সুব্রত রায়, কলকাতা: যে যে বিষয় নিয়ে বাংলার সরকারের সঙ্গে কেন্দ্র সরকারের বিবাদ বার বার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম আইএএস ও আইপিএস অফিসারদের নিয়ে টানাপোড়েন। বাংলায় যেমন যথেষ্ট সংখ্যক আইএএস অফিসারের অভাব রয়েছে তেমনি কেন্দ্রের ডেপুটেশনে রাজ্যের আইএএস অফিসারদের পাঠানো নিয়ে রাজ্যেরও আপত্তি আছে। এই টানাপোড়েনের অবসান ঘটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার সরব হয়েছেন পর্যাপ্ত আইএএস অফিসার চেয়ে। এবার সেই ডাকেই সাড়া দিল কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে সরকারি অফিস খুলে যাচ্ছে। আর ওই দিন থেকেই রাজ্যের কাজে যোগ দিচ্ছেন ১৪জন আইএএস অফিসার। দিল্লি থেকেই এদের পাঠানো হচ্ছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের ওই ১৪জন আইএএস অফিসার গত জুলাই মাস থেকে কেন্দ্রীয় সরকারে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে ডেপুটেশনে ছিলেন। মঙ্গলবার তাঁদের নবান্নে রিপোর্ট করার জন্য কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। নতুন আইএএস অফিসাররা রাজ্য সরকারের কাজে যোগ দিয়ে এখানকার প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে পরিচিত হতে বিভিন্ন দফতরে ওএসডি হিসেবে নিযুক্ত হন। তারপর বিভিন্ন জেলায় মহকুমা শাসকের দায়িত্বে যান। আগে প্রশিক্ষণ পর্ব পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর নতুন আইএএস আধিকারিকরা সরাসরি নিজের ক্যাডারের রাজ্যে যোগ দিতেন। কিন্তু মোদি জমানায় তা পাল্টানো হয়েছে। এখন কিছুদিন কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজে করেন নতুন আইএএস অফিসাররা। কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের সঙ্গে নতুন আমলাদের পরিচিত করতেই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
এখন পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস অফিসারের মোট সংখ্যা ২৮৮। সেখানে বাংলার কিছু আইএএস অফিসার কেন্দ্রীয় সরকারে ডেপুটেশনে আছেন। পশ্চিমবঙ্গে যে আরও বেশি সংখ্যক আইএএস অফিসার প্রয়োজন আছে তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার বলেছেন। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারকে সেটা জানিয়েছেন। তারপর এই নতুন আমলাদের পাঠানো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কেন রাজ্যে প্রয়োজন নতুন আইএএস? সম্প্রতি রাজ্যে নতুন জেলা তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সাতটি নতুন জেলা গঠনের জন্য ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই নতুন জেলা এবং মহকুমা গঠন করতে গেলে প্রশাসন চালাতে আরও বেশি আইএএস অফিসার প্রয়োজন। সেখানের প্রশাসনিক কাজকর্ম সামলাতে প্রয়োজন আইএএস অফিসার। প্রত্যেক বছর ১২–১৪ জন নতুন তরুণ আইএএস অফিসার পাচ্ছে রাজ্য।
এছাড়া আরও একটি বিষয় উঠে আসছে রাজনৈতিক ভাবে। কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী চাইছেন ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁর দল তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করুক বাংলার মাটিতে। তাতে কংগ্রেসের আসন সংখ্যাও বাড়তে পারে। যদিও সেই প্রস্তাব এখনও তৃণমূলের কাছে এসে পৌঁছায়নি। তবে লক্ষ্যণীয় ভাবে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যেকার আক্রমণ এখন অনেকটাই থিতিয়ে গিয়েছে। বিজেপি একদমই চায় না এই জোট হোক। কংগ্রেস ও তৃণমূল যাতে কাছাকাছি না আসে তার জন্য এখন প্রশাসনিক ভাবে তৃণমূলকে কাছে টানতে চাইছে মোদি সরকার। সেই কারণেই শুধু আইএএস অফিসার পাঠানোই নয়, মমতার আরও বেশ কিছু দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিতও মিলেছে দিল্লির সাউথ ব্লক সূত্রে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct