ক্রসেডের আরও এক মহানায়কনুর আল্ দিন ‘ফকির বাদশা’
ক্রুসেডের আর একটি মহৎ চরিত্র নুর আল্ দিন, তার অনাড়ম্বর জীবন ও ইসলামি নিষ্ঠার জন্য তাকে বলা হত ফকির বাদশা। ক্রুসেডের বিখ্যাত চরিত্রগুলির মধ্যে তিনি একজন। নুর আল্ দিন আবুল কাসিম মাহমুদ ইবনে ইমাদউদ্দিন জানগি ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত জানগি রাজবংশীয় শাসক। ১১৪৬ থেকে ১১৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের সিরিয়া প্রদেশ শাসন করেছেন। তিনি ১১৪৬ থেকে ১১৭৪ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। তার পিতা ইমাদুদ্দিন জানগি দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ছিলেন। তাঁকেই ‘আতাবেগ’ বলা হয়েছে। তাঁরই মৃত্যুর পর নুর আল দিনের কাহিনির শুরু। ইতিহাসের পাতা থেকে তা তুলে ধরেছেন আব্দুস শুকুর।
ক্রুসেডের আর একটি মহৎ চরিত্র নুর আল্ দিন। তার অনাড়ম্বর জীবন ও ইসলামি নিষ্ঠার জন্য তাকে বলা হত ফকির বাদশা। ক্রুসেডের বিখ্যাত চরিত্রগুলির মধ্যে তিনি একজন। নুর আল্ দিন আবুল কাসিম মাহমুদ ইবনে ইমাদউদ্দিন জানগি ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত জানগি রাজবংশীয় শাসক। ১১৪৬ থেকে ১১৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের সিরিয়া প্রদেশ শাসন করেছেন। তিনি ১১৪৬ থেকে ১১৭৪ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। তার পিতা ইমাদুদ্দিন জানগি দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ছিলেন। তাঁকেই ‘আতাবেগ’ বলা হয়েছে। তাঁরই মৃত্যুর পর নুর আল দিনের কাহিনীর শুরু। নুর আল্ দিন জানগি সম্পর্কে ইতিহাসবিদ ইবন আল আতির লিখেছেন, নুর আল দিনের মত ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ খুব কমই দেখেছি। তবে আরব ঐতিহাসিক আমিন মালুফ-এর গ্রন্থ ‘দ্য ক্রুসেডস থ্রু আরব আইস’-এ। সেই গ্রন্থ ছাড়াও আরও বহু গ্রন্থে নুর আল্ দিন জানগিকে আর এক মহান ক্রসেড নায়ক সালাহউদ্দিন ইউসুফ আইয়ুবির সঙ্গে তুলনা করা হয়। দ্বিতীয় ক্রসেডের এক মহানায়ক হলেন নুর আল্ দিন জানগি। নুর আল্ দিন ছিলেন একজন মহান শাসক যিনি তার ন্যায়বিচার ও নম্রতাবোধের জন্যও পরিচিত ছিলেন। ইমাদুদ্দিন জানগি ইন্তেকালের পর তার সাম্রাজ্য দুইভাগে ভাগ হয় এক ভাগ পরিচালনা করেন নুর আল্ দিন জানগি নিজে অন্যভাগ পরিচালানা করতো তার ভাই সাইফুদ্দিন। সাইফুদ্দিন ইন্তেকাল করলে সমগ্র সম্রাজ্যের ভার তার কাঁধে অর্পিত হয়। ইসলামি বিশ্বের সকল দায়িত্ব এই বাঘের বাচ্ছা সূচারু এবং উত্তম রূপে পালন করেন। মোট কথা ইমাদুদ্দিন জানগির পর নুর আল্ দিন জানগি্র মুসলিম বিশ্বে প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্ব হিসেবে উত্থান হয়। তার পুরো নাম হল নুর আল্ দিন (নূর আল-দিন) আবু আল কাশিম মাহমুদ ইবনে ইমাদুদ্দিন (ইমাদ আদ-দিন) বিন আতাবেক কাসিমূদ্দৌলাহ আবী সাইয়েদ জেঙ্গী (জাঙ্কি, জেনগী, জানগি,জাঙ্গী, জঙ্গি) আল আমির আল কবির আক সুকুর আত তুর্কী । তাকে জেনগী ও ইবনে আল কাসীম নামেও ডাকা হতো। নুর আল্ দিন জানগি ১১ ফ্রেব্রুয়ারি ১১১৭ ঈসায়ী ৫১১হিজরি সালের শাওয়াল মাসে জম্মগ্রহণ করেন। তার বংশ তুর্কি সাবোয়া নামক একটি উপজাতীয় বংশের সাথে সম্পর্কিত। কিশোর থেকে নুর আল্ দিন জানগি তার বাবা ইমাদুদ্দিন জানগির কাছে থেকে উত্তম শিক্ষা নিয়ে বড় হন। বাবার কাছে উত্তম শিক্ষা লাভ করার মাধ্যমে নুর আল্ দিন জানগি পন্ডিত এবং মুজাহিদ হিসেবে বেড়ে উঠেন তিনি কুরআন, তাফসীর, হাদীস, আইন, ইতিহাস,বিভিন্ন বিষয়ে ফরাসি এবং গ্রীক ভাষায় পন্ডিত্য অর্জন করেন । তিনি একজন ভালো সৈন্যও ছিলেন তিনি একজন ভালো তীরন্দাজ এবং একজন ভালো চৌগান খেলোওয়ার ও ছিলেন। তিনি সমর আমীরদের কাছ থেকে যৌদ্ধের কৌশল রপ্ত করেছেন যেমন আসাদ আল-দীন শিরকুহ এবং ইবনে আল দায়েরদের কাছে থাকতেন তিনি। এবং তিনি সব সময় তার বাবার পাশা পাশি থাকতেন তার বাবা যেই অভিজান করতেন তিনি তাতে যোগ দিয়ে নেতৃত্ব দিতেন এতে তার নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি পায় । তার বাবা যখন আর রাহা জয় করেছিলেন তিনি তার সাথেই ছিলেন এবং সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। নূরউদ্দিন জানগি তার সামরিক দক্ষতা নিয়ে শিঘ্রই সামনে এসেছিলেন। ১১ সেপ্টম্বর ১১৪৬ সালে যখন ইমাদুদ্দিন জানগিকে হত্যা করা হয় তখন তার সম্রাজ্য দুটি ভাগে ভাগ হয় যায়। মসুলের দায়িত্ব পায় নুর আল্ দিন জানগির বড় ভাই সাইফুদ্দিন জানগি আলেপ্পোর দায়িত্ব পান নুর আল্ দিন জানগি নিজে। সাইফুদ্দিনও ছিলেন একজন সত্যনিষ্ঠ শাসক তিনি কিছুদিন তিনি কিছুদিন সুলতান মাউদের প্রসাদে ছিলেন ইমাদুদ্দিন জানগি ইন্তেকাল করলে তিনি আবার মসুলে ফিরে আসেন নুর আল্ দিন জানগি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর প্রাচ্যের দিকে মনোনিবেস করেন এবং ক্রুসেডরদের বিরুদ্ধে তার বাবার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন।
জোসেলিন দ্বিতীয় ইমাদুদ্দিন জানগির মৃত্যুর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না তিনি আর রাহা দখল করার জন্য আর রাহাতে থাকা আর্মেনীয় খ্রীস্টানদের সাথে চুক্তি করে আর রাহা আক্রমণ করেন । ইমাদুদ্দিন জানগি এই খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুত আর-রাহা পৌঁচে খ্রীষ্টানদের পরাজিত করে আর-রাহা বা এডেসা শহর পূনরায় নিয়ন্ত্রণে নেন। আর-রাহার খ্রীষ্টানরা নুর আল্ দিন জানগির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার কারণে নুর আল্ দিন জানগি শহর থেকে সকল খ্রীষ্টানদের বিতাড়িত করেন মৃত্যুদন্ডের বদলে এইটাই ছিল তাদের জন্য নম্র শাস্তি। নুর আল্ দিন জানগির স্বপ্ন ছিল তার বাবার মত মুসলিমদের হারানো শহর গুলো বিজয় করা। তিনি মুসলিম ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন কিন্তু এই ঐক্যফ্রন্টের সবছেয়ে বড় বাধা ছিলসিরিয়ার বুরি বংশ। তারা ঐক্যফ্রন্টের অধীনে না থেকে নিজেদের স্বাধীন হিসেবে ঘোষনা করে। ১১৪৭ সালে বুরি বংশ নুর আল্ দিন জানগির সাথে চুক্তি করে নিজেদের স্বাধীন রাখার জন্য দামেস্কের বদলে নুর আল্ দিন জানগিকে অন্য অঞ্চল দেওয়া হয়। চুক্তির অংশ হিসেবে নুর আল্ দিন জানগি উনুরের মেয়েকে বিয়ে করেন। কিন্তু বুরি রাজবংশের উনুরের এর নুর আল্ দিন প্রতি সন্দেহ ছিলতাই তিনি ক্রুসেডরদের সাথে তার সক্ষতা বৃদ্ধি করতে থাকেন। নুর আল্ দিন জানগি দামেস্ক থেকে বেরিয়ে আর-রাহা ও হামার মধ্য বর্তী অরণ্টেস নদীর পূর্ব পাশের দূর্গ গুলো এক এক করে বিজয় করতে থাকেন দূর্গগুলো ছিলআরতাহ, কাফার লাতা, বাসারফুট, বালাত এবং হাব এই সবগুলোই ছিলফ্রঙ্কদের অধীনে। এভাবে ইমাদুদ্দিন জানগির মত নুর আল্ দিন জানগি তার শক্তিমত্তার জানান দেন এবং ক্রুসেডরদের অন্যতম ভয়ের কারণ হয়ে উঠেন। জোসেলিন দ্বিতীয় আর-রাহায় ব্যর্থ অবরোধ করার পর নুর আল্ দিন জানগির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে এন্টিয়কের রাজপুত্রের অপেক্ষা করছিলেন। এদিকে ক্রুসেড বাহিনী টানা পরাজয়ের পর আনাতোলিয়ায় ভুগতে শুরু করে। কিন্তু এরপরেও তারা সিদ্ধান্ত নেয় দ্বিতীয় ক্রুসেড এর। তারা দামেস্ক আক্রমণ করে বসে দামেস্ক ছিল বুরি রাজবংশের মূল কেন্দ্র। দামেস্কের গভর্নর উনুর কোন উপায় না পেয়ে নুর আল্ দিন জানগির কাছে সাহায্য চান। নুর আল্ দিন জানগি দ্রুত দামেস্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নুর আল্ দিন জানগি আর উনুর একসাথে আক্রমণে ক্রুসেডররা অবরোধের চতুর্থ দিনের মাথায় পরাজয় বরণ করে এই অবরোধ ছিল১৪৪৮ সালের ২৪শে জুলাই থেকে ২৮শে জুলাই পর্যন্ত। দ্বিতীয় ক্রুসেডে ক্রুসেডদের ব্যর্থতার ফলে ক্রুসেড অঞ্চলগুলোতে নুর আল্ দিন জানগি আধিপত্য আরো বেড়ে যায়।
ক্রুসেড শেষ হওয়ার পর নুর আল্ দিন জানগি এন্টিওকের প্রিন্সিপালেটির বিরুদ্ধে যুদ্ধা চালিয়ে যান। এই যুদ্ধে ২৯ জুন ১৯৪৯ সালে ইনাবের নিকট নুর আল্ দিন জানগি এন্টিওকের দুটি সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেন এবং রাজপুত্র রেইমন্ড সহ মারাশের সিনিয়র রেইনাল্ড এবং হাসাসিনের নেতা (এসেসিন ক্রিড গেমে যাদের দেখানো এরাই হাসাসিন) আলি ইবেন ওয়াফাকে হত্যা করা হয় । এই বিজয় সমগ্র মুসলিম জগতে নুর আল্ দিন জিকির প্রতিপত্তি প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছিল]। ১৯৪৯ সালে নুর আল্ দিন জানগির বড় ভাই সাইফুদ্দিন গাজি ইন্তেকাল করলে মুসুল এর নতুন শাসক নিযুক্ত হয় নুর আল্ দিন জানগির ছোট ভাই কুতুবুদ্দিন জানগি তিনিও ছিলেন অত্যান্ত সৎ এবং কোমল হৃদয়ের। কুতুবুদ্দিন জানগি মসুলের শাসক নিযুক্ত হওয়ার পর নুর আল্ দিন জানগি কে সম্পূর্ণ জেঙ্গি সম্রজ্যের সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি ক্ষমতায় আসার তিন বছরের মধ্যে তার অন্যতম শন্ত্রুকে নির্মূল করার পর ক্রুসেডরদের অন্যতম দুটি দূর্গ আফমিয়া ও হারিম এর প্রতি তার লক্ষ্য স্থির করেন। নুর আল্ দিন জানগি সেইন্ট সাইমন পর্যন্ত জয় করতে সম্ভব হন কিন্তু সৈন্য স্বল্পতার কারণে এন্টিয়ক অবরোধ করতে পারেন নি তিনি প্যাট্রিয়াক আমেরির সাথে স্বল্প মেয়াদী যুদ্ধ বিরতি চুক্তি করে আফমিয়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। ১১৪৯ সালের ২৬ জুলাই নুর আল্ দিন জানগি প্রিন্সপালিটি অফ এন্টিওকের শেষ দূর্গ আফমিয়া জয় করেন। ১১৫০সালে নুর আল্ দিন জানগি কাউন্ট দ্বিতীয় জোসেলিন কে ধরে ফেলেন এবং তাকে বন্দি করে কারাগারে প্রেরন করেন। কাউন্ট ব্রিটিরেস কাউন্ট দের ছেড়ে যাওয়া জমি গুলো বিক্রি করতে বাধ্য হন কারণ সে নুর আল্ দিন জানগি এবং সুলতান মাসউদ এর থেকে এই জমি রক্ষা করতে পারবে না ভয়ে যদিও পরে তুর্কিরা সেগুলো দখল করে নেয়। ১১৫১ সালে নুর আল্ দিন জানগি রাওয়ান্দান এবং তেল-বাশিরকে এবং সুলতান মাসউদ আইন্তাব এবং ডলিচ আর্টুকুইডসের বে তিমুরতাশ সিমসাত এবং বিরজিক বিজয় করে এডেসা থেকে কাউন্টি ক্রুসেডরদের পুরোপুরি উৎখাত করা হয়।
নুর আল্ দিন জানগি সবসময় স্বপ্ন মুসলিম দের ঐক্যফ্রন্ট করা যাতে ক্রুসেডররা মুসলিমদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে না পারে কিন্তু সিরিয়ার বুরি বংশ যেন গলায় মাছের কাটার মত আটকে ছিল। বুরি বংশ ক্রুসেডর সাথে সখ্যতা করে চলতো নুর আল্ দিন জানগি মুসলিম ভাইদের প্রান ঝরাতে চান নি তাই তিনি কৌশল অভলম্ভন করেন। নুর আল্ দিন জানগি শহরে সরাসরি আক্রমণের পরিবর্তে বুরি রাজবংশের প্রতি কূটনৈতিক ও সামরিক চাপ প্রয়োগ করা শুরু করেন। চাপ বাড়িয়ে কোন লাভ হচ্ছিলনা কারণ বুরি বংশ ফ্রাঙ্কদের সাথে মিলে দামেস্ককে ঐক্যফ্রন্ট থেকে দূরে রাখলেন। তাই নুর আল্ দিন জানগি অন্য পন্থা অভলম্বন করতে বাধ্য হন তিনি শহরের গম সরবরাহ বন্ধ করে দেন এতে বুরি বংশের মূল কেন্দ্র দামেস্কে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। অনেকের মতে বুরি সম্রাজ্য তার বিরুদ্ধে হত্যা ষড়যন্ত্র করতে থাকে এতে দামেস্কের জনগন বুরি রাজবংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু। প্রায় এক সপ্তাহ এই কার্যক্রম চলার পর বুরি রাজবংশ নুর আল্ দিন জানগি সাথে মিলিত হবার সিন্ধান্ত নেয়। নুর আল্ দিন জানগি দামেস্কের ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দামেস্কের আবাক কে নুর আল্ দিন জানগি বিরুদ্ধে হত্যার প্রচেষ্টার দায়ে দামেস্ক থেকে বরখাস্ত করা হয়। নুর আল্ দিন জানগি দৃড় সংকল্প আর প্রচেষ্টায় তিনি পুরো সিরিয়াকে একত্রিত করতে সম্ভব হন এখন সমস্ত ক্রুসেডর রাজ্যের পূর্ব সিমান্ত একক মুসলিম নেতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিলযা খ্রিষ্টান জগতের জন্য ছিলঅনেক বড় দুঃসংবাদ। দামেস্কের ক্ষমতা গ্রহণের পরেই নুর আল্ দিন জানগি দামেস্কে ও জেরুজালেমের মধ্যে পূর্বের যুদ্ধবিরতি চুক্তি একবছর বৃদ্ধি করেন। এর কিছুদিন পরেই নুর আল্ দিন জানগি মুসলিম শহর বালবাক বিজয় করেন। কিছু দিন পরে সেলজুক সুলতান মাসউদ ইন্তেকাল করলে তার ছেলেদের মধ্যে দ্বন্ধ সৃষ্টি হয় এবং এর মধ্যে ডেনিশমেনেডিড রাও যুক্ত হয়ে যায় নুর আল্ দিন জানগি ডেনিশমেনেডিড এর রক্ষক হয়ে ক্রুসেডরদের হুমকি স্বরুপ নিরপেক্ষ অবস্থান করছিলেন তিনি সবসময় তৎফর ছিলেন ক্রুসেডররা যেন এই দ্বন্দ্ব থেকে ফায়দা তুলেতে না পারে। কিছু দিনপর সুলতান মাসউদ পুত্র কিলিজ আরসালান দ্বিতীয় ক্ষমতায় লাভ করেন। ক্ষমতা লাভ করার পর তিনি কিলিজ আরসালান দ্বিতীয় নিজেকে আর্মেনীয় লর্ড এবং ক্রুসেডর শাসকদের সাথে জোট করেন। নিজের স্ত্রীর ভাই এর এহেন কর্মকান্ড দেখে নুর আল্ দিন জানগি সেলজুক এবং জেরুজালেম এর মধ্যবর্তি আইতাব ও রাবান দখল করে কেন। কিলিজ আরসালান দিত্বীয় এবং ক্রুসেডরা মিলিত হয়ে নুর আল্ দিন জানগি কাছে সেই জমি ফিরত চান কিন্তু কিলিজ আরসালান ক্রুসেডরদের সাথে মৈত্রী করার অপরাধে তিনি তা ফিরত দিতে অস্বীকার করেন। এদিকে জেরুজালেমের ক্রুসেডররা যুদ্ধবিরতী চুক্তি লঙ্গন করে আলেপ্পোর আশে পাশে লুন্ঠন ও ক্ষয়ক্ষতি করা শুরু করে। নুর আল্ দিন জানগি তাদের দমানোর উদ্ধেশ্যে বের হন এবং তাদের পরাজিত করেন। জেরুজালেমের ক্রুসেডররা পরাজিত হয়ে যুদ্ধ বিরতী চুক্তি নবায়ন করে নভেম্বরের ১৯৫৬ সালে। ১১৫৭ সালে জেরুজালেমের রাজা বাল্ডউন বানিয়াসের নিকট চরাঞ্চলে বিশাল এক পশুপালক বাহিনীকে আক্রমণ করে চুক্তি সমাপ্ত করেন। বাল্ডউনের এমন কর্মকান্ড দেখে নুর আল্ দিন জানগি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তার সেনাপতিরা প্রতিশোধ মূলক কয়েকটি আক্রমণ করে। এর পর নুর আল্ দিন জানগি নিজেই তার বাহিনী নিয়ে বনিয়াস কে অবরোধ করেন। তবে যখন তিনি জানতে পারেন জেরুজালেমের রাজা বনিয়াস রক্ষা করতে করতে বনিয়াসে আসছেন তখন তিনি নিম্ন অঞ্চলে আগুন লাগিয়ে পিছু হটেন। পরে টিবিয়াস লেকের উত্তরে এসে জেরুজালেম রাজার বাহিনীর উপর আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করেন। এরপরে তিনি আবার বনিয়াসে ফিরে আসেন এবং আবার অবরোধ করেন। কিন্তু সুলতান কিলিজ আরসালান দ্বিতীয় বিশাল বাহিনী নিয়ে এন্টওক অবরোধ করার জন্য আসছেন এই খবর শুনার পর তিনি তার বাহিনী নিয়ে আলেপ্পোতে ফিরে আসেন। আরেকটি বিষয় যা নুর আল্ দিন জানগিকে ক্রুসেডরদের বিরুদ্ধে গুরতর আক্রমণ থেকে বিরত রেখেছিল তা ছিল ১১৫৬/৫৭ সালে সিরিয়ায় বিশাল ভূমিকম্প এর কিছুদিন আগেও বসন্তে সিরিয়া অনেক বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১১৫৭ গ্রীস্মে, সিরিয়া এখনো ভূমিকম্প দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত ছিলএই ভূমিকম্পের ফলে হিমস,আলেপ্পো এবং আফিমিয়া ব্যাপক ক্ষতি ও প্রাণহানি তবু এটি বিশেষত হামার জন্য বিপর্যয় ছিল।
নুর আল্ দিন জানগি ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ দূর্গগুলি দ্রুত মেরামত করতে থাকলেন একই সময়ে তিনি তার সেনাবাহিনী সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকলেনে এতে তিনি ফ্রাঙ্কদের সম্ভাব্য আক্রমন রুখে দিতে সফল হন। কিছুদিনের মধ্যে ক্রুসেডররা নুর আল্ দিন জানগি বিরুদ্ধে বাইজাইন্টাইন সম্রাজ্যের সাথে জোট করলো। ম্যানুয়েলকে সাথে নিয়ে তারা বিশাল এক সেনাবাহিনী নিয়ে বের হয় তারা প্রথমে আর্মেনীয় দেশগুলোকে টার্গেট করলো। ম্যানুয়েল প্রথমে সিলিশিয়ান শহর দখল করেন পরে এন্টিওকের যুবরাজ চর্টিলেনের রেইনল্ড কে শাস্তি প্রধান করেন যুবরাজকে শস্তি দেওয়ার কারন হলো সে আর্মেনীয়দের সাথে সাইপ্রাস দ্বীপে আক্রমন করে লুঠপাট করতো সেই দ্বীপ ছিল বাইজান্টাইন রাজা ম্যানুয়েলের অধীনে। ১২ এপ্রিল ১১৫৯ সালে ম্যানুয়েল বাহিনী এন্টিওকে প্রবেশ করে তারা সেখানে একদিন অতিবাহিত করার পর আলেপ্পোর উদ্ধেশ্যে রওনা দেয়। একদিন পদযাত্রার পর তারা আলেপ্পোর বালন নামক একটি স্থানে এশে থামলো। নুর আল্ দিন জানগি বাইজাইন্টাইন সম্রাট ম্যানুয়েলের কাছে প্রস্তাব পাঠান তিনি সকল খ্রীষ্টান কে মুক্ত করে দিবেন ম্যানুয়েল যেনো ফিরে যান। একই সময় সেলজুক সুলতান ম্যানুয়েলের বিরুদ্ধে জেরুজালেমে ষড়যন্ত্র করছিল তাই ম্যানুয়েল কোন উপায় না দেখে নুর আল্ দিন জানগির প্রস্তাব মেনে নেন এবং জেরুজালেমের দিকে যাত্রা শুরু করেন নুর আল্ দিন জানগির উপর আক্রমন না করায় ক্রুসেডররা ম্যানুয়েলের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে।বস্তুত প্রস্তাবটি বাইজাইন্টাইন সম্রাটের পক্ষেই ছিল তিনিও মন থেকে এই অঞ্চলের ক্ষতি করতে চাননি। উক্ত প্রস্তাব মোতাবেক নুর আল্ দিন তার বন্দীতে থাকা ৬ হাজার খ্রীষ্টানকে মুক্ত করে দেন এদের মধ্যে টেম্পলার মাস্টার ব্যালার্সফোর্ড ও ছিল। ক্রুসেডররা বাইজাইন্টাইন সম্রাটের উপর ক্ষীপ্ত হলেও তারা নুর আল্ দিন জানগির বিপক্ষে বাইজাইন্টাইনদের উপরই নির্ভরশীল ছিল। এদিকে ফ্রাঙ্করা ভয়ে ছিল নুর আল্ দিন জানগি দামেস্ক জয় করার পর না জানি মিশরের দিকে এগোয় কারন তখন মিশরের জন্য অন্যতম হুমকি ছিল নুর আল্ দিন জানগি কারন ফ্রাঙ্ক চাইছিলনা ফাতেমিদের পরে নুর আল্ দিন জানগি মিশর শাসন করুক। তাই ক্রুসেডররা মিশর আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা মিশরে যাওয়ার রাস্তা পরিস্কার করার জন্য ১১৫৩ সালে আস্কালন বিজয় করে। এবং সদ্য জেরুজালেমের সিংহাসনে বসা আমরাল্রিক প্রথম মিশর আক্রমন করার আশংকা আরো বাড়িয়ে দেন কারন তিনিও চাইছিলেন মিশরকে দখল করতে। এদিকে ফাতেমিরা ছিল রাজনৈতিক জটিলতায় জর্জরিত তারা তারা এর সমাধানের জন্য নুর আল্ দিনের দিকে এগোচ্ছিল মূলত সোজা বাংলায় বলতে গেলে নুর আল্ দিন জানগি এবং ক্রুসেডররা দুই দল ই চাইছিল মিশর দখল করতে আর মাইনকা চিপায় ছিল ফাতেমিরা। ১১৬৩ সালে জেরুজালেমের রাজা মিশরের দিকে যাত্রা করেন এবং পেলিসিয়াম শহর অবরোধ করেন। পেলিসিয়াম শহরে ফাতেমি কমান্ডার দিরগাম বন্যা সুযোগ নিয়ে নীল নদীর কয়েকটি দরজা খুলে দেন এতে ক্রুসেডরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এদিকে সাবেক উজির শাওর যে দিরগামের সাথে ক্যাচালের ফলে তার অবস্থান হারিয়েছিলেন তিনি সাহায্যর জন্য নুর আল্ দিন কাছে এসেছিলেন তার অবস্থান ফিরে পেতে তাকে সাহায্য করার জন্য এর বিনিময়ে তিনি নুরদ্দিন জানগির সকল সৈন্যর ব্যয় খরচ তিনি বহন করবেন এবং মিশর থেকে প্রাপ্ত দুই তৃতীয়াংশ কর তাকে দিবেন বলে প্রতুশ্রুতি দেন। ফাতেমিরা তখন ছিল বিভক্তির মূল কারন মূলত খলিফা এদের রাস্ট্র প্রধান হলেও গভর্নররা তাকে মান্য করতো না গভর্নররা ছিল তাদে মধ্যে প্রতিযোগিতায় ব্যাস্ত এই গভর্নরা প্রায়ই সহিংস কান্ড গঠাতো তাই নুর আল্ দিন জানগিও হয়তো চাইছিলেন ফাতেমিদের ক্ষমতার অবসান করতে। এর মাধ্যমে নুরদ্দিন জানগি তার সর্বাধিক আস্থাভাজন সেনাপতি শিরকুহর নেতৃত্বে বিশাল সেনাবাহিনী মিশরে প্রেরন করেন। এই সেনাবাহিনীতে শিরকুহর ভাগ্নে ২৭ বছরের সালাহউদ্দিন আল আয়ুবীও যোগ দেন। এদিকে ক্রুসেডররা যাতে এই ক্যাচালের সুযোগ নিতে না পারে এবং শিরকুহ যাতে দ্রুত মরুভূমি পেরিয়ে মিশরে যেতে পারে তার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নুর আল্ দিন জানগি নিচ্ছিলেন।