আপনজন ডেস্ক: পৃথিবীতে রহস্যের আদি-অন্ত নেই। কোন কোন রহস্যের জট খোলে আবার কিছু রহস্য এমন যে- তার কোন শেষ-সীমা মেলে না। এমন সব রহস্য মোড়ানো স্থান, কাল আবার অভিশপ্ত হিসেবেও বিবেচিত। আজকের লেখায় থাকছে রহস্যঘেরা এক দ্বীপের কথা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জানুন।এ এক অভিশপ্ত দ্বীপ। সারাবছর এক ফোঁটাও বৃষ্টি পড়ে না এখানে। জীবজন্তু কিংবা পাখিরাও এড়িয়ে যায় এই ভূখণ্ড। আইল্যান্ডের মাটিতে পা রাখার পর থেকে অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করে মানুষও। এখন পর্যন্ত এই দ্বীপের রহস্যময় চরিত্র বিজ্ঞানীদেরও অজানা। সমুদ্রের ধারের এক আপাতশান্ত দ্বীপ, স্থানীয় নাম ইসলা বালত্রা, আর তাকে ঘিরেই দানা বেধেছে অজানা রহস্যের জট। প্রকৃতির খামখেয়ালি, না অভিশাপ- কী মিশে আছে বাল্ট্রা দ্বীপের মাটিতে? বাল্ট্রা দ্বীপের ওপর দিয়ে যাওয়া বিমানগুলোতেও কম্পাস কাজ করে না।
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত অদ্ভুত আর রহস্যময় দ্বীপ বাল্ট্রা। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। এখানে ১৩টি দ্বীপের অন্যতম এই বাল্ট্রা দ্বীপ। জনমানুষের দেখা মিলবে না গোটা দ্বীপ জুড়ে। মানব বসতি নেই বলেই হয়তো এই দ্বীপের আরেক নাম ‘ডেড আইল্যান্ড’ বা মৃত দ্বীপ। এই দ্বীপের চরিত্র আশপাশের ১২টা আইল্যান্ডের থেকে একেবারেই আলাদা। এই দ্বীপের রাজনৈতিক ইতিহাসও কম মুখরোচক নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় পানামা খালকে সুরক্ষিত রাখা এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য বাল্ট্রা দ্বীপে বিমানঘাঁটি স্থাপন করেছিল মার্কিন সরকার। এর পর থেকেই প্রচারের আলো এসে পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এই দ্বীপের শরীরে। এই দ্বীপের রহস্যময় আচরণের কথাও সেই সময় থেকেই প্রথম জনসমক্ষে আসে। গ্যালাপাগোস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। আশেপাশের অন্য আইল্যান্ডগুলোতে প্রবল বর্ষণ হলেও বৃষ্টির একটি ফোঁটাও পড়ে না বাল্ট্রায়। কী এক রহস্যময় কারণে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো বাল্ট্রার মাটিতে পড়ার আগেই উড়ে চলে যায় অন্য দিকে। বাল্ট্রার ঊষর বুক জল পায় না একফোঁটাও। বৃষ্টি না হওয়ায় গ্যালাপাগোসের অন্য দ্বীপগুলোর তুলনায় এই দ্বীপের চরিত্রও একেবারে আলাদা। বিপ্রতীপই বলা যায়। ইকুয়েডরের আশেপাশের এই দ্বীপগুলোতে বাস করে প্রচুর পরিমানে সিল, ইগুয়ানা, দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটিসহ নানা জাতের সরীসৃপ। বিরল প্রজাতির নানা পাখির আনাগোনা লেগে থাকে এইসব দ্বীপে। মজার ব্যাপার, এইসব স্থানীয় জীবজন্তুদের কারও দেখা মেলে না বাল্ট্রায়। আসে না পাখিও।
রুক্ষ ধূসর এই দ্বীপটায় একটা গাছ পর্যন্ত নেই। এক জাতের ফণীমনসা আর পালো সান্টো গাছ ছাড়া সবুজের দেখা মেলে না এই ধূ ধূ শূন্য দ্বীপে। কী এক অজানা ভয়ে ছোটখাটো সরীসৃপেরাও এড়িয়ে চলে এই দ্বীপ। দেখা গেছে, বাল্ট্রাকে এড়িয়ে পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলছে প্রাণীগুলো। আকাশে উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসে পড়লে তক্ষুনি দিক বদল করে চলে যায় অন্য দিকে। দেখে মনে হয়, যেন কোনও দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাচ্ছে ওরা। জনশ্রুতি বলে, বাল্ট্রা দ্বীপে এক সময় মানববসতি ছিলো। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে কী এক অদ্ভুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে এই দ্বীপে। হু হু করে মানুষ মরতে শুরু করে। ভয় পেয়ে দ্বীপবাসীরা সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালায়। মুখে মুখে রটে যায় এই দ্বীপ অভিশপ্ত, একবার গেলে আর প্রাণ নিয়ে ফেরা যাবে না। সেই থেকে জনমানবশূন্য এই আইল্যান্ড। একেবারে ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করে দ্বীপটির ভেতর, যার প্রভাবে ঘটে একের পর এক রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য বলেই মনে হবে।বাল্ট্রায় এলেই না কি অস্বাভাবিক আচরণ করে নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস। উন্নতমানের দামি কম্পাসও কাজ করে না এই দ্বীপে। সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো, বাল্ট্রা দ্বীপের ওপর দিয়ে যাওয়া বিমানগুলোতেও কম্পাস কাজ করে না। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক। বাল্ট্রার আরেকটি অদ্ভুত দিক, এই আইল্যান্ডে পা দিলেই অদ্ভুত কিছু অনুভূতি হয়, মাথার ভেতর হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার বোধ আচ্ছন্ন করে ফেলে। কিছু সময় এই দ্বীপে থেকে আবার চলে আসার পর বেশ কিছুদিনআশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কেন হয় এমন? প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্ব আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বাল্ট্রা দ্বীপের এ রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি আজও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct