আন্দামানের লং আইল্যান্ড
বেবি চক্রবর্ত্তী
আপনজন: লং আইল্যান্ড দ্বীপটি আকার আকৃতিতে অনেক লম্বা তাই এই আইল্যান্ডের নাম লং আইল্যান্ড রাখা হয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ বলতে আমাদের ভাবনা মোটামুটি পোর্ট ব্লেয়ার, নীল আইল্যান্ড,আর হ্যাভলক আইল্যান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার মাঝেই লুকিয়ে আছে আন্দামানের অনেক এই রকম ছোট বড়ো আশ্চর্য দ্বীপ,যা ভ্রমনকারীদের এখনো অজানা| ভিড় আর যানজটের থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা যারা ছুটে যাই বিভিন্ন শহরে, রাজ্যে বা অন্য কোনও দেশে... তাদের জন্যে ভারতের আন্দামানে বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে আছে এমন কিছু জায়গা, যেগুলো এখনও রয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে। ভৌগোলিক অবস্থানের সুবাদে অথবা অপরিচিত হওয়ার দরুণ এই জায়গাগুলোতে এখনও পর্যটকদের ভিড় সেভাবে হয় না। এইসমস্ত জায়গাগুলো নিয়ে আন্দামানের অনেকেই বেশি কথা বলেন না; সম্ভবত তাঁদের ভয় হয় যদি পর্যটকদের বাড়তি ভিড়ে নষ্ট হতে শুরু করে সেই স্থানের সৌন্দর্য। তবে আশা রাখছি, যেসকল পর্যটকেরা দু-দণ্ড শান্তির খোঁজে এই রকম দুর্গম জায়গায় ছুটে যাবেন, কোন ধরনের আবর্জনা ছড়িয়ে জায়গাগুলোর সৌন্দর্যতার নষ্টের থেকেও তারা নিজেরাই যথাযথ বিরত থাকবেন।
কিছু দিন আগে সুন্দর স্মৃতি বহন করে ফিরে এলাম আন্দামানের সাধারণ ভাবে অপরিচিত কিছু দ্বীপ থেকে।অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলাম ওই কদিন , ব্রাজিল এর Amazon এর জঙ্গল দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি ঠিক কথা.কিন্তু আন্দামান এর মার্ক বে (Mark Bay), গিটার দ্বীপ (Guitar Island) লালাজি বে বিচ (Lala Ji bay beach) দেখার সৌভাগ্য আমার হল।। গিটারের মতো আকৃতি বলে এই আইল্যান্ড কে গিটার দ্বীপ বলে।পোর্ট ব্লেয়ার থেকে আনুমানিক 150-200 কিলোমিটার দুরে) (যা জলপথ অথবা সড়ক পথে প্রায় ৬ ঘন্টা সময় লাগে যেতে) -লম্বা দ্বীপ তথা (Long Island)।ওখান থেকে ছোট্টো নৌকা করে আমরা চললাম সমুদ্রের উপর দিয়ে।। কিছু সময় যাবার পর আমরা লালাজি বিচে এসে পৌঁছলাম ! তারপর কিছুসময় বিচে স্নান করে আমরা পারি দিলাম গভীর সমুদ্রের উপর দিয়ে মাছ ধরতে ধরতে আর ডলফিন দেখতে দেখতে অন্য দুই টো দ্বীপে(যার দুরত্ব 2/3 ঘন্টা)”পৌছনোর ঠিক আগে ছোট খালের মধ্য দিয়ে নৌকা নিয়ে যাবার সময় উপর এবং দুই পাস জঙ্গল, আর নিচে কুমীর দেখার অনুভূতিই আলাদা ! সে এক অন্য অনুভূতি, অবশেষে আমরা নৌকা থেকে নেমে জঙ্গলে পৌঁছে হাঁটতে শুরু করলাম ! এই জঙ্গলে না কিছু খাবার না জল কিছুই পেলাম না| শুধু রাস্তার দুই পাশে পরে থাকা ডাভের জল, জঙ্গলের এর এক প্রকার গাছের ফল আর সাথে থাকা শুকনো খাবার খেয়েই কাটাতে হল সারাটা দিন। কি নেই সেই জঙ্গলে ? বিভিন্ন রকম রং বে রং এর পাখি,হরিণ সমেত অন্যান্য প্রাণী আর সারি দিয়ে চন্দন গাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার জানা অজানা গাছ আমাদের মন জয় করেছে। সারা দিন ঘুরে আবার লং আইল্যান্ড এ ফিরলাম সেই একই পথে,এবং লং আইল্যান্ড যে গেস্ট হাউসে ছিলাম সেই গেস্ট হাউসের চারিদিকে জঙ্গল,রুমের চারিদিকে চন্দন গাছ আর খোলা সমুদ্র, উফফ একটা আলদা অনুভূতি উপভোগ করা যায়| আপনি যদি হাঁটা পথে যান তাহলে লং আইল্যান্ড থেকে শুধুমাত্র লালাজি বিচে যাবার জন্য আছে একটি অসাধারণ সুন্দর রাস্তা। লং-আইল্যান্ডের প্রধান এবং একমাত্র গ্রাম থেকে দ্বীপটির একপ্রান্তে সাদা বালির সমূদ্রতট বরাবর এগিয়ে গেছে এই তিন ঘণ্টার পথ। সমুদ্রতটের বদলে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গেলে এক বা দু-ঘণ্টা সময়েই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যস্থলে। আমাদের ভারতে যে এমন জায়গা আছে তা হয়ত অনেকেরই অজানা।। তবে ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলের সঙ্গে অনেকটাই মিল আছে আমাদের এই ভারতের গর্ব তথা আন্দামানের এই সমস্ত জঙ্গল তা বলা বাহুল্য।। আন্দামান যে কাউকে বিনা আনন্দ আর অনুভূতি ছারা ফেরায় না তা আরো এক বার প্রমাণ করে দিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct