সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: জীবনধারনের জন্য যে ৩টি জিনিস প্রাথমিক ভাবে আবশ্যিক হিসাবে চিহ্নিত হয় তা হল ‘রোটি, কাপড়া অওর মকান’। মানে পেটের ভাত, পরণের কাপড় আর থাকার জন্য ঘর। আবার অর্থনীতির সহজসরল ব্যাখা বলে মানুষের আয় বাড়লে, আয়ের স্থিরতা থাকলে কিংবা হাতে অতিরিক্ত অর্থ থাকলে তবেই মানুষ বাড়ি নির্মাণ বা তা কেনার জন্য অর্থের বিনিয়োগ করেন। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে, চলতি বছরে দেশজুড়ে আবাসনের বাজার যে জায়গায় গিয়েছে, তা ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে উজ্জ্বল। যে সাতটি শহরের আবাসন বাজারের ওপর নির্ভর করে ওই সমীক্ষা করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম কলকাতা। আবাসন সংস্থাগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন ক্রেডাইয়ের দাবি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলেই কলকাতায় সব থেকে বেশি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। গত ৯ মাসে কলকাতায় যে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে, তা গত ৮ বছরে সবচেয়ে বেশি। বিরোধীরা যখন বার বার দাবি করে বাংলার অর্থনীতি ভূলুন্ঠিত, মানুষ না খেতে পেয়ে মরছে, বেকাররা চাকরি পাচ্ছে না, তখন এই সমীক্ষার ছবিটাই সেই সব দাবি কতটা মিথ্যা ও মনগড়া সেটা পরিষ্কার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জমানায় দেশের অর্থনীতি যে ক্রমশ খারাপের দিকে হেঁটেছে তা এখন সর্বজনবিদিত। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা যে ক্রমশ উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে তা বিশ্ববাসীই দেখতে পাচ্ছেন। কোভিড আর লকডাউনের ধাক্কা যখন দেশের অর্থনীতিকে প্রবল ভাবে ধাক্কা দিয়েছে তখন বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিনামূল্যের রেশন এবং সরাসরি হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার মতো আর্থসামাজিক প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। তাই বাংলার অর্থনীতি সেভাবে ধাক্কা খায়নি কোভিডের বাজারে। মোদি সরকারের ভ্রান্তনীতির জন্য দেশে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না কিছুতেই। টাকার দর, জ্বালানি, আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার জেরে দেশের অর্থনীতি খুব ভালো পরিস্থিতিতে নেই, তা মানছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু তাঁরা এটাও মানছেন বাংলার অর্থনীতিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ও সফল অর্থনীতি হিসাবে তুলে ধরতে পূর্ণ মাত্রায় সক্ষম হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। তারই ছবি ধরা পড়েচঘে ক্রেডাইয়ের সমীক্ষায়। বাংলায় ক্রমশ চাঙ্গা হয়ে উঠছে আবাসন বাজার। মানুষ বাংলায় বিনিয়োগ করতে ভরসা পাচ্ছেন। বাংলায় বসবাস করতে চাইছেন। বাংলাকেই কর্মভূমি হিসাবে বেছে নিচ্ছেন। একটি রাজ্যে সুস্থিরতা, সুশাসন ও শান্তি না থাকলে এই ছবি দেখা যেত না।
আবাসন সংক্রান্ত বিশ্বের অন্যতম একটি উপদেষ্টা সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে মোট ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার। তারপর থেকেই ধাপে ধাপে নামতে থাকে বিক্রিবাটা। ২০১৭ সালে তা নেমে প্রায় ৯৬ হাজারে দাঁড়ায়। ২০২০ সালে সেই সংখ্যা নামে প্রায় ৭৪ হাজারে। অথচ চলতি বছরের প্রথম ন’মাসে সেই সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ১ লক্ষ ৬২ হাজারে। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, পুনে, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ— এই সাত শহরে ফ্ল্যাটের বিক্রিবাটার ওপর নির্ভর করে এই হিসেব কষা হয়েছে। সমীক্ষা বলছে, ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে কলকাতা শহরে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৩২০টি। আর গত তিন মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফ্ল্যাট বিক্রি হয় ৪ হাজার ৩৭০টি। এমনকী শহরে ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে বিক্রি না হওয়া ফ্ল্যাটের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৮ হাজার। সেই সংখ্যা গত তিন মাসে কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার। ক্রেডাইয়ের পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রেসিডেন্ট সুশীল মোহতার দাবি, ‘আমরা ২০১৬ সাল থেকেই শহরের ফ্ল্যাটের বাজার খারাপ দেখছি। সেই বছর নোটবন্দি হলেও, ২০১৭ সালে তার প্রভাব সম্পূর্ণভাবে পড়ে আবাসন শিল্পে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতি একটু একটু করে ভাল হতে শুরু করে। কোভিডের মধ্যেই মানুষ নতুন ফ্ল্যাটের সন্ধান শুরু করেন। রাজ্য সরকার স্ট্যাম্প ডিউটিতে দু’শতাংশ এবং সার্কেল রেটে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ায়, তা বাজারকে অক্সিজেন দেয়। তা এখন যথেষ্ট ভালো জায়গায় আছে। গৃহঋণে সুদ বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু আট-ন’বছর আগে যে হার ছিল, তার চেয়ে সুদ এখন কম। তাই মানুষ ফ্ল্যাট কিনছেন। এর বড় অংশই মধ্যবিত্তের আয়ত্তের মধ্যে থাকা আবাসন প্রকল্প। তবে ৬০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকার ফ্ল্যাটের বিক্রিও যথেষ্ট বেড়েছে শহরে। এমনকী এক কোটি টাকা বা তার বেশি দামের ফ্ল্যাটের বাজারও যথেষ্ট চাঙ্গা।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct