আপনজন ডেস্ক: ১৭০০ সালের দিকে ফ্রান্সে আলু ভাজা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু সেগুলো পুরু করে কাটা আলুর টুকরা ছিল। এরপর ধীরে ধীরে আমেরিকায় জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে এই ফ্রেন্স ফ্রাই।
আলু ভাজা বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের এই জনপ্রিয়তায় পরবর্তী সময়ে ভাটা ফেলে পটেটো চিপস।
তখন ১৮৫৩ সাল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সারাতোগা কাউন্টির একটি শহর সারাতোগা স্প্রিংয়ে মুনস লেক হাউস নামে একটি রেস্তোরাঁ ছিল। সেখানে জর্জ ক্রাম নামে এক নেটিভ আমেরিকান রাঁধুনি কাজ করতেন। এক সন্ধ্যায় মুনস লেক রেস্টুরেন্টে উপচে পড়া ভিড়। টেবিলে একজন গেস্ট ফ্রেন্স ফ্রাইয়ের টুকরা অতিরিক্ত পুরু বলে অভিযোগ করে অর্ডার বাতিল করেন। জর্জ ক্রাম আরো পাতলা করে কেটে ভেজে ফ্রেন্স ফ্রাই তৈরি করে আনেন। তাতেও সেই গেস্টের মন ভরল না। আবারও ফিরিয়ে দিলেন তিনি। ক্রাম কিচেনে ফিরে রাগ করে আলু আরো পাতলা করে কেটে, তেলে মচমচে করে ভেজে তাতে লবণ ছিটিয়ে দিলেন। এত পাতলা করলেন, যাতে গেস্ট ফর্ক দিয়ে এটা তুলতে না পারে। তাতে হিতে বিপরীত হলো। গেস্ট এই নতুন আইটেম খুব পছন্দ করলেন। শুধু তা-ই নয়, পরের দিনও অর্ডার দিলেন এই বিশেষ আলু ভাজার। ধীরে ধীরে আরো অনুরোধ আসতে থাকল ক্রামের পটেটো চিপসের। এরপর রেস্তোরাঁটির মেন্যু কার্ডে যুক্ত হলো নতুন একটি আইটেম—সারাতোগা চিপস। ১৮৬০ সালে ক্রাম সারাতোগা লেকের কাছেই তাঁর নিজের রেস্তোরাঁ চালু করেন। তখনকার সময়ের নামিদামি লোকেরা ছিলেন তাঁর এই বিশেষ চিপসের নিয়মিত ক্রেতা।
চিপসের আবিষ্কার নিয়ে বিতর্ক থাকলেও একটা ব্যাপারে সবাই একমত যে ক্রামই পটেটো চিপসকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
জর্জ ক্রামের জন্ম সারাতোগা স্প্রিংয়ে, ১৮২৪ সালের ১৫ জুলাই। পেশাজীবনে কখনো শিকারি, কখনো বা পাহাড়ি পর্যটকদের গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শেষে থিতু হতে চেষ্টা করেছেন শেফের কাজে। ১৮৫০ সালে মুনস লেক হাউসে যোগ দেন। চিপস আবিষ্কারের পর ক্রাম চিপসের জন্য কোনো ধরনের পেটেন্টের আবেদন করেননি। তাঁর চিপসের প্রচার সীমাবদ্ধ ছিল নিউ ইয়র্কের আশপাশেই। এই রেস্তোরাঁ ৩০ বছর চলে। এরপর ১৮৯০ সালে এটি বন্ধ করে দেন তিনি। ৯২ বছর বয়সে ১৯১৪ সালে জর্জ ক্রাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৫০-এর আগে ভিন্ন ফ্লেভারের চিপসের কথা কেউ সেভাবে চিন্তা করেনি। ১৯৫৪ সালে আইরিশ ব্যবসায়ী জয় স্টুড মারফি টাইটো নামে একটি কম্পানি চালু করেন। সেখানে তিনি চিপসে সিজনিং যুক্ত করা শুরু করেন। সিজনিং হচ্ছে মজাদার স্বাদ আনার জন্য লবণ, ভেষজ বা মসলা যোগ করার প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে তখন দুটি ফ্লেভার তৈরি করা হয়—চিজ ও ওনিয়ন এবং সল্ট ও ভিনেগার। মূলত তাঁর এই উদ্যোগেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে পটেটো চিপস শিল্পে। অন্য চিপস কম্পানিগুলোও চিপসে ভিন্ন স্বাদ আনতে উদ্যোগী হয়। ১৯৬৫ সালে প্রথম বারবিকিউ চিকেন ফ্লেভারের চিপস উত্পাদন করে লেস কম্পানি। এভাবেই পটেটো চিপসশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। এখন পটেটো ছাড়াও নানা উপাদান দিয়ে চিপস বানানো হয়। কিন্তু আলুর চিপসের চাহিদা এখনো তুঙ্গে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct