নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ বিজেপির নবান্ন অভিযান নিয়ে মামলার নিস্পত্তি ঘটিয়ে ওই আর্জি খারিজ করে দিয়েছে।প্রসঙ্গত, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিজেপির নবান্ন অভিযানের দিনই এই মামলা দায়ের হয়েছিল। জরুরি শুনানির আবেদন করে বিজেপির নবান্ন অভিযান বাতিলের আর্জি জানানো হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। মামলাকারী আইনজীবী রমাপ্রসাদ আদালতের কাছে করা তাঁর হলফনামায় জানিয়েছিলেন, -' জাতীয় সড়কপথে আটকে জনজীবন বিপন্ন করে সভা, মিছিল, সমিতিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের। তার পরেও কেন এই অভিযান করা হবে?' এই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন তিনি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এর দিন এবং তার পরে বিজেপির ঘোষিত নবান্ন অভিযান ঘিরে বেশ কয়েকটি মামলা দাখিল হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। সেই মামলার শুনানি বেশ কয়েকবার চলে কলকাতা হাইকোর্টে।আগেকার শুনানিতে আদালতের তরফে কোন নির্দেশ জারি করা হয়নি।তবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।গত ১৩ সেপ্টেম্বর এর বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল হাওড়ার ডানকুনি - সাঁতরাগাছি এলাকা।আবার কলকাতার হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা গুলিতেও ঘটেছিল হিংসাত্মক ঘটনা। ঘটনার দিন হাওড়া এবং কলকাতায় উত্তাপ ছড়িয়ে রণক্ষেত্রের রুপ নিয়েছিল পথঘাট গুলি। বিজেপির মিছিল নবান্ন পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি ঠিকই, তবে মাঝ রাস্তায় যেমন ডানকুনি সাঁতরাগাছি, হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন, লালবাজার এলাকায় যে যে ঘটনা ঘটেছে তার রেশ অব্যাহত রয়েছে এখনও । বিজেপির নবান্ন অভিযান নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলাতেই গত সপ্তাহে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের রিপোর্ট জমা পড়েছিল আদালতে। রিপোর্টের পাশাপাশি দুটি পেনড্রাইভও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।বিজেপি এই নবান্ন অভিযানের দিন ( গত ১৩ সেপ্টেম্বর ) শহরের রাস্তায় কার্যত তাণ্ডব চলে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর থেকে শুরু করে গাড়িতে আগুন লাগানো, পুলিশকে মারধর, ইট ছোড়া সবই হয়েছে। ঘটনায় সব অভিযোগ বিজেপির দিকে। তবে বিজেপিও পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছে। সব মিলিয়ে কলকাতা হাইকোর্টেও এই সংক্রান্ত মামলা রুজু হয়েছিল । গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকারের তরফে সওয়াল করেছিলেন এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, তিনি এজলাসে বলেছিলেন, -' আগে আদালত পেনড্রাইভ দেখুক। তা দেখলেই সব জানা যাবে। বিচারপতি বুঝতে পারবেন কী ঘটেছিল?' আগের শুনানিতেই এজি দাবি করেছিলেন , -' ঘটনার দিন পুলিশের তরফ থেকে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তারপরেও বিজেপি অভিযান করেছে, যা বেআইনি। বিজেপির অভিযানের দিন সরকারি, বেসরকারি অনেক সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। প্রায় ৫০ জন পুলিশকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন'। ওইদিন আদালত এই মামলায় দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ বহাল রেখেছিল কলকাতা হাইকোর্টের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপির নেতা-কর্মীদের কেন গ্রেফতার করা হল? তা নিয়েই রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলেছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ওইদিন আদালতে রিপোর্ট-সহ ঘটনাস্থলের ভিডিয়ো ফুটেজ জমা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। ওইদিন কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের কাছে কতজন গ্রেফতার হয়েছে তার তালিকা চায়। এর প্রতুত্তরে রাজ্যের দাবি, -' কাউকেই অকারণে গ্রেফতার করা হয়নি।যারা সম্পত্তি নষ্ট করবে,পুলিশ কে মারবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে না? পুলিশের গাড়ি জ্বালানো হয়েছে।’ ৫০ এর বেশি পুলিশ কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন এজি।ওইদিন আদালতে বিজেপির আইনজীবী জানিয়েছেন , -মোট ৪৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা থেকেই গ্রেফতার হয়েছেন ৭৯ জন। এখনও ধরপাকড় চলছে '। এর জবাবে , রাজ্যের পাল্টা দাবি, -' মাত্র ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে'। ঘটনার দিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা, নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে ওই দিন সন্ধ্যায় লালবাজার থেকে তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়। নবান্ন অভিযানের দিন কলকাতা পুরসভার এক বর্ষীয়ান কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পরবর্তীতে রাজ্যে দলীয় আক্রান্তদের দেখতে আসে বিজেপির কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান কমিটি। যা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct