মুরগির পোষ্য থেকে খাদ্য হয়ে ওঠার কাহিনী
ফৈয়াজ আহমেদ
এক সময় মুরগি মানুষের খাবার ছিল না, পোষা প্রাণী হিসেবেই মানুষের সঙ্গে থাকতো। গৃহপালিতকরণের সময় মানুষ ও মুরগির সম্পর্ক বেশ জটিল ছিল।আধুনিক সময়ে এসে মুরগির ডিম বা মাংস মানুষের খাদ্যাভ্যাসের বড় অংশ জুড়েই আছে। ৪৩ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ব্রিটেন দখল করার পর-ই মূলত মুরগি খাবার চল শুরু করে। ব্রিটেনের মানুষও এক পর্যায়ে এক প্রকার বাধ্য হয়ে এই পরিবর্তনের অংশ হয়ে যায়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম হারিয়ে যায় মুরগির সেই মর্যাদাবহ পরিচয়, স্বাদই মুখ্য হয়ে ওঠে। এমন একটা সময় ছিল যখন মুরগির মাংস খাওয়ার বিষয়টি ছিল বিড়াল-কুকুরের মতো পোষ্যপ্রাণীর মাংস খাওয়ার সমতুল্য! যুক্তরাজ্যের কারডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি প্রমাণ পেয়েছেন, এক সময় মুরগি মানুষের খাবার ছিল না, পোষা প্রাণী হিসেবেই মানুষের সঙ্গে থাকতো। গবেষকরা লৌহ যুগের মুরগির হাড় পরীক্ষা করে দেখেন, মুরগিগুলোকে খাবার উদ্দেশ্যে মারা হয়নি। যুক্তরাজ্যের কারডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি প্রমাণ পেয়েছেন, এক সময় মুরগি মানুষের খাবার ছিল না, পোষা প্রাণী হিসেবেই মানুষের সঙ্গে থাকতো প্রধান গবেষক জুলিয়া বেস্ট বলেছেন, এই মুরগিগুলোর বয়সও ছিল বর্তমান সময়ের মাংসের জন্য পোষা মুরগির চেয়ে অনেক বেশি। মুরগিগুলোর হাড়ে সেরে ওঠা আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে, মানুষের দেওয়া চিকিৎসা সেবায় সেড়ে ওঠা হাড়ের প্রমাণ এটি। যে হাড়গুলো নিয়ে পরীক্ষা করেছেন, এর সবগুলোই আস্ত বা আস্তপ্রায় কঙ্কালের, গবেষকরা জানিয়েছে।
ড. জুলিয়া বেস্ট বলছেন, এসব ক্লু-ই বলছে, মুরগির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক শুধু খাদ্যের উৎস হিসেবে ছিল না। কিছু স্থানে মানুষের কবরের পাশে মুরগির কবর দেওয়ার নজিরও পাওয়া গেছে। এই গবেষণায় ব্যবহৃত মুরগির হাড়গুলোও প্রাচীন মানব কবরস্থান থেকেই পাওয়া গেছে। এই মুরগিগুলো হাড়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মুরগির হাড়ের আকার ও গঠনের তুলনা করেছে গবেষক দল। তুলনায় দেখা গেছে, প্রাচীন মুরগির হাড়ের আকার ছিল প্রায় দ্বিগুণ, বাঁচতও বেশিদিন। এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রমাণের সাপেক্ষে ধারণা করা হয়, মুরগিকে পোষ মানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় প্রায় ১০ হাজার বছর আগে। যদিও বেশিরভাগ মানুষের ধারণা প্রাচীন মানুষের খাদ্যাভ্যাসে মাংসই বেশি ছিল। তবে প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান সময়ের গড় হিসেবের তুলনায় তখনকার মানুষের খাদ্যাভ্যাসে সবুজ নির্ভরতা বেশি ছিল। ব্রিটেনের প্রাচীন মানুষদের খাদ্যাভ্যাসে ফল, সবজি ও ওটসের ব্যবহার ছিল অনেক বেশি। সে সময়কার মানুষের দাঁত পরীক্ষার পর গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছিল আরো আগেই। ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের অধ্যাপক নাওমি সাইকস এ বিষয়ে বলেছেন, গৃহপালিতকরণের সময় মানুষ ও মুরগির সম্পর্ক বেশ জটিল ছিল। মুরগি শুধু ঘরে পোষা প্রাণীই ছিল না, বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন প্রাণী ছিল, শতাব্দী ধরে মানুষের উদযাপন ও পূজার অনুষঙ্গ ছিল। বর্তমান সময়ে এসে মুরগি খাওয়া এতোটাই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আমরা মনে করি, এমন সময় ছিল না যখন মানুষ মুরগি খায়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct