সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: আবকে বার ২০০ পার’ হাঁক দিয়ে বাংলা দখলে আসা গেরুয়া বাহিনী মক্ষম জবাব পেয়েছে বাংলার মানুষের কাছে। তাদের প্রত্যাখান করে বাংলার মেয়ের হাতেই বাংলার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন বাংলার মানুষ। সেই রাগে বার বার বাংলার প্রতি শুধু বঞ্চনাই দেখিয়ে চলেছে মোদি সরকার তাই নয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অমানবিক পদক্ষেপও করছে। তারই নিদর্শন এবার মিলল জঙ্গলমহলের শালবনীতে। সেখানে রাতারাতি ৪ হাজার পরিবারকে ৫ পুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের নোটিস ধরিয়েছে মোদি সরকার। আর সেই নোটিস পেয়ে এখন রাতের ঘুম ছুটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের শালবনী ব্লকের বাঁকিবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাইশটি মৌজার প্রায় চারহাজার পরিবারের। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ওই উচ্ছেদের নোটিস ধরানো হয়েছে। আগামী ১৮ অক্টোবরের মধ্যে পরিবারগুলোকে কলকাতার আলিপুরের অফিসে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর সেই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়।জানা গিয়েছে, বাঁকিবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলা, ওপর কমলা, বড় বাখরা, জামবনী, বীরভামপুর, পচাকুমা, ঢেঙ্গাশোল প্রভৃতি এলাকা মিলিয়ে মোট ২২টি মৌজায় চার হাজার পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। পরিবারগুলির যে জায়গায় বসবাস করছে, তা কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্ত ঠিকই। ব্রিটিশ আমলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সময় নিজেদের সুবিধার্থে এই এলাকাতে একটি এরোড্রাম গড়ে তোলা হয়েছিল। সেখানে নিয়মিত ভাবে বায়ুসেনার বিমান ওঠানামা করত। যুদ্ধের সময় ওই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ফের পরিবারগুলি এইসব এলাকায় ফিরে এসে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রক ‘মিলিটারি ল্যান্ড’ বলে এই জায়গাগুলি অধিগ্রহণ করে নেয়। তবে কংগ্রেস আমলে শান্তিতেই বসবাস করছিল পরিবারগুলি। পরবর্তীতে এই এলাকাতেই গড়ে উঠেছে টাঁকশাল, সিআরপিফের কোবরা বাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্প। এরই আশেপাশে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কয়েক হাজার একর জমিতে গড়ে উঠেছে বসতি। সবমিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এখন এদেরকেই উচ্ছেদের নোটিস ধরিয়েছে মোদি সরকার। আর হঠাৎ করে এই উচ্ছেদের নোটিস পেয়ে ওই পরিবারগুলি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।
পরিবারগুলির দাবি, তাঁরা বাপ ঠাকুরদার আমল থেকে ওই জায়গায় বসবাস করছেন। তাঁরা প্রতিবছর এরজন্য সরকারকে করও দেন। এখন হঠাৎ করে চলে যেতে বললে কোথায় যাবেন তাঁরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০১৪ সালে ও ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে বিজেপির নেতারা বাড়ি বাড়ি এসে বলে গিয়েছিল মোদি সরকার কেন্দ্রের ক্ষমতায় এলে তাঁদের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেবে। তাঁদের বসবাসকে বৈধতা দেবে। কিন্তু কিছুই করেনি। উল্টে একুশের ভোটে গোহারান হেরে এখন সেই রাগে তাঁদের উচ্ছেদের নোটিস ধরিয়েছে। এরই মধ্যে বাঁকিবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কৌশিক হাজরার দাবি, ‘২০১৩ সালে রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে জমি বিনিময়ের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। রাজ্য নিজেদের খাসজমি কেন্দ্রকে দিয়ে কেন্দ্রের এই জমি নিজেদের নামে করতে আগ্রহী হয়েছিল। তারপরেই কেন্দ্রের ক্ষমতা বিজেপি আসে। ফাইল চাপা পড়ে যায়। গত কয়েক দশক ধরে এই ৪ হাজার পরিবার এই এলাকায় বসবাস করছে। স্বাধীনতার আগে খাজনা দেওয়ার রশিদও রয়েছে তাঁদের কাছে। তাঁরা কেন নিজেদের জায়গা ছাড়বে?’ অন্যদিকে উচ্ছেদের নোটিস পাওয়া পরিবারগুলির দাবি, তাঁদের উচ্ছেদ করতে এলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। এর পিছনে কেন্দ্রের প্রতিহিংসার রাজনীতিকেই দায়ি করছেন তৃণমূল যুবর জেলা সভাপতি সন্দীপ সিংহ। তিনি ঞ্জানিয়েছেন, ‘তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ে হেরে গিয়ে জনগণের ওপর তার শোধ নিচ্ছে বিজেপি। সাধারণ গরিব পরিবারগুলোকে রাস্তায় নামানোর বন্দোবস্ত করছে তাঁরা।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct