে সরকার শিবিরে গিয়ে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে মৎস্যজীবীদের। আবেদনকারীর নমিনির নাম, সম্পর্ক, ঠিকানা ও বয়স দিতে হবে। সেই সঙ্গে লাগবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য। ইতিমধ্যে আবেদনপত্রের খসড়া খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাজার অর্থনৈতিক টানাটানি সত্ত্বেও সাধারণ মৎস্যজীবীদের কথা মাথায় রেখে এই উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct