সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: দুর্গাপুজোয় বিপদ ধেয়ে আসেনি। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই তা পার হয়েছে। কিন্তু কালিপুজোর সময় বড় বিপদ ধেয়ে আসতে পারে বাংলার দিকে। অন্তত এমনটাই অনুমান দেশের একশ্রেনীর আবহাওয়াবিদদের মধ্যে। কেন না ১৭ অথবা ১৮ অক্টোবর নাগাদ দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ দানা বাঁধতে পারে। সেটি ক্রমশ সুপার সাইক্লোনের রূপ ধারণ করে এগিয়ে আসবে ভারতের পূর্ব উপকূলের দিকে। উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বাংলাদেশের মধ্যে কোনও একটি জায়গায় সেটি ভূমিস্পর্শ করতে পারে। সেই সময়ে এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হবে ঘন্টায় ২৫০কিমি । যা সুপার সাইক্লোনের কথাই মনে করিয়ে দেয়। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় হিসাবে রূপ ধারণ করলে তার নাম হবে ‘সিত্রাং'। আর এই খবরেই রীতিমত উদ্বেগ ছড়িয়েছে বাংলার প্রশাসনিক মহলে। কেননা আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতি ও স্মৃতি এখনও সারিয়ে উঠতে বা ভুলে যেতে পারেনি বাংলার মানুষ। এরই মধ্যে যদি আম্ফানের থেকেও শক্তিশালী কোনও ঝড় ধেয়ে আসে তাহলে কী হবে তা ভেবেই শঙ্কিত প্রশাসনের কর্তারা। দিল্লির মৌসম ভবনের আবহাওয়াবিদরা অবশ্য এখনই কোনও সতর্কবার্তা জারি করতে চান না। তাঁরা জানিয়েছেন, এখনই এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। তবে দেশের আবহাওয়াবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, ১৭ – ১৮ অক্টোবরের মধ্যে আন্দামান সাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ১৮ – ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে।
ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে সেটি উপকূলের দিকে এগোতে থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ – ২০০ কিলোমিটার। ভূমি স্পর্শকালে তার সর্বোচ্চ গতি হবে ঘন্টায় ২৫০কিমি। ২৪ বা ২৫ অক্টোবর তা স্থলভূমিতে আছড়ে পড়বে। সেই সময় উপকূলে ১৫ – ২০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকছে যাতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। এই ঘূর্ণিঝড় যেখানেই আঘাত হানুক, উপকূল ও লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি যে ঘটবে সে নিয়ে তাঁরা একদমই দ্বিমত নয়। আর এখানেই ভয় পাচ্ছেন বাংলার প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। এই ঝড় যদি বাংলার দিকে ধেয়ে আসে তাহলে সব থেকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আয়লার ক্ষতি এখনও দগদগ করছে সুন্দরবনের দিকে। তারপরও একের পর এক ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে এসেছে বাংলার উপকূলে। আম্ফানেও বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবার যদি ‘সিত্রাং’ ধেয়ে আসে তাহলে এই দুই জেলার ৫০ থেকে ৬০ কিমি এলাকা জলের তলায় চলে যাওয়ার বিস্তর সম্ভাবনা আছে। এমনিতেই বর্ষা শেষে অক্টোবর ও নভেম্বর মাস ঘূর্ণিঝড় প্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। তাই ঘূর্ণিঝড় যে তৈরি হবে না আর তা বাংলার দিকে ধেয়ে আসবে না এমনটা ভেবে নেওয়া উচিত নয়। বরঞ্চ যত দ্রুত সতর্ক হয়ে এই ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি আটকানো যাবে সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct