বর্তমান পৃথিবীতে সামগ্রিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দূষিত বর্জ্য পদার্থের পরিমাণও চরমভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তে আমরা প্লাস্টিক নির্মিত বিভিন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। যেহেতু প্লাস্টিক অপচনশীল বস্তু তাই এটি মাটির সাথে সরাসরি মিশে না গিয়ে উল্টে মাটির চরম ক্ষতি সাধন করে চলেছে। মূলত প্লাস্টিক বিভিন্ন ক্ষতিকর দুষক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত, তথাপি এটি যেকোনো জায়গার পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটিয়েও থাকে। এ নিয়ে লিখেছেন সজল মজুমদার।
বর্তমান পৃথিবীতে সামগ্রিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দূষিত বর্জ্য পদার্থের পরিমাণও চরমভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তে আমরা প্লাস্টিক নির্মিত বিভিন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহারে একেবারে যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। যেহেতু প্লাস্টিক অপচনশীল বস্তু তাই এটি মাটির সাথে সরাসরি মিশে না গিয়ে উল্টে মাটির চরম ক্ষতি সাধন করে চলেছে। মূলত প্লাস্টিক বিভিন্ন ক্ষতিকর দুষক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত, তথাপি এটি যেকোনো জায়গার পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটিয়েও থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সারা বিশ্বে ৩০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিবছরই প্রায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। অন্যদিকে আমাদের চারপাশে প্লাস্টিক নির্মিত সব থেকে চেনা বস্তুগুলো হল প্লাস্টিকের জলের বোতল, প্লাস্টিকের মোড়ক, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। এছাড়া শহরাঞ্চলে তো যত্রতত্র প্লাস্টিকের ব্যানার, হর্ডিং, ছেয়েই রয়েছে। তবে দোকান, বাজারে প্লাস্টিক নির্মিত যে বস্তুটির এখনো রমরমা চলছে তা হল প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে চলতি বছরের ১লা জুলাই থেকে দেশজুড়ে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের সকল বস্তুর উৎপাদন, বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, কিন্তু তার প্রভাব খুব সীমিত সময়ের জন্য সাময়িকভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছিল। দোকান ,বাজারে বিভিন্ন এলাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অভিযান চালিয়ে পরিবেশ দূষণকারী ৪০ মাইক্রোনের নিচে বহু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগও বিভিন্ন জায়গায় বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানও সরকারি, বেসরকারি তরফ থেকে করা হয়েছিল। পরিবর্তে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট আইন অনুসারে ৭৫ মাইক্রোনের অধিক পরিবেশবান্ধব ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিলো।
কিন্তু কিছুদিন পরেই যেই কে সেই!! এখন সর্বত্র লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আবার ৪০ মাইক্রোনের সেই পরিবেশ দূষণকারী ক্যারি ব্যাগ পুরোদস্তুর সব জায়গায় চলছে। প্রশ্নটা ঠিক এখানেই!!? ৪০-৫০- ৭৫ মাইক্রোন যাই হোক না কেন, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের কি কোনো বিকল্প হতে পারে না!!!তাই সময় এসেছে, এখন থেকেই জৈব ভঙ্গুর বা বায়ো-ডিগ্রেডেবল ক্যারিব্যাগের বহুল উৎপাদনের দিকে অবশ্যই নজর দেওয়া উচিত। পচনশীল এই ধরনের ক্যারি ব্যাগ ব্যবহারের পরিবেশগত নানান সুবিধা রয়েছে।এই ক্যারি ব্যাগ সহজেই মাটিতে বিয়োজিত হয়ে যায়, এগুলোর পুনর্ব্যবহার সম্ভব, কোন ধরনের মৃত্তিকা দূষণও ঘটায় না। বায়ো-ডিগ্রেডেবল ক্যারিব্যাগের বিভিন্ন প্রকারও রয়েছে।যেমন - Polylactic acid based(PLA), Polyhydroxyalkanoate(PHA) bases, Starch blends based, Cellulose based ব্যাগ ইত্যাদি। প্রতিটি ধরনের বায়ো-ডিগ্রেডেবল ক্যারিব্যাগ বানানোর সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে ক্রমবর্ধমান বা উদীয়মান শিল্প হিসেবে নিকট ভবিষ্যতে বায়ো-ডিগ্রেডেবল ক্যারিব্যাগ উৎপাদন বিশ্ব তথা দেশজুড়ে জায়গা করে নিতে চলেছে। অবশ্য কোন নির্দিষ্ট জায়গায় বায়োডিগ্রেডেবল ক্যারি ব্যাগ মেনুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপন করার পর সেখানে কাঁচামালের সাথে সাথে Extrusion machine, sealing & cutting machine, Printing machine এগুলো থাকা আবশ্যক। যদিও অনলাইনে সার্চ করলে কিছু সাইটে বায়ো-ডিগ্রেডেবল ক্যারি ব্যাগের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
তবে তা বর্তমানে অনেকটাই সীমিত। উদাহরণস্বরূপ , উল্লেখ্য বায়ো-ডিগ্রেডেবল ক্যারিব্যাগ উৎপাদন এবং সরবরাহ পরীক্ষামূলকভাবে রাজ্যের জলপাইগুড়ি শহরের মালবাজার পৌরসভা সর্বপ্রথম করে দেখিয়েছে। মাল পুরসভা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে এই ক্যারি ব্যাগ উৎপাদন এবং বন্টন শুরু করেছে। মজার বিষয় এই ধরনের ক্যারি ব্যাগ পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব এবং ৪৫ দিন পর পচে সার হয়ে যায়, পাশাপাশি কোনভাবেই পরিবেশ দূষিত হয় না। অবশ্য এই ধরনের ক্যারি ব্যাগের পাশাপাশি মোটা কাগজের ব্যাগ, চটের ব্যাগ, পাটের ব্যাগ বাণিজ্যিকভাবে বেশি পরিমাণে তৈরি করে বাজারে ছাড়লে এমনিতেই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই সচেতনতা, প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগ বন্ধের জন্য অভিযান চালানোর পাশাপাশি বায়ো-ডিগ্রেডেবল ক্যারি ব্যাগ প্ল্যান্ট দেশ তথা রাজ্যের নানান জায়গায় স্থাপন করে উক্ত ক্যারীব্যাগ ব্যবহার করলে আমরা অচিরেই প্লাস্টিকের কবল থেকে মুক্ত হতে পারবো।তবে হ্যাঁ, তার জন্য অবশ্যই চাই পরিবেশ বাঁচানোর সদর্থক মনোভাব। কারণ পরিবেশ, প্রকৃতি কে অবজ্ঞা, অবহেলা, অবরুদ্ধ, স্বাভাবিক গতিরুদ্ধ, করার কুফল আমরা হাতে নাতে টের পেয়েই চলেছি।তাই এর থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব বায়ো-ডিগ্রেডেবল ক্যারী ব্যাগ উৎপাদনে হয়তো আমরা অবিলম্বেই এগোব ,এই আশা করাই যায়।
লেখক শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct