ফটিকের স্বপ্ন
শংকর সাহা
সারদা বিদ্যামন্দিরে একনামে তাকে সবাই চেনে। সকলের কাছে সে শুধু ফটিক না সে যেন ফটিক পন্ডিত। স্কুলের হেডমাস্টার একদিন তো ক্লাসে সবাব সামনে বলেই ফেললেন যে ,তিনি যেন ফটিকের মধ্যে শৈশবের ঈশ্বরচন্দ্রের ছায়া দেখতে পান। সে ফটিক ওরফে ফটিক পুরকাইত। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়লেও পড়াশোনার সাথে সাথে বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সে কখনো ভোলেনা। সেইবার স্কুলে যখন বড় বন্যা হয়েছিলো স্কুলের মাস্টার মশাইদের সাথে ফটিকও এগিয়ে এসেছিল অসহায় মানুষদের পাশে। ফটিক বলে,” বাবা বলেছেন মানুষের পাশে থাকলে একদিন ভগবানও পাশে থাকবে । স্কুলের সবাই ভালোবাসলেও নিবারণ বাবুর কাছে ফটিক যেন সন্তান তুল্য। হত দরিদ্র ফটিকের পাশে তনি যেন সবসময়ই থেকেছেন। পিতৃহারা ফটিকের দুচোখে স্বপ্নের আভা দেখেছেন নিবারণ বাবু। সেদিন ক্লাসে যেতেই নিবাবণবাবু অবাক হয়ে যান। আজ ক্লাসটেস্ট আর হাজিরা খাতায় ফটিক অনুপস্থিত।সেই ক্লাসের প্রথম তবুও আজ পরীক্ষার দিনে সে এলোনা। জানালার পাশ দিয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন তিনি। স্কুল ছুটির পরে ফটিকদের বাড়ির উদ্দেশ্যে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে নিবাবণবাবু। যেতেই পথে ঘনার কাছে জানতে পারে ফটিক বাজারে শাঁক বিক্রি করতে গেছে। বাজারে এসে দূর থেকে নিবাবণবাবুর নজরে পড়ে,প্রতিদিন যেখানে বসে তার মা শাঁক বিক্রি করতো সেখানে অল্প কিছু শাঁক নিয়ে বসে আছে সে। কাছে গিয়ে নিবাবণবাবু জিজ্ঞাসা করেন, “কিরে ফটিক আজ স্কুলে এলিনা,আজ যে তোর পরীক্ষা ছিল? “জানি মাস্টার মশাই। তবে আজ যে আমায় শাঁক বিক্রি করতেই হবে” কেন ফটিক? তোর মা আসেননি আজ? “নিবারণ বাবুর দিকে চেয়ে ক্লান্ত চোখে ফটিক বলে, “ তিনদিন ধরে মার খুব জ্বর। শাঁকগুলো বিক্রি করে মার জন্যে ওষুধ কিনতে হবে মাস্টারমশাই” “মাকে খুব ভালোবাসিস না রে ফটিক ?তোকে নিয়ে যে তোর মার খুব স্বপ্ন রে ফটিক? তোকে যে অনেক বড়ো হতে হবে?” ফটিকের দুচোখে অশ্রু ঝরে পড়ে । আকাশে তখন মধ্যগগনে সূর্য। ফটিকের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে নিবারণবাবু । হঠাতই পেছন থেকে একজন এসে বলে, ..” খোকা,ওই শাঁকগুলোর দাম কতো?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct