রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ চিনের ওপর রাশিয়ার নির্ভরশীলতাকে সামনে তুলে ধরেছে এবং সেই নির্ভরশীলতা যত বাড়বে, ততই রাশিয়ার দুর্বলতাকে প্রকাশ করে দেবে। এ অবস্থায় চিনের আগ্রাসন মোকাবিলায় ভারত তখন খুব কমই ক্রেমলিনের ওপর নির্ভর করতে পারবে। ২০২০ সালের জুনে কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ানকে হত্যা করে চিনা সেনারা, তখন আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি। ভারতকে তাই অবশ্যই অন্ধ রুশপ্রেম থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এ নিয়ে লিখেছেন শশী থারুর। আজ শেষ কিস্তি।
এর এক সপ্তাহ পরে চীন রাশিয়ার পক্ষে সাফাই দেয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাশিয়ায় চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং হানহুই যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ইউক্রেন সংকটের সূচনাকারী এবং প্রধান উসকানিদাতা’ বলে আখ্যায়িত করেন। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপ সামলাতে গিয়ে রাশিয়া রপ্তানি বাজার এবং গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের উৎস হিসেবে চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া থেকে চীনা আমদানি ৫৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে চীনই একমাত্র দেশ যে রাশিয়ানদের এমন সব ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করতে পারে, যা একসময় রাশিয়া ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করত। এর মধ্য দিয়ে চীন তার লাভ বুঝে নিচ্ছে। কূটনৈতিকভাবে রাশিয়াকে সমর্থন করার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পশ্চিমাদের ভয়ে ভীত নন—এমন একটি ভাবমূর্তি জোরালো করতে পারছেন। একই সময়ে তিনি রাশিয়ার বাজারে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য এবং চীনা মুদ্রা রেনমিনবির বর্ধিত মর্যাদা থেকে উপকৃত হচ্ছেন।
এই পটভূমিতে, ভারতকে অবশ্যই তার ভূরাজনৈতিক বিকল্পগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা করতে হবে। ভারত এটি অবশ্যই স্বীকার করবে, রাশিয়াকে তার কখনোই কম প্রয়োজনীয় মিত্র মনে হয়নি। তবে রাশিয়ান সামরিক সরবরাহের ওপর ভারতের নির্ভরতা অনেক কমে গেছে। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার অস্ত্র সরঞ্জামের ওপর ভারত ৭৫ শতাংশ নির্ভর করত। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে সেই হার ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে এই হার আনুমানিক ৪৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এটি ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ে বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে ভারতের প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইসরায়েল প্রধান সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী হয়ে ওঠায় ভারতের অস্ত্র ক্রয়ের বাজার বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চীনের গগনবিহারী উচ্চাকাঙ্ক্ষার রাশ টেনে ধরতে ভারতকে অবশ্যই অন্যদের সঙ্গে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করতে হবে। চীন ক্রমবর্ধমানভাবে একটি ভ্রাম্যমাণ সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের আদলে নিজেকে ধীরে ধীরে রূপান্তরিত করছে এবং তার সেই প্রচেষ্টায় ক্রমবর্ধমানভাবে যুক্তরাষ্ট্র অবিশ্বাস্য অংশীদার হয়ে উঠছে। ভারতের সীমান্ত এলাকাজুড়ে চীন-পাকিস্তান চক্রের তৎপরতা ভারতকে ঝুঁকির মুখে রেখেছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ নতুন ভূরাজনৈতিক ফল্ট লাইন তৈরি করেছে। এ কারণে ওই অঞ্চলের দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় নিজস্ব কঠিন কৌশলগত নীতি অনুসরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। ভারতকেও একই পথে এগোতে হবে।
(সমাপ্ত...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct