নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট এর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তপন দত্ত খুনের মামলায় সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় কে বহাল রাখলো। এতে চাপ বাড়লো এই খুনে অভিযুক্তদের। এদিন তপন দত্ত হত্যা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের।ডিভিশন বেঞ্চ। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল।এদিন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, -' সিআইডি বা রাজ্য পুলিশ দিয়ে নয়, সিবিআই যেভাবে এই মামলার তদন্ত করছিল, সেভাবেই চালিয়ে যাবে'।আদালত সুত্রে প্রকাশ চলতি বছরে গত ৯ জুন তপন দত্ত হত্যা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্যসরকার ও অন্যতম অভিযুক্ত ষষ্ঠী গায়েন। রাজ্যের আবেদন ছিল, -' এই মামলার তদন্ত সিআইডি যেমন করছিল তেমন করুক, সিবিআইয়ের প্রয়োজন নেই'। তবে এদিন সেই আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। গত ২০১১ সালে খুন হয়েছিলেন হাওড়ার বালি এলাকায় তৃণমুল নেতা তথা পরিবেশ কর্মী তপন দত্ত। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় সহ ১৩ জনের। পরে ওই মামলার সিআইডির চার্জশিট থেকে ৮ জনের নাম বাদ গিয়েছিল। এর পরই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত।সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। হাইকোর্টের নির্দেশের পর সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিল অভিযুক্তরা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেছিল। সেই সময় রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা তুলে এনে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানায়। সেই আবেদনই খারিজ হয়ে গেল এদিন।বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এর সিঙ্গেল বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী,- 'সিআইডি আসল অপরাধীদের ধরতে ব্যর্থ, তাঁরা ওপর ওপর তদন্ত করেছে। তাই সাধারণ মানুষের আস্থা বজায় রাখতে তদন্তকারী সংস্থা বদলানো প্রয়োজন'।এদিন সিঙ্গেল বেঞ্চের পর্যবেক্ষণের পরিপেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে,- 'অভিযুক্ত ষষ্ঠী গায়েন এবং রাজ্য সরকারের তরফ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে তা খারিজ করা হল। এই মুহূর্তে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশে কোনওরকম হস্তক্ষেপের প্রয়োজন মনে করা হচ্ছে না। তাই আগের নির্দেশই বহাল থাকছে'। সিঙ্গেল বেঞ্চের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, 'অর্থ এবং রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে যাঁরা চেয়েছিলেন, তাঁদের মাঝে তপন দত্ত হয়তো বাধা সৃষ্টি করেছিলেন'। আর এই মর্মেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এর সিঙ্গেল বেঞ্চ এই মামলার তদন্তভার সিআইডি থেকে।সিবিআই কে দেয়।এদিন সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতির নির্দেশে কোনও ভুল নেই বলে জানিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। গত ৯ জুন তপন দত্ত খুনের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত ষষ্ঠী গায়েন এবং রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হল না। প্রসঙ্গত , গত ২০১১-র ৬ মে গুলি করে খুন করা হয়েছিল তপন দত্তকে। আর সেই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ ১৩ জন।নিম্ন আদালত, কলকাতা হাইকোর্ট এমনকি সুপ্রিম কোর্টেও উঠেছে এই মামলা। এই মামলার প্রথম পর্যায়ে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি জানায়, -' জলাজমি ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন বলেই খুন হতে হয়েছে তৃণমূল নেতাকে'। এরপর ২০১১-র ৩০ অগাস্ট সিআইডি মামলার চার্জশিট পেশ করে এবং সেখানে হাওড়ার একাধিক তৃণমূল নেতার নাম উঠে আসে। এরপর একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটও পেশ করে সিআইডি। সেখানে কোনও কারণ না দেখিয়ে ৯ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়। যাঁরা প্রত্যেকেই বাংলার শাসক দলের নেতা।গত ২০১৪-র ডিসেম্বরে তথ্য প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস হয়ে যান বাকি পাঁচ অভিযুক্ত। তবে ২০১৭-তে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করে দেয়। এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে অভিযুক্তরা নিয়ে পৌঁছালেও কোনও লাভ হয় না।কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল থাকে। নিহতের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত জানিয়েছেন, -'এই খুনের ঘটনায় হাওড়ার অরূপ রায়, কল্যাণ বসু, ষষ্ঠী গায়েন সহ একাধিক নেতা জড়িত'। এদিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চও সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশেই সম্মতি জানিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, -'সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই এই মুহূর্তে'।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct