সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: পরিবর্তনের পরে পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ ভাবে নজর দিয়েছিলেন রাজ্যের মহিলাদের উন্নতি ও ক্ষমতায়নের দিকে। সেই লক্ষ্য পূরণেই তিনি কড়া ভাবে রাজ্যে মেয়েদের স্কুলড্রপ ও বাল্যবিবাহের মতো ঘটনা আটকাতে একে চকে চালু করে কন্যাশ্রী প্রকল্প, কন্যাশ্রী ক্লাব এবং সবুজসাথী প্রকল্প। তাঁর সেই প্রেচেষ্টা যা অনেকটাই সফল হয়েছে তা বাংলার বিরোধী শক্তিগুলি না মানলেও কেন্দ্র সরকারের একাধিক রিপোর্টে যেমন তা বারে বারে উঠে এসেছে তেমনি বিদেশের নানা সমীক্ষার রিপোর্টেও তা স্বীকার করা হয়েছে। এই পথ ধরেই মুখ্যমন্ত্রী এর পরে চালু করেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, জয় জোহর, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা যা বাংলার মহিলাদের জীবনে চরম অনিশ্চয়তাকে অনেকটাই দূর করতে সক্ষম হয়েছে। এবার নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যের ১২ লক্ষ পড়ুয়াকে সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল তুলে দিতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মা-মাটি-মানুষের সরকার।
কয়েক মাস আগেই রাজ্যের সব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলিকে হিসাব পাঠাতে বলা হয়েছিল যে ঠিক কত পড়ুয়াকে সাইকেল দিতে হবে। সেই হিসাব এসে পৌঁছানোর পরেই দেখা যাচ্ছে ১২ লক্ষ পড়ুয়াকে সাইকেল দিতে হবে। এবারে এই সাইকেল প্রদানের কাজটি দেখভাল করছে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। ইতিমধ্যেই সেই দফতর থেকে সাইকেলের সংখ্যা চূড়ান্ত করে জেলা জেলা থেকে সংগ্রহ করে তা নবান্নে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর সাইকেল উৎপাদক সংস্থাকে টেন্ডারের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হবে। ওয়ার্ক অর্ডারের পর বিপুল সংখ্যক সাইকেল তৈরি করতে ভালোই সময় লাগবে। তারপর শুরু হবে স্কুলে স্কুলে সাইকেল বিলির পালা। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের আধিকারিকরা মনে করছেন, মাস দু’য়েক সময় অন্তত লাগবেই। কোন জেলায় কত সাইকেল প্রয়োজন, তা ঠিক করতে এবারে স্কুল ধরে ধরে নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলেছে এই কর্মকাণ্ড। এর আগে প্রতিবারই দেখা গিয়েছে, বাড়তি সাইকেল পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এবার যাতে তেমন পরিস্থিতি না হয়, তার জন্য প্রথম থেকেই তৎপর অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে পড়ুয়া বা প্রকল্পের উপভোক্তাদের নামের যে তালিকা রয়েছে, স্কুলগুলি তার সঙ্গে মিলিয়ে ঝাড়াইবাছাই করে সংশোধিত তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছে। ফলে বাস্তবে কত সংখ্যক পড়ুয়া সাইকেল পাবে, তার একটা স্পষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে। যেসব ছাত্রছাত্রীর বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার, তাদের প্রভূত সুবিধা হয় সাইকেল পেলে। স্কুলে আসতে অনেকের কাছে সাইকেলই প্রধান ভরসা। আবার অনেক পড়ুয়া রয়েছে, যাদের সাইকেল কেনার সামর্থ্যই নেই। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই ২৪ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদ—এই তিন জেলায় ১ লক্ষের বেশি সাইকেল দেওয়া হবে। ২০১৫-১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের আওতায় এখনও পর্যন্ত ১ কোটির বেশি সাইকেল বিলি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সাইকেল পেয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পড়ুয়ারা। তারপরই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সপ্তম দফায় সব থেকে কম সাইকেল বিলি হয়েছে। কারণ কোভিড ও লকডাউনের জেরে স্কুল বন্ধ থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি অনেক জেলায়। এবার ১২ লক্ষ্ পড়ুয়ার হাতে আর মাত্র মাস ২-৩ এর মধ্যেও সাইকেল তুলে দিতে চলেছে মমতার সরকার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct