জ্ঞানবাপি মসজিদ নিয়ে বারানসির জেলা জজের রায় প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুত্ববাদীদের উল্লাস দেখে হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভেবেছিলাম বিচারক ওই মামলা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেবেন। কিন্তু রায় দেখে মনে হচ্ছে, দেশ আরও একবার আশির দশকে ফিরে যাচ্ছে। এ ধরনের আরও মামলা শুরু হবে। দেশজুড়ে নতুন করে শুরু হবে অস্থিরতা।’ জ্ঞানবাপি মসজিদ মামলাকে ঘিরে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি তা নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শেষ কিস্তি।
উপাসনাস্থলের চরিত্র পরিবর্তন না করার কথা সেই সময়কার সরকার কেন ভেবেছিল? একটাই কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ ভারত যেন ধর্মীয় সংঘাতের বধ্যভূমি না হয়ে ওঠে। সাম্প্রদায়িকতার বিষ যেন চড়তে শুরু না করে। কিন্তু সরকারের চরিত্র বদলের পাশাপাশি আইনের সেই ‘স্পিরিট’ উবে যেতে শুরু করেছে। দেশের সর্বত্র হিন্দুত্ববাদ দৃঢ় প্রোথিত করার রাজনৈতিক তাগিদ যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, ততই উৎসাহিত হচ্ছে এই ধরনের প্রবণতা। গণতান্ত্রিক দেশে আইনের শাসন সর্বদা প্রাধান্য পায়। কিন্ত মুশকিল হলো, আইনের চোখে মামলা কখনো অমীমাংসিত থাকে না। সব সময় যেকোনো এক পক্ষের জয় হয়, অপর পক্ষ হারে। অথচ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিতর্কের মীমাংসা দুই পক্ষের কাছেই সম্মানজনক ও গ্রহণীয় হতে পারে। অযোধ্যা মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট সেই রায়ই দিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ মন্দির ও মসজিদ দুই পক্ষকেই বলেছিলেন, বিতর্কিত ২ দশমিক ৭৭ একর জমি তিন ভাগে ভাগ করা হোক। এক–তৃতীয়াংশ স্থান গ্রহণ করুক ‘রাম লালা’র প্রতিনিধিত্বকারীরা, এক–তৃতীয়াংশ যাক সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের কাছে, তৃতীয় ভাগ পাক নির্মোহী আখড়া। কেউ তা মানেনি। প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী পর্যন্ত একবার বলেছিলেন, মসজিদ ও মন্দির দুই–ই পাশাপাশি তৈরি হোক। হলে সেটা হতে পারত ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার আরও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এখন এই পরিবর্তিত আবহে এ–জাতীয় সুপরামর্শে কেই–বা আমল দেবে? হিজাব, হালাল, আজান, আমিষ বিতর্ক সমাজকে দ্রুত বিভক্ত করছে। বুলডোজারের ব্যবহার বা দেশদ্রোহ মামলা একাংশকে শঙ্কিত রেখেছে। ‘আরবান নকশাল’ বা ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ শব্দচয়ন ক্রমশ ভীত করে তুলছে ভিন্ন স্বর তোলা বিরুদ্ধবাদীদের। দেশপ্রেম ও দেশদ্রোহ সংজ্ঞার নিত্য পরিবর্তন ঘটছে। জ্ঞানবাপির প্রাথমিক রায় যেভাবে এক মহলে উদ্যাপিত, তাতে সংলাপের অবকাশ নেই বললেই চলে। কে জানে, নতুন করে প্যান্ডোরার বাক্স উন্মোচিত হতে চলেছে কি না। (সমাপ্ত)
সৌ: প্র. আ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct