নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দিয়েছে।অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ডিভিশন বেঞ্চ আগেকার রায়দান টি বহাল রাখলো। যদিও রাজ্য সরকারের তরফে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল পিটিশন দাখিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।তবে মামলাকারীরা ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করে রেখেছেন। অর্থাৎ রাজ্যের আপিল পিটিশন দাখিল হলে সুপ্রিম কোর্টে একতরফা শুনানি হবেনা।দু তরফেই সওয়াল-জবাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা মামলায় বৃহস্পতিবার রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ আগেকার নির্দেশই বহাল রাখল।গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারি কর্মচারী মহার্ঘ ভাতা তথা ডিএ নিয়ে মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। এরপর রায় দান স্থগিত রেখেছিল বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ।গত ২০১৬ সালে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল বা স্যাটে মামলা শুরু হয়। 'কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ' এই মামলা দায়ের করে থাকে । এই মামলা শুনানির সময় রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, -' মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মীদের আইনসিদ্ধ অধিকার নয়'। এই বক্তব্যকেই সেসময় মান্যতা দিয়েছিক স্যাট। কিন্তু স্যাটের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। তখন হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ স্যাটের রায়কে খারিজ করে থাকে । তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে জানানো হয়, -' মহার্ঘ ভাতা সরকারের দান নয়, তা কর্মীদের আইনি অধিকার'। আবার রায় পুনর্বিবেচনার জন্য মামলাটি স্যাটের কাছেই পাঠিয়ে দেয় হাইকোর্ট । স্যাটের তৎকালীন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের বেঞ্চ ২০১৯ সালের জুলাইয়ে রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, -' ছ'মাসের মধ্যে কর্মীদের বকেয়া ডিএ মেটাতে হবে'।রাজ্যের তরফে স্যাটের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালে আবার হাইকোর্টে মামলা ওঠে। ওই বছরের ডিসেম্বরে ফের বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট । এই ঘটনার ঠিক দু'বছর পর ২০২২ সালে ২৯ এপ্রিল এই মামলার শুনানি শেষ করে থাকে ডিভিশন বেঞ্চ । তার পরই ২০ মে এই মামলার রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট । আদালতের তরফে জানানো হয়, -' তিন মাসের মধ্যেই বকেয়া মেটাতে হবে'। এই রায়ই বহাল রাখা হল বৃহস্পতিবার। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্যে। ডিএ দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা বিচারাধীন রাখল কলকাতা হাইকোর্ট।
আগামী ৭ নভেম্বর আদালত অবমাননার মামলাটির শুনানি হবে বলে জানা গেছে ।ডিএ নিয়ে দুটি মামলার শুনানি হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এর আগে কলকাতা হাইকোর্ট ডিএ নিয়ে রায় ঘোষণা করেছিল। সেই রায়ে বলা হয়েছিল, -' তিন মাসের মধ্যে বকেয়া ডিএ পরিশোধ করতে হবে রাজ্য সরকারকে'। তবে রাজ্য সরকার তিনমাস পেরিয়ে গেলেও তা না দেওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল।এদিন মামলাকারীদের পক্ষে অন্যতম বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন , -' হাইকোর্টই রায় দিয়েছিল যে ডিএ দয়ার দান নয়। তা হল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অধিকার। তাহলে রাজ্য সরকার কেন তা দেবে না?মূল্য সূচকের ভিত্তিতে সমস্ত রাজ্য সরকার ডিএ দেয়। তাহলে বাংলায় কেন তা থেকে বঞ্চিত হবেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা?' এর আগে হাইকোর্টে শুনানিতে রাজ্যের পক্ষে এজি বলেছিলেন,-' মূল্য সূচকের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের যে ডিএ পাওয়া উচিত তা তাঁরা পান। এরফলে নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।ষষ্ঠ ও সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ রাজ্য সরকার গ্রহণই করেনি। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার বিষয়টি যখন রাজ্য সরকার গ্রহণই করেনি তখন বকেয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?' এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এর ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিতে গিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ উঠে আসে যে, -' রাজ্যের আবেদনের কোনও যৌক্তিকতা নেই।তাই পুনর্বিবেচনার আর্জি গ্রহণ করা হচ্ছে না। দীর্ঘ শুনানি শেষের পর কী ভুল আছে, খুঁজে বার করা আদালতের দায়িত্ব নয়। 'ডিটেলস এনকোয়ারি' বা 'স্ক্রুটিনি' যা রাজ্য বলছে, আর প্রয়োজন নেই। রাজ্যের আবেদনের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই'।এই মামলার শুনানি পর্বে হাইকোর্টকে রাজ্য আগে জানিয়েছিল, - রাজ্য কোষাগারে টাকা নেই বলে উঁচু হারে ডিএ দেওয়া যাচ্ছে না'। তবে রাজ্যের এই যুক্তি আগেও গ্রাহ্য করেনি ডিভিশন বেঞ্চ।পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)-এ ২০১৬ সালে মামলা করে কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৩৪ শতাংশ হারে ডিএ পান। রাজ্য সরকার মাঝে ৩% ডিএ বাড়ালেও এখনও কেন্দ্রের তুলনায় রাজ্যের কর্মীরা ৩১ শতাংশ কম পান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct