আপনজন ডেস্ক: স্যার সৈয়দ আহমেদ খান পুরস্কারে ভূষিত হলেন আল আমীন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম। স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের ২০৫-তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এই পুরস্কার প্রদান করল কলকাতার মাওলানা শওকত আলী ফাউন্ডেশন। রবিবার সন্ধ্যায় মুসলিম ইন্সটিটিউটের কাদের নওয়াজ হলে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে রাজ্যজুড়ে শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আল-আমীন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলামকে ‘স্যার সৈয়েদ আহমেদ খান পুরস্কার’-এ সম্মানিত করা হয়। তার হাতে পুরস্কারের মেমেন্টো তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন এবং মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী মহম্মদ গুলাম রাব্বানি। পুষ্পস্তবক ও শাল দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেন সাংসদ মহম্মদ নাদিমুল হক। পাশাপাশি হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার সামারিটান হেল্প মিশনের কর্ণধার মামুন আখতার-কে প্রান্তিক সমাজে সামাজিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য ‘মাওলানা শওকত আলি ফাউন্ডেশন’ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় পবিত্র কুরআন পাঠের মধ্য দিয়ে। স্বাগত ভাষণ দেন মাওলানা শওকত আলী ফাউন্ডেশনের সভাপতি নিসার আহমেদ। তিনি সংখ্যালঘু সমাজে শিক্ষা প্রসঙ্গে নানানা গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা দফতরের মন্ত্রী মহম্মদ গুলাম রাব্বানি শিক্ষাপ্রসারে স্যার সৈয়দ আহমেদের কঠোর সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। স্যার সৈয়দ আহমেদের কথা বলতে গিয়ে তিনি আল-আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলামের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই নুরুল ইসলামের মতো অনুপ্রেরণা ও আত্মত্যাগ দিয়ে সমাজে শিক্ষার প্রসারে নিজেকে আত্মোৎসর্গ করতে পেরেছেন। তাই স্যার সৈয়দ আহমেদের মতো এম নুরুল ইসলামকেও সমগ্র দেশের মানুষ মনে রাখবে বলে মনে করেন গুলাম রব্বানি। সাংসদ নাদিমুল হকও শিক্ষাক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা ও কর্ম তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও এখনো বহু পথ অতিক্রম বাকি বলে মন্তব্য করেন।পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় এম নুরুল ইসলাম বলেন, আজকের ছোট অথচ বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে ভরা অনুষ্ঠানের মূল বিষয় লেখাপড়া শিখে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়া। তিনি মন্ত্রী মহম্মদ গুলাম রাব্বানি, সাংসদ মহম্মদ নাদিমুল হক, ভূতপূর্ব কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মহম্মদ আলি আশরফ ফাতমি, অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস মহম্মদ নিজাম শামিম সহ উপস্থিত উদ্যোক্তা ও অতিথিদের প্রতি শুভেচ্ছা ও সালাম জানান। ‘মাওলানা শওকত আলি ফাউন্ডেশন’ পুরস্কারে ভূষিত হাওড়ার সামারিটান হেল্প মিশনের কর্ণধার মামুন আখতারের নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষার সঙ্গে কাজ করে যাওয়অর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
রাজ্যের শিক্ষা জগতে সঙখ্যালঘুদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নুরুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা যখন আমাদের যাত্রা শুরু করি সেসময় রাজ্য তথা দেশের উন্নয়নে সংখ্যালঘুদের ভূমিকা ছিল মাত্র ২-৩ শতাংশ। সাড়ে তিন দশক পরে যেকাজের জন্য আল-আমীন পরিচিত সেই সর্বভারতীয় নিট–এর সাফল্য কিছুটা হলেও আমাদের আশাবাদী করেছে। ২০২২-এ নিটের সাধারণ আসনে ৬০০ ও তার বেশি নম্বর পেয়েছে কেবলমাত্র আল-আমীন মিশনেরই ১৯ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী। এবং সঙ্গে অন্য মিশনদের ধরলে সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের শতকরা হার হবে প্রায় ২৫ ভাগের বেশি যেটি তাঁদের জনসংখ্যার শতকরা হারের সমান। তিনি বলেন অন্তত স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে জাতির উন্নয়নে সংখ্যালঘু সমাজের অবদান সার্থক হয়েছে। মিশনের সঙ্গী, কর্মী এবং সফল ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে বিনম্রচিত্তে এই পুরস্কার গ্রহণ করছেন বলে তিনি জানান। কারণ এক একটা সামাজিক স্বীকৃতিই মানুষকে বহু পথ এগিয়ে দেয়।কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী মহম্মদ আলি আশরফ ফাতমি অতীত ও বর্তমানের শিক্ষাধারার সংক্ষিপ্ত আকর্ষণীয় ইতিহাস তুলে ধরেন। শিক্ষাক্ষেত্রে আল-আমীন মিশনের সামগ্রিক অবদানের তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন। মামুন আখতার তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, সংখ্যালঘু সমাজ শিক্ষায় আগের চেয়ে কিছুটা অগ্রগতি করলেও এখনো বহু কাজ করা বাকি। তিনিও আল-আমীন মিশনের ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস মহম্মদ নিজাম শামিম সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এদিনের অনুষ্ঠানে কাউন্সিলার সন্তোষ পাঠক, ফেসেস-এর সভাপতি ইমরান জাকি, ছাপতে ছাপতে ও তাজা টিভির প্রধান সম্পাদক বিস্মম্ভর নাহার প্রমুখও ভাষণ দেন। এছাড়া কলকাতার সারস্বত সমাজের বহু বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠান সুচারুরুপে পরিচালনা করেন মাওলানা শওকত আলি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আয়াজ আহমেদ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct