৯৩ বছর বয়সেও লিখে চলেছেন উম্মে কুলসুম
সাইফুল লস্কর
স্বাধীনতা পরবর্তীতে পশ্চিমবাংলা সংখ্যালঘু মহিলা লেখকদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিশেষ করে খুব মুসলিম মহিলা মুসলিম সমাজ কিংবা ইসলামি শিক্ষার উপর লেখালেখি করেছেন। তবে, সেই সব লেখিকাদের মধ্যে স্তান করে নিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা উম্মে কুলসুম। তবে তিনি লেখা শুরু করেন আশির দশক থেকে। তবে, ৯৩ বছর বয়সি উম্মে কুলসুম কিন্তু এখনও তাঁর ক্ষুরধার লেখনি বজায় রেখে চলেছেন। লাঠিতে ভর করে চলাচল করলেও তাঁর লেখনি কিন্তু এখনও অব্যাহত। আর সেই লেখার উদ্দেশ্য মহিলাদের মধ্যে যাদের ইসলাম সম্পর্কে কোনও জ্ঞান বা ধারণা সেই তাদের মধ্যে সম্যক ধারণা তৈরি করা। ইসলামি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করা। ১৯৮৪ সাল থেকে তাঁর কলম শুরু করার পর তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হল ‘নারী ও দ্বীন দুনিয়া’, ‘নাফিয়াতুল মুসলিমীন’, ‘বিশ্বজনীন মিলনক্ষেত্র হজ্জ’ ও ‘মুসলিম নারীদের মসজিদে আসা কি ফিৎনা।’এছাড়াও তাঁর অনেক তার নানা প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়ছে। সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য রোকেয়া পুরস্কার পেয়েছেন ২০০২ সালে। ২০০৪ সালে টেলিভিশন কলকাতা ডি ডি বাংলা দূরদর্শনে ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে সরাসরি সম্প্রচার অর্থাৎ লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ২০০৫ সালে শিশু কিশোর মেলায় তাঁকে স্মারক দিয়ে সস্মানিত করা হয়। বয়সের বারে দুহাত লাঠিতে ভর করে চললেও ৯৩ বছর বয়সি হাজি উম্মে কুলসুম এখনও তরণ লেখিকাদের কাছে অনুপ্রেরণা। বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে তিনি বারুইপুরের খোদারবাজারের বাসিন্দা। তিনি তিনপুত্র ও কন্যা সন্তানের জননী হলেও এলাকায় তিনি ‘হাজি দাদি’ বলে পরিচিত।
অশীতিপর লেখিকা উম্মে কুলসুমের জন্ম ১৯২৯ সালে, জয়নগর থানা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম তিলপিতে। তিলপির প্রত্যন্ত গ্রামে ১৯২৯ সালে জন্ম নেন। তাঁর বাবার নাম কামালউদ্দিন শেখ ও মাতার নাম জোহরা বিবি। বাবা ছিলেন একজন স্থানীয় জামে মসজিদের মাতওয়াল্লী ও আদর্শবান সমাজসেবী। তিনি আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতো চলাফেরা করেই বড় হয়েছেন। স্বাধীনতার আগেই তার শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি। স্থানীয় শিক্ষা কেন্দ্র তিলপী কামলিয়া জুনিয়র মাদ্রাসাতে থেকেই উম্মে কুলসুমের প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু। যে সময় নারীরা শিক্ষায় অনেত পিছিয়ে ছিল সেই সময় তিনি ছিলেন অন্যতম শিক্ষানুরাগী। ১৯৪২ সালে জুনিয়ার মাদ্রাসা থেকেই পাস করেন। ষোলো বছর বয়সে বারুইপুর খোদারবাজার গ্রামের মহঃ নূর হাসান মিস্ত্রির সঙ্গে উম্মে কুলসুম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সংসারের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান চর্চাতে নিমগ্ন থাকতে কসুর করতেন না। ১৯৭৮ সাল থেকে মহিলাদের ইসলামিক জ্ঞানের শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। সমাজকে সুন্দর গড়ার লক্ষ্যে ইসলামিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেন গ্রামের মহিলাদের। ১৯৮২ সালে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি হজ করতে সৌদি আরবের মক্কায় পাড়ি দেন। হজ পালন করে দেশে ফেরার পর তিনি মূলত ইসলামি শিক্ষা নিয়ে মহিলাদের মধ্যে জাগরণ ঘটাতে লেখায় মনোনিবেশ করেন। উম্মে কুলসুম স্বামী হারা হয়ে পড়েন ১৯৯৭ সালে। তার পর থেকে আরও মনোনিবেশ করে লেখালেখিতে। সেই লেখনি স্রোত এখনও অব্যাহত তার ৯৩ বছর বয়সেও। মুসলিম মহিলাদের কাছে তাই অনুপ্রেরণার এখন অন্যতম নাম হয়ে উঠেছেন ‘হাজি দিাদি’ উম্মে কুলসুম।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct