সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বাংলার বুকে বাম জমানার ৩৪ বছরের রাজত্বপাটে ধাক্কা দিয়েছিলেন বাংলার অগ্নিকন্যা । কিন্তু সেই বাম সমর্থকেরা বাংলা থেকে মুছে যাননি। এদের একটা বড় অংশই আবার পরবর্তীকালে বিজেপির সমর্থক হয়ে ওঠেন। কিন্তু কিছু সমর্থক লাল শিবিরে থেকেই যান। এদের মধ্যে কেউ কেউ রীতিমত বাম শিবিরের প্রতিবাদী তথা মমতা বিরোধী মুখও হয়ে ওঠেন। টলিউডের অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যেই অন্যতম। তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিকাবার সরব হয়েছেন তিনি, এমনকি রাস্তায় নেমে ‘হোক কলেবর’ শ্লোগান তুলতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেই স্বস্তিকাকেই দেখা গেল রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্ণিভালে মুখ্যমন্ত্রীর প্রণাম করতে। এমনকি পরে সেই ছবি নিজে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্টও করতে। স্বস্তিকার এহেন পরিবর্তনে অনেকেই চমকে গিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় মুখে হাসি ফুটেছে তৃণমূলের। অনেকেই মনে করছেন, উগ্র ও অন্ধ মমতা বিরোধিতার জায়গা থেকে সরে আসছেন স্বস্তিকা যা তাঁর ও বাংলার পক্ষে মঙ্গলজনক।বামেদের হটিয়ে যেহেতু মমতা ক্ষমতার অলিন্দে এসেছেন তাই বাম সমর্থকদের একটা বড় অংশই মমতা বিরোধী। তাঁদের মধ্যে আবার কেউ কেউ উগ্র ও অন্ধ মমতা বিরোধী। তাঁরা বৃষ্টি না হলেও মমতাকে গাল পাড়েন আবার রাস্তায় ষাঁড় গুঁতো মারলেও মমতাকে কাঠগড়ায় তোলেন। এদের একটা বড় অংশই ভেবেছিলেন মোদির হাতেই মমতার পতন হবে। তাই তাঁরা কাছা খুলে মমতা বিরোধিতা করার পাশাপাশি বিজেপিকে দুই হাত তুলে সমর্থন দিতে শুরুও করে দিয়েছিলেন। সেই সমর্থনের জেরেই বিজেপির বাড়বৃদ্ধি বঙ্গের মাটিতে। স্বস্তিকা কিন্তু সেই পথে হাঁটা দেননি। বিজেপি থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রেখেছেন। টলিউডের অনেক অভিনেতা ও অভিনেত্রীকে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিতে ও ভোটে দাঁড়াতে বা বিজেপির হয়ে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে। সেই হাওয়ায় গা ভাসাননি স্বস্তিকা। নিজেকে রাজনীতি থেকে সূরে সরিয়ে রেখেছিলেন, মমতা বিরোধীতা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। নিট রেজাল্ট, ২০২২ সালে দমদম পার্কের দক্ষিণপাড়া দুর্গোৎসব কমিটির অন্যতম ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডর স্বস্তিকা। বিশিষ্ট অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে তৃণমূল তথা মমতা বিরোধীতার জায়গা থেকে নিজেকে সরিয়ে না আনলে বা মমতার সমর্থন না থাকলে দক্ষিণপাড়া কখনই স্বস্তিকাকে তাঁদের ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডর করত না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্বস্তিকা কেন বদলালেন? অনেকেরই ধারনা স্বস্তিকা টলিউডে প্রত্যাবর্তন করতে চাইছেন। কেননা টলিউডে এখন অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে। স্বস্তিকা যে ভাল অভিনেত্রী সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু টলিউডে স্বস্তিকা কার্যত ব্রাত্য হয়ে ছিলেন মমতা ও তৃণমূল বিরোধিতা করে। সেই জায়গা থেকে স্বস্তিকা সরে আসতে চান নিজের মেয়ের কথা ভেবে, নিজের কেরিয়ারের কথা ভেবে। কারণ মুম্বই গিয়ে সেভাবে কাজের সুযোগ পাননি তিনি। পাশাপাশি মমতার হাত ধরে বাংলা কতখানি বদলেছে, বাংলার মেয়েদের কতটা উন্নতি হয়েছে সেটাও চাক্ষুষ করেছেন। দেখেছেন বাংলার মানুষ বাংলার মেয়ের পাশেই থেকেছে। এবার তো দেশের মানুষও বাংলার অগ্নিকন্যাকে চাইছে দেশের প্রধানমন্ত্রী রূপে। স্বস্তিকা দেখেছেন অতি বড় ও উগ্র মমতা বিরোধিতার জেরে বামেরা বাংলার বিধানসভা থেকে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছেন। তাই নিজেকে বদলেছেন স্বস্তিকা। যার বিরোধিতায় একসময় কলকাতার রাস্তায় নেমেছিলেন আজ তাঁকে প্রণাম করতে তাঁর বাধেনি। তাতে হয়ত অন্ধ মমতা বিরোধিদের গায়ে ফস্কা পড়ে গিয়েছে, তাঁরা তেঁড়েফুঁড়ে স্বস্তিকাকে গাল পাড়ছে, কিন্তু এর থেকেও অনেক মানুষ খুশি হয়েছে। টলি পাড়ায় কান পাতলে তাই শোনা যাচ্ছে, ১২ বছর বাদে ঘুম ভাঙল স্বস্তিকার। এটা মঙ্গল। স্বস্তিকার জন্য, বাংলার জন্যও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct