দেশে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাতিল ইলেকট্রনিক যন্ত্র থেকে সৃষ্ট বর্জ্য বা ই-বর্জ্যের পরিমাণ। এ থেকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ। এ বিপদ থেকে বাঁচার উপায় হল- ই-বর্জ্যরে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার। কিন্তু দেশে এ পর্যস্ত ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোনো নীতিমালা গ্রহণ করা হয়নি। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বাড়ছে। দেশে গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে বহু গুণ। কিন্তু এ উৎকর্ষতা অভিশাপ বয়ে আনছে ই-বর্জ্য সৃষ্টি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারের অভাবে। প্রতি বছর দেশে প্রায় যে লক্ষ লক্ষ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে তা কেথায বিনষ্ট করা হবে, কোথায় রাখা হবে তা নিযে চিন্তা পরিবেশবিদদের। এ নিয়ে লিখেছেন মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
দেশে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাতিল ইলেকট্রনিক যন্ত্র থেকে সৃষ্ট বর্জ্য বা ই-বর্জ্যের পরিমাণ। এ থেকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ। এ বিপদ থেকে বাঁচার উপায় হল- ই-বর্জ্যরে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার। কিন্তু দেশে এ পর্যস্ত ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোনো নীতিমালা গ্রহণ করা হয়নি। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বাড়ছে। দেশে গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে বহু গুণ। কিন্তু এ উৎকর্ষতা অভিশাপ বয়ে আনছে ই-বর্জ্য সৃষ্টি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারের অভাবে। প্রতি বছর দেশে প্রায় যে লক্ষ লক্ষ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে তা কেথায বিনষ্ট করা হবে, কোথায় রাখা হবে তা নিযে চিন্তা পরিবেশবিদদের। ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যের পরিমাণ কতগুণ যে বৃদ্ধি পেয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সেবাবে হিসেবও নেই। কিছু বেসরকারি সংস্তা এই সমীক্ষা চালারেও সরকারি তরফে সমীক্ষা করে প্রকৃত বিপদ অনুসন্ধান করার প্রচেষ্টা এখনও তেমন দেখা যাচ্ছে না।
প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হচ্ছে ডাস্টবিনে। ফলে সেগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তাই ই-বর্জ্যকে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে দেখা হয়। অটিজম ও মানসিক বিকাশ না হওয়ার একটি কারণও এটি। ই-বর্জ্য বাচ্চাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলছে। মায়েদের স্তনের ক্ষতি হচ্ছে। সিসা ও পারদের মতো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ খোলা জায়গায় ফেলে রাখার দরুন ত্বকের বিভিন্ন রোগ এবং পরবর্তী পর্যায়ে কিডনি, ফুসফুস ও ব্রেনের মারাত্মক ক্ষতি করে এসব উপাদান। উন্মুক্ত জায়গায় ই-বর্জ্য পোড়ানো কিংবা অনিরাপদ ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। শহর কলকাতার কথাই ধরা যেতে পারে। ধর্মতলার চাঁদনি চকে প্রকাশ্যে পুরনো ইলেকট্রনিক দ্রব্য পসার জমিয়ে রেখেছে। যেগুলো মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য সেগুলি ফেরিওয়ালার হাত ধরে জড়ো হয় বাজারে। আবার তা বিভিন্ন নির্দিষ্ট জায়গায় চলে যায়। সেখানে ধাতব জিনিস নিষ্কাশন করলেও অবশিষ্ট জিনিসগুলি থেকে যে বিকিরণ তার প্রভাব পড়ছে ওই্ সব ব্যবসায যুক্ত মানুষদের। একটি গবেষণা বলছে, মোবাইল টাওয়ার থেকে শুরু করে শিশুদের খেলনা, দেশে ই-বর্জ্যরে উৎস কমপক্ষে ১৫টি। এসব উৎস বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়ায় স্বর্ণ, রূপা, প্যালাডিয়ামসহ নানা ধরনের মূল্যবান ধাতু পাওয়া সম্ভব। এমনকি মিলতে পারে অতিমূল্যবান প্লাটিনামও। ফলে ই-বর্জ্যে রয়েছে বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা। প্রতিবছর দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ মোবাইল ফোন বিক্রি হচ্ছে। এক বছর পরপর মানুষ মোবাইল পরিবর্তন করে। এক্ষেত্রে ই-বর্জ্য তৈরি হয়। এগুলো বেশি দামে কিনলে গ্রাহকেরাও বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাবে।
এজন্য প্রয়োজন, দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো দিয়ে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে নির্দিষ্ট স্পটে ই-বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করা হবে। এজন্য বিটিআরসিসহ সরকারি সংস্থাগুলোর যেমন উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, একইভাবে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ বেসরকারি ব্যবসায়িক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোরও এগিয়ে আসা উচিত। ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারে নিরাপদ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না হলে শুধু পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা না, এতে করে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক দিক থেকেও ক্ষতি হচ্ছে। যেমন একটি স্মার্টফোন তৈরিতেই পিরিয়ডিক টেবিলের অর্ধেকের বেশি পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে অনেক ধাতু আছে বিরল, একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। নিয়ম না মেনে চললে এই ধাতুগুলোর পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না। অর্ধযুগ আগেই পরিবেশ নিয়ে যেসব সংস্থা গবেষণা করে, তারা ই-বর্জ্য যথাযথাভাবে পুনর্ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়ে ও কিছু সুপারিশ নিয়ে একটি নীতিমালার করার প্রস্তাব দিয়েছিল সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপারিশের মধ্যে ছিল, যেকোনো পণ্য ই-বর্জ্যে পরিণত হওয়ার পর তার দায়িত্ব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে যেমন নিতে হবে, তেমনি কোনো পণ্য দ্বারা ক্রেতা বা পরিবেশ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এর দায়িত্ব নেবে। অথচ এখন পর্যন্ত এ নীতিমালা গ্রহণ করা হয়নি। অবিলম্বে এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা না গেলে সামনের দিনে বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। বড় পরিসরে ই-বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের উদ্যোগ নেয়া গেলে সংকট যেমন কমবে তেমনি বাড়বে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct