রাজার বন্ধু নেই
মোঃ আব্দুর রহমান
বিকেল বেলা বাবার সাথে হাতটি ধরে বন্ধুদেরকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছে রীমা। রাস্তার পাশেই অনেকগুলি দোকান। কতো সুন্দর চকলেট, বিস্কুট আর আইসক্রিমতো আছেই! আইসক্রিম ওর খুব পছন্দ। কিন্তু আম্মুতো আইসক্রিম খেতেই দিতে চায় না । তবে যেভাবেই হোক আজকে বাবার কাছ থেকে আইসক্রিম খেতেই হবে। তাইতো বাবাকে পটিয়ে, বুঝিয়ে অবশেষে আইসক্রিম কিনেই ছাড়লো রীমা। ওরা মোট পাঁচজন বন্ধু আছে। দোকান্দার আংকেল একটি পলেথিনে সুন্দর করে আইসক্রিমগুলি ওদের হাতে দিলো। যাহোক এবার খুশীতে বাবাকে ধন্যবাদ দিয়ে আইসক্রিমগুলি সবাই হাতে হাতে নিয়ে, পলিথিনটা ফেলেদিলো রাস্তায়। আর সাথে সাথেই সেই প্যাকেটটি কুড়িয়েনিলো একটি টোকাই ছেলে! যার নাম রাজা। আর সেটা দেখে রীমারা হেসে.. কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু ছেলেটা কিছুই বললোনা। চুপ মেরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের নোকগুলি খুটছিলো আর লজ্জায় কাদো কাদো চোখে তাকিয়ে রইলো। এবার রীমা বললো,” কি রে টোকাই খাবি? খেতে মনে চাইছে?” ঠিক তখনই রীমার বাবা অবাক হয়ে বললো,”আহা.. তোমরা ওর সাথে এমন করছো কেন!” সবাই বললো,”আংকেল ও আমাদের ক্লাশে পড়তো। একদিনও পড়া পারতোনা,এমনকি নিয়মিত স্কুলেও যেতোনা। তাই ম্যাডাম ওর ক্লাশ থেকে নাম কেটে-কান ধরে বের করে দিয়েছে।” বলেই সবাই হো হো করে হাসতে শুরু করলো...। যেন কি এক মজাই পাচ্ছে ছেলেটাকে এভাবে কথা বলে..। এবার রীমার বাবা বললো,” না মা এভাবে হাসেনা। এতে মানুষ কষ্ট পায়। আর ও না তোমাদের বন্ধু!”
ঠিক তখন রাজা বললো,” না আংকেল আমি ওদের বন্ধুনা। আমিতো একটা টোকাই!এটাই আমার পরিচয়, বলে একদম কেঁদেই ফেললো ছেলেটা।” রীমার বাবা জিজ্ঞেস করলো,” তোমার স্কুলে যেতে মনে চায়না রাজা? “ মনে চাইলেই কি যাওয়া যায় আংকেল। আমার বাবা প্যারালাইজড রোগী। মা মানুষের বাসায় কাজ করে। তবে প্রায়ই মাও অসুস্থ থাকে। তাইতো আমাকে বাবার ওষুধ ও খাবারের জন্য টোকাইর কাজ করতে হয়। ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারতামনা। আর আমার মা-বাবাতো লেখা পড়াও জানেনা। আমাকে কে পড়াবে বলুন। তাই আমি স্কুলে পড়া পারতামনা। এখনতো শুনলেনি আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে। কথাগুলি বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো রাজা! এসব শুনে ফ্যাল ফ্যাল করে রাজার দিকে তাকিয়ে রইলো পাঁচ বন্ধু। এই সত্যটা ওরা জানতোইনা। কখনো জানার চেষ্টাও করেনি। ইশ না জেনে কতো কথাইনা বলেছে রাজাটাকে! তাইতো ওরাও চোখ মুছতে থাকলো, একটুও ভালো লাগছেনা ওদের মনে। এবার রীমার বাবা বললো,” শোনো মা মনিরা এর জন্য না জেনে কারও সম্পর্কে কোন ভুল মন্তব্য করা ঠিক নয়। ঠিক আছে তোমরা কেঁদোনা,আমি দেখছি।” এবার রাজাকে কাছে ডাকলো রীমার বাবা,” রাজা শোনো কাল থেকে তুমি আবার স্কুলে যাবে। তোমাকে আমি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবো। আর তোমার সমস্ত পড়ার খরচ আমি দিবো।তুমি প্রতিদিন বিকেল বেলা রীমার সাথে ওর আম্মুর কাছে পড়ে, তারপর বাসায় যাবে। আর তোমার মা-বাবা যতদিন সুস্থ্য না হয়, ততোদিন আমাদের বাসা থেকে উনাদের জন্য খাবার নিয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, তুমি বলেছো, তোমার কোন বন্ধু নেই। কে বলেছে তোমার বন্ধু নেই! আজ থেকে ওরা সবাই তোমার বন্ধু।” সাথে সাথে সবাই এসে রাজাকে জড়িয়ে ধরে বললো। হ্যাঁ, আজ থেকে আমরা সবাই তোমার বন্ধু, কি মজা! কি মজা!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct