আপনজন ডেস্ক: ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আএসএসএস মুসলিমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে বিশেষ উদ্যোগ নিল। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত হঠাৎ করেই দিল্লির কস্তুরবা গান্ধী মার্গের মসজিদে পৌঁছে গেলে সবাই অবাক হন। এই সময় তিনি অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান উমর আহমেদ ইলিয়াসির সাথে দেখা করেন।শু ধু তাই নয়, এর পরে মোহন ভাগবতও মসজিদের কাছে চলমান মাদ্রাসায় পৌঁছে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। মোহন ভাগবত প্রায় এক ঘণ্টা ইমামের সঙ্গে দেখা করেন। মোহন ভাগবতের সঙ্গে ছিলেন প্রবীণ সংঘ নেতা কৃষ্ণ গোপাল, রাম লাল এবং ইন্দ্রেশ কুমার।
বৈঠকের পরে, ইমাম উমর আহমেদ ইলিয়াসি জানান, আরএসএস প্রধান তাঁর আমন্ত্রণে মাদ্রাসা তাজভীদুল কুরআনে এসেছিলেন। এ সময় তিনি মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। মোহন ভাগবতের সঙ্গে শিশুদের কী হয়েছিল তা জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় মুুসলিম মঞ্চের নেতা ইন্দ্রেশ কুমার। তিনি বলেন, যে মোহন ভাগবত শিশুদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন তারা কী পড়াশোনা করে এবং তারা জীবনে কী হতে চায়। তিনি বলেন, বেশিরভাগ শিশুই বলেছে যে তারা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। এ সময় ইমাম উমর আহমদ ইলিয়াসী ভাগবতকে বলেন, শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি এখানে আধুনিক বিষয়ও পড়ানো হয়। আরএসএস প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের সময় মাদ্রাসার ছাত্ররাও জয় হিন্দ ও বন্দে মাতরমের স্লোগান দেয়। মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করা মাহমুদ হাসান বলেছেন যে শিশুরা মোহন ভাগবতের সাথে খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দেখা করেছিল। তিনি বলেন, মোহন ভাগবত শিশুদের ইসলামিক বিষয় ছাড়াও কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে বলেছেন। বলা হচ্ছে, এক ঘণ্টার সফরে মোহন ভাগবত শিশুদের কাছ থেকে কুরআনের আয়াতও শুনেছেন। হাসান বলেন, মোহন ভাগবত শিশুদের সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নও করেছিলেন। অন্যদিকে, এদিন মোহান ভাগত দিল্লিতে পাঁিচজন মুসলিম বিশিষ্টজনের সঙ্গে কথা বলেন। মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের পক্ষে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি, দিল্লির প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং, এএমইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর (অবসরপ্রাপ্ত) জমিরউদ্দিন শাহ, রাষ্ট্রীয় লোকদলের নেতা শাহিদ সিদ্দিকি ও শিল্পপতি সঈদ শেরওয়ানি। দিল্লিতে আরএসএসের অস্থায়ী কার্যালয় উদাসীন আশ্রমে এই বৈঠক হয়েছে। আধঘণ্টা বৈঠক চলার কথা থাকলেও, তা ৭৫ মিনিট পেরিয়ে যায়। মোহন ভাগবত ছাড়াও আরএসএসের সহ-সরকার্যবাহ কৃষ্ণগোপাল উপস্থিত ছিলেন।
এই বৈঠক নিয়ে এসওয়াই কুরেশি বলেন, মোহন ভাগবত গোহত্যা এবং কাফির শব্দ ব্যবহার নিয়েঅসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাকে অবগত করা হযেছে, কেউ যদি গোহত্যা করে, তবে আইন অনুযায়ী তাঁকে শাস্তি দেওয়া হবে। আর কাফির নিয়ে বলা ঞয়, এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ অবিশ্বাসী। কিন্তু ভাগবত ঈম্বর বিশ্বাসী হওয়ায় তিনি , কাফির শব্দে মর্মাহত। যদিও তাকে জানানো হয়েছে যখন কোনও ভারতীয় মুসলিমকে পাকিস্তানি অথবা জিহাদি তকমা দেওয়া হয়, তখন ভারতীয় মুসলিমরা দুঃখ পায়। শাহিদ সিদ্দিকী জানান, এই বৈঠকের পর ভাগবত সংঘের চার পদাধিকারীকে দায়িত্ব দিয়েছেন, যারা মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখবেন। আমরাও বিভিন্ন শ্রেণির মুসলিমদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আরএসএসের সঙ্গে কী কথা হল তা জানানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দিল্লি মাইনরিটি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জাফারুল ইসলাম খান বলেন, বিজেপি-আরএসএসের সঙ্গে মুসলিমদের দূরত্ব দূর করতে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তা গোপনে হওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব থাকা দরকার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct