এহসানুল হক, বসিরহাট, আপনজন: বিসর্জনের শেষ লগ্নে দুই দেশের বাঙালী মনকে একই সুত্রে বেঁধে দিয়ে গেলেন করুণাময়ী দেবী দুর্গা। ঠিক এমনই চিত্র ধরা পরল ইছামতি নদিতে। বিসর্জনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের বাঙালী মনে জেগেছিল মিলনের অভিন্সা।সিন্দুর খেলা ও মিষ্টি মুখের মহা দৃশ্য ফুটে উঠেছিল জলপথেই। টাকী ইছামতি নদীর তীরে অবস্থিত, এ নদীটির এক প্রান্তে ভারত এবং অপর প্রান্তে বাংলাদেশ। ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদী দুই দেশের সীমান্ত ঘেষে পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে বঙ্গপোসাগর অভিমুখে।ইছামতি নদীর তীরঘেষা ভারতের টাকী ,হাসনাবাদ,সোলাদানা,অন্যদিকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্রীপুর, সুশীলগাঁতী ও দেবহাটা পাশাপাশি তিনটি গ্রাম। ইছামতির এপারে ভারতের হাসনাবাদ রেল স্টেশন।কয়েক বছর আগে,হিন্দু ধর্মের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজার প্রতিমা বিষর্জন উপলক্ষে দু‘বাংলার মানুষ সীমান্তের বেড়াজাল মুছে দিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য একাকার হয়ে যেত। জার্তি-ধর্ম-বর্ণ ভুলে যেয়ে দিনভর এখানে জড়ো হত উভয় বাংলার লাখ লাখ মানুষ। ইছামতি নদী দখল করে রাখত বাংলাদেশ-ভারতের কয়েক হাজার রকমারি নৌকা আর ট্রলার।দুপুর থেকে শুরু হয়ে যেত দু‘বাংলার মানুষের মিলন উৎসব।তাই এবছর দশমীর দিনে টাকি ইছামতীর দূর্গা প্রতিমা বিসর্জনে দেখা গেল না দুই বাংলার মিলন উৎসব৷কয়েক বছর আগে ইছামতী দুই সীমান্তে দুই বাংলার মানুষ মিলে মিশে একাকার হত৷ হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমাতেন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেখতে৷এদিন দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জনের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল প্রশাসন৷উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের টাকিতে কয়েক বছর আগের বিসর্জন মতো আবেগ উচ্ছাস, এবছর দেখা মিলল না ঐতিহ্যের মেল বন্ধন৷ দেখা মেলেনি দুর্গা প্রতিমা নিয়ে ওপার বাংলার পতাকা লাগানো নৌকার যাতায়াত৷যে যার সীমান্ত দিয়ে চলেছিল তাদের নৌকা,মাঝখান দিয়ে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে কড়া নজরদারী,দেখে মনে হল, এ যেন নদী পথেও কাঁটা তারের বেড়া লাগানো হয়েছে৷ তাই মন খারাপ এপারের অরূন,সপ্তসী মত ওপারের খালেক বা রফিকুলদের৷ নতুন প্রজন্মের কাছে এপার বাংলা ওপার বাংলার বছরের মিলন উৎসব এখন ইতিহাস হয়ে দাড়িয়েছে৷দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্য বহন করে এসেছিল টাকির ইছামতি নদী৷ দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশ্যে নদীতে নামতো দু’বাংলার অগনীত নৌকা । নদীর মাঝেই বিজয়া দশমীর কোলাকুলি ও আলিঙ্গনে মিলিত হতেন এপার ও ওপার বাংলার মানুষ। টাকির ইছামতির বুকে দু’দেশের এই মিলন উত্সব দেখতে প্রতি বছর ছুটে আসেন অন্য রাজ্যের বহু পর্যটক৷ ভিড় করে,কাতারে কাতারে নদীর ধারে দাড়িয়ে থাকেন রাজ্যের বাসিন্দারাও৷এই দুই বাংলার বিসর্জন নিয়ে কিছুদিন আগে টাকিতে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহীনি ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়৷আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার চেয়ারম্যান,বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডেন্ট ও অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিক ও এই বাংলার বিএসএফ অর্থাৎ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১৫৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ন কোম্পানীর কমান্ডেন্টরা৷ এছাড়া উপস্থিত ছিলেন টাকি পৌরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় , ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক গাজী ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা।টাকি পৌরসভা ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক গাজী জানান, টাকি ইছামতির নদীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন আজ হবে,কিন্তু যে যার সীমান্তে প্রতিমা বিসর্জন দেবে৷ ইছামতির নদীর মাঝ বরাবর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও এদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী যৌথ নজরদারি চালাবে৷ পৌরসভার অনুমতি ছাড়া ইছামতি নদীতে নামাতে পারবে না কোনও নৌকা৷সেই মতোই এদিন দেখা গেল দুই ধার দিয়ে দুইদেশের নৌকা এবং মাঝ খান দিয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের টহল।এদিন এদিন মানুষকে মনোরঞ্জন দিতে টাকির ইছামতির নদীতে টাকী পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক গাজীর নেতৃত্বে একটি বাজি প্রদর্শনী হয়।উপস্থিত ছিলেন,বসিরহাটের দক্ষিণের বিধায়ক ডক্টর সপ্তসী ব্যানার্জি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct