সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: আন্দামান সাগরে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণাবর্ত পা রেখেছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যেই তা সুস্পষ্ট নিম্নচাপ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। ২২ তারিখ সকালের মধ্যেই তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে তা ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে। নাম হবে তার সিত্রাং। এরপর ২৫ তারিখ রাতে অথবা ২৬ তারিখ ভোরে এই ঝড় আছড়ে পড়বে স্থলভাগে। দিল্লির মৌসম ভবনের দাবি, এই ঝড় অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে যাবে না। বরঞ্চ তা ওড়িশা, বাংলা অথবা বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে স্থলভাগে ঢুকবে। ঝড়ের গতিবেগ ভূমিস্পর্শকালে ঠিক কত হবে সে বিষয়ে অবশ্য এখনও ধন্ধে আছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে ঝড়ের প্রাথমিক অভিমুখ মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় এখন বাংলা ও ওড়িশার মোট ১৫টি জেলায় হাইঅ্যালার্ট জারি করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সব সরকারি কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের পথেও দুই রাজ্যের সরকার হাঁটা দিতে পারে বলে জানা গিয়েছে। সিত্রাংয়ের জেরে ওড়িশা সরকার ইতিমধ্যেই ঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। রাজ্যের গঞ্জাম, পুরী, খুর্দা, জগৎসিংহপুর, ভদ্রক, কেন্দ্রপাড়া এবং বালাসোর জেলায় হাই অ্যালার্ট জারি করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের সিংহভাগ দফতরের কর্মকর্তাদের সদর দফতর ছাড়তে বারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে এই জেলাগুলিতে। পাশাপাশি ২২ অক্টোবর অর্থাৎ শনিবার থেকে সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই পথে হাঁটা দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। ইতিমধ্যেই দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলি জেলায় ঝড় নিয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা জারি করে দেওয়া হয়েছে। এই জেলাগুলির সব সরকারি কর্মচারীদেরও ছুটি বাতিল করতে পারে নবান্ন। একইসঙ্গে কালিপুজোর মণ্ডপগুলি পরিকাঠামো যাতে পোক্তভাবে করা হয় তার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নবান্নের তরফে। জেলাশাসকদের নিজেদের নজরদারি করতে বলা হয়েছে এই ক্ষেত্রে।
দিল্লির মৌসম ভবনের দাবি, বিভিন্ন মডেল অনুসরণ করে ঘূর্ণিঝড়ের একাধিক সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি পাওয়া যাচ্ছে। তাই এব্যাপারে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব হয়নি। তবে আবহাওয়াবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় অন্ধ্র উপকূলের দিকে যাবে না। বরঞ্চ তা ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের কোনও স্থানে এটা আছড়ে পড়বে। যদিও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে এখনও পশ্চিমবঙ্গের জন্য কোনও সতর্কবার্তা দেয়নি কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন কোনও ঝুঁকি নিচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে জেলাগুলিতে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। কালী পুজো-দেওয়ালি উৎসবের সময় দু্র্যোগ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় প্রশাসন আরও চিন্তিত। কালীপুজোর প্যান্ডেল থাকবে। তাই জেলা প্রশাসনগুলিকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার মানুষকে সতর্ক করার জন্য প্রচার চালাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে শনিবার বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ তৈরি হবে। এর প্রভাবে রবিবার থেকে উপকূল এলাকায় বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন। এর পর সময় যতই এগোবে বৃষ্টি ও বাতাসের বেগ ততই বাড়বে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct