সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: সিপিআই মাওবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস ২১ সেপ্টেম্বর। ২০০৪ সালের এই দিনেই জনযুদ্ধ গোষ্ঠী এবং মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার যুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সিপিআই মাওবাদী’। সত্তরের দশকের নকশাল আন্দোলনের পর ফের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড সহ দেশ জুড়ে আছড়ে পড়েছিল চরমপন্থী বাম আন্দোলন। তবে এরাজ্যের জঙ্গলমহলে সরকার পক্ষের ঘাড়ের ওপর ক্রমাগত শীতল নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন মাও পলিটব্যুরো সদস্য কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষাণজি। বলাই যায় সেই চরমপন্থী আন্দোলন এই রাজ্যে একপ্রকার শেষ হয়ে গিয়েছিল গত ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর। বুড়িশোলের জঙ্গলে এই মাও শীর্ষ নেতার মৃত্যুর পরে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল সংগঠন।
গত কয়েকমাসে বারবার গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে মাওবাদীদের নিয়ে সতর্কতা। তারপর থেকে আবারও গ্রেফতার হয়েছে বহু। তবে অধিকাংশ মাও পোস্টার ছিল ভুয়ো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই দাবি করেছিলেন, বেশ কিছু মাও পোস্টারের পেছনে আসলে রয়েছে বিজেপি’র হাত। তবে সাম্প্রতিক কালে মাও বনধে দেখা গিয়েছে মিশ্র প্রভাব। এরপর বিষয়টি ফের ঝিমিয়ে গিয়েছিল। তবে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফের প্রকাশ্যে আসে মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির বার্তা। ওই দিন দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল করেছিল সংগঠন। সেই বার্তায় বলা হয়েছিল, যারা আহত তাদেরকে সেই ব্যথা ভুলে ফের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ডাক দেওয়া হয়েছিল, সুস্থ হয়ে উঠলেই ফের আন্দোলনে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি সাম্প্রতিক কালের ‘কৃষক আন্দোলন’কেও সমর্থন জানানো হয়েছিল চরম লাল শিবিরের পক্ষ থেকে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২১-২৭ সেপ্টেম্বর মাও প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের কথা। মাও প্রতিষ্ঠা দিবসে যাতে কোনও নাশকতামূলক ঘটনা না ঘটে, সেদিকে কড়া নজর রেখেছে প্রশাসন। জানা গিয়েছে, চালানো হচ্ছে টহলদারি। রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান সদস্য নপরাজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, মাওবাদীদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে প্রশাসন যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে নিশ্চয়। রাতের দিকে নজরদারি জোরদার রাখার প্রয়োজন। অপরদিকে মাও কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা দক্ষ গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে এক আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যে মাও প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিশেষ সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে। বিহার, ছত্তীশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ সহ মহারাষ্ট্রের বিশেষ কিছু অংশে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। এ রাজ্যে ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে চলছে জোরদার নজরদারি। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে নাকা চেকিংয়ের পাশাপাশি জঙ্গলমহলের সব থানায় জারি করা হয়েছে সতর্কতা। বিকেল অথবা সন্ধ্যার সময় বাড়তি নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানোর পাশাপাশি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় গাড়ির টহল জারি রয়েছে। রাতের ট্রেন পথেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জঙ্গলমহলের সবকটি পুলিশ ক্যাম্পে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে চলছে কড়া নজরদারি।
পুরুলিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিনাকী দত্ত জানিয়েছেন, মাও দমনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া আছে। এদিন ‘রেল রোকো’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই কর্মসূচিস্থলেও মোতায়েন রয়েছে পুলিশ বাহিনী। কুড়মিদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, ‘শুধু মুখের কথা নয়। চাই প্রধানমন্ত্রীর লিখিত প্রতিশ্রুতি। তাঁদের দাবি, কুড়মিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তফশিলী জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে। উল্লেখ্য, মাও প্রতিষ্ঠা দিবসের প্রাক্কালে কলকাতার উপকন্ঠ থেকে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য সম্রাট চক্রবর্তীর এনআইএ’র হাতে গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা নতুন করে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে গোয়েন্দাদের কপালে। কুলির বেশে লুকিয়ে থাকা সম্রাট বেলঘরিয়া, সোদপুর ও পানিহাটি এলাকায় কাদের নিয়ে সংগঠন ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছিলেন, তা জানতে মরিয়া গোয়েন্দারা। মাও নেতা গৌর চক্রবর্তী ও নির্মলার সঙ্গে সম্রাটের যোগাযোগে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে গোয়েন্দারা। জানা গিয়েছে, প্রায় ২০টি ছদ্মনামে কাজ চালাত সম্রাট। এই মাও শীর্ষ নেতা একসময়ে দায়িত্ব ছিলেন কলকাতা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম জেলার। অসমে আত্মগোপন করে থাকার সময়েও সে রাজ্যেও চালাচ্ছিলেন সংগঠন বিস্তারের কাজ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct