সুলেখা নাজনিন, কলকাতা, আপনজন: সাচার কমিটির রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘুদের নগণ্য উপস্থিতি তৎকালীন বাম সরকারকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল। সেই সময় রাজ্যের জনসংখ্যার ২৫ শতাংশেরও বেশি সংখ্যালঘু মানুষ থাকলেও রাজ্য সরকারি চাকরিতে উপস্থিতি ছিল ৩.৪ শতাংশ। দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসানের পর আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্য সরকারি চাকরিতে তুলনামূলকভাবে পরিস্থিতি একটু ভাল হতে থাকে। ২০১৬ সালের স্টাফ সেন্সাস অনুযায়ী রাজ্য সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের হার বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়ায় ৫.৬ শতাংশ। এর মূল্যে অবশ্য সরকারি চাকরিতে ওবিসি-এ শ্রেণিভুক্তদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ প্রভূত কাজ করেছে। সাম্প্রতিক কালে রাজ্য সরকারি দফতরে মুসলিমদের অংশিদারিত্বের তথ্য পাওয়া না গেলেও পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস সহ বেশ কিছু সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের একটু সম্মানজনক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার নিয়োগের তালিকাতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
সর্বভারতীয় অভিন্ন ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’-এ উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় আটশোরও বেশি সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার নিয়োগেও সংখ্যালঘুরা কৃতিত্বের সঙ্গে সুযোগ পাচ্ছেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর ওয়েস্টবেঙ্গল হেলথ সার্ভিস রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ডাক্তার নিয়োগের এক তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে, মোট ১০৯৭ জন ডাক্তারকে সরকারি হাসপাতালে নিয়োগের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা ২৭৭জন। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল। এই ২৭৭ মুসলিম ডাক্তারের মধ্যে মহিলার সংখ্যা ৪৩জন। মুসলিম ডাক্তারদের সবচেয়ে বেশি নিয়োগ করা হয়েছে বীরভূম জেলার সরকারি হাসপাতালে। সেখানে মোট ৩৬জন মুসলিম চিকিৎসক নিয়োগ করা হচ্ছে। এর পরেই রয়েছে মুর্শিদাবাদ। এই জেলায় ৩৫জন মুসলিম ডাক্তার নিয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া, পূর্ব বর্ধমান জেলায় ২৮জন, উত্তর দিনাজপুর জেলায় ২২জন, মালদা জেলায় ২১জন ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২১জন মুসলিম চিকিৎসক নিয়োগ করা হচ্ছে। চাকরিতে যোগ দেওয়া সংক্রান্ত রিপোর্ট ২১ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিতে বলা হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct