সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বাংলার বুকে নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় কার্যত সাড়া পড়ে গিয়েছে গোটা দেশেই। এই দুর্নীতির ঘটনায় যেমন কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ফ্ল্যাট থেকে তেমনি অনান্যদের ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক সম্পত্তি বৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় পার্থ-অর্পিতা ছাড়াও গ্রেফতার হয়েছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাধিক কর্তা মায় রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। সেই নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি আগেই জানিয়েছিল এই দুর্নীতিতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এখন তাঁদের দাবি, এই টাকার অর্ধেক অংশ, অর্থাৎ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা এখনও কলকাতা শহরের মধ্যেই লুকিয়ে রাখা আছে কোথাও না কোথাও। সেই টাকা না এখনও কোথাও বিনিয়োগ হয়েছে না কোথাও পাচার করা গিয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে ওই টাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।ইডির আধিকারিকদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির টাকার অঙ্ক ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই টাকার একটা বড় অংশ নানা জায়গায় বিনিয়োগ হয়েছে বা তা দিয়ে সম্পত্তি কেনা হয়েছে কিংবা তা নগদ টাকাতেই বাড়িতে রাখা হয়েছিল যা উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সেই দুর্নীতির টাকার একটা বড় অংশ এখনও কলকাতা শহরেই নানা জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। খুব কম করেও সেই টাকার পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকা। ২০১৪ থেকে টানা ৭ বছর ধরে এই টাকা নানা জায়গায় গচ্ছিত করে রাখা হয়েছে। কোথায়, কীভাবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা রাখা হয়েছে, তা খুঁজে বের করাই এখন তদন্তকারীদের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ। ইডির হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, চাকরির জন্য অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের দেওয়া টাকা জেলার এজেন্টদের মাধ্যমে পৌঁছেছিল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে। এছাড়া টাকা রাখা হতো পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তির ফ্ল্যাট বা বাড়িতে। তাঁরা প্রত্যেকেই কলকাতার বসিন্দা এবং সবারই বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনের ফ্ল্যাট আছে দুই ২৪ পরগনা ও হাওড়া জেলার কলকাতা লাগোয়া এলাকায়।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট বিশ্লেষণ ক্রেন ইডির আধিকারিকেরা। জেলার কোন এজেন্ট কত টাকা পাঠিয়েছেন, তা ওই চ্যাট থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন। সেই চ্যাট থেকেই তাঁরা জানতে পেরেছেন রীতিমতো ট্রাঙ্ক বোঝাই হয়ে টাকা ঢুকেছে কলকাতায়। কোনও কোনও ট্রাঙ্কে একসঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকাও এসেছে বলে ইডি্র আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন। ওই সব চ্যাটে ‘কোড ওয়ার্ড’ ব্যবহার তথ্যের আদানপ্রদান ঘটেছে। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে বিভিন্ন এজেন্টকে জানানো হয়েছে, টাকা কখন কার ফ্ল্যাটে পাঠাতে হবে। সেই সূত্রে ইডির আধিকারিকদের হাতে কিছু ফ্ল্যাটের ঠিকানা ও মালিকের নাম এসেছে। তাঁরা এটাও জানতে পেরেছেন যে, টাকা এসেছে সিকিওরিটি এজেন্সির গাড়িতে। টাকার বাক্স নামিয়েছেন বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা। যে সমস্ত ঠিকানার উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে বেহালা, নাকতলা, যাদবপুর সহ বিভিন্ন জায়গার নাম রয়েছে। ওই সব মেসেজের তথ্য বিশ্লেষণ করে ইডির আধিকারিকদের ধারণা, প্রায় ২৫০ কোটি টাকা এখনও কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তবে অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পর ট্রাঙ্ক ভর্তি টাকা লুকিয়ে রাখার জায়গা বদলে ফেলা হয়েছে বলেও জেনেছেন তাঁরা। তবে কলকাতার বাইরে কোথাও তা সরানো সম্ভব হয়নি। ওই টাকা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ওই সব ডেরাগুলি চিহ্নিত করে দুর্নীতির টাকা উদ্ধার করতে চাইছেন ইডির আধিকারিকেরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct