সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: দুর্গাপুজো হয়ে গিয়েছে। ঘরে ঘরে চলছে মা লক্ষ্মীর আরাধনা। সপ্তাহ দুই বাদে মা কালীর পুজোয় মেতে উঠবে গোটা বীরভূম। সে এক দেখার মতো উৎসব। চলে আসবে ভাইফোঁটাও। আসবে ছট ও জগদ্ধাত্রী পুজোও। কিন্তু তার পরে পরেই দলীয় স্তরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে ঘাসফুলের অন্দরে। কেননা আগামী বছরের প্রথম দিকেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। কার্যত রাজ্যের সব জেলাতেই সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে তৃণমূলের অন্দরে। কিন্তু এবারে বীরভূমের বুকে ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে বীরভূম জেলা তৃণমূলের অন্দরে বাহিরে শেষ কথা হয়ে উঠেছিলেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। জেলার রাজনীতিতে তো বটেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেলার প্রশাসনিক স্তরেও শেষ কথা হয়ে উঠেছিলেন ‘দিদিমণির কেষ্ট’। কিন্তু সেই কেষ্ট’ই এখন জেলের ভিতরে। কেষ্টহীন সেই বীরভূমে এবারই প্রথম হতে চলেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেই ভোটের ফলাফল নিয়েই এখন চিন্তিত জেলার ঘাসফুল শিবির।বীরভূম জেলায় রয়েছে ১৯টি ব্লক। এর মধ্যে সিউড়ি সদর মহকুমায় রয়েছে ৭টি ব্লক। এগুলি হল সিউড়ি-১, সিউড়ি-২, রাজনগর, দুবরাজপুর, খয়রাশোল, সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজার। বোলপুর মহকুমার মধ্যে রয়েছে ৪টি ব্লক। এগুলি হল বোলপুর শ্রীনিকেতন, লাভপুর, নানুর ও ইলামবাজার। রামপুরহাট মহকুমায় রয়েছে ৮টি ব্লক। এগুলি হল রামপুরহাট-১, রামপুরহাট-২, ময়ূরেশ্বর-১, ময়ূরেশ্বর-২, নলহাটি-১, নলহাটি-২ এবং মুরারুই-১ ও মুরারুই-২। জেলার এই ১৯টি ব্লকে ছড়িয়ে রয়েছে জেলা পরিষদের মোট ৪২টি আসন। এর মধ্যে লাভপুর, বোলপুর-শ্রীনিকেতন, নানুর, সাঁইথিয়া, মুরারুই-২ ও নলহাটি-১ ব্লকে রয়েছে ৩টি করে আসন। খয়রাশোল, দুবরাজপুর, ইলামবাজার, মহম্মদবাজার, সিউড়ি-১, ময়ূরেশ্বর-১, ময়ূরেশ্বর-২, রামপুরহাট-১, রামপুরহাট-২, নলহাটি-২ এবং মুরারুই-১ ব্লকে রয়েছে জেলা পরিষদের ২টি করে আসন। রাজনগর ও সিউড়ি-২ ব্লকে রয়েছে জেলা পরিষদের ১টি করে আসন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূম জেলার এই ৪২টি জেলা পরিষদ আসনই গিয়েছিল তৃণমূলের দখলে। আর এবার এই সংখ্যাতত্ত্বেই চাপে ফেলেছে তৃণমূলকে।
কিন্তু কেন এই চাপ? প্রথমত অবশ্যই অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতি। জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিগত ১৫ বছর ধরে জেলা তৃণমূলে অনুব্রত মণ্ডল থুড়ি কেষ্ট’র কথাতেই সবকিছু চলত। তাঁর দাপটে জেলায় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত। বিরোধীরা ট্যাঁ ফু করার সাহসও পেত না। এ বার সেই কেষ্ট অনুপস্থিত থাকবেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে। কেননা খুব শীঘ্রই তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাবেন এমন আশা কেউ করেন না। তাই কেষ্ট’র অনুপস্থিতিতে জেলায় তৃণমূলের নেতারা কার নির্দেশ মেনে চলবেন, সব স্তরের নেতারা সেই ব্যক্তির নির্দেশ মানবেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সব থেকে বড় কথা ভোটটা করিয়ে নেওয়া হবে কীভাবে তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। দ্বিতীয়ত চাপ, বকটুই। অস্বীকার করার উপায় নেই ওই মর্মান্তিক গণহত্যার ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলার ৭টি ব্লকে সেই ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকেরই অনুমান। তৃতীয়ত, এসএসসি কাণ্ড যা জেলার গ্রামীণ এলাকার শিক্ষিত মানুষ ও যুব সম্প্রদায়কে নাড়া দিয়ে গিয়েছে। চতুর্থত, জেলার রাজনীতিতে বিজেপির রমরমা। ময়ূরেশ্বরে বরাবরই বিজেপির প্রভাব রয়েছে। এবার সেই প্রভাব দেখা যাচ্ছে রাজনগর, খয়রাশোল ও দুবরাজপুরের বুকেও। তাই জেলা পরিষদ জয় নিয়ে তৃণমূলের নেতাদের চিন্তা নেই। চিন্তা তা বিরোধীমুক্ত হিসাবে ধরে রাখতে পারা যাবে কিনা তা নিয়েই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct