আপনজন ডেস্ক: তামিলনাড়ুর ত্রিচি জেলার ১৮টি গ্রামে জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ওই সব গ্রামগুলির জমির মালিক তামিলনাডু ওয়াকফ বোর্ড এই দাবি ওঠায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, এই সব গ্রামে হিন্দু ও মুসলিম কোনও সম্প্রদায়ের মানুষই তাদের জমি বিক্রি করতে পারছেন না। বিক্রি করতে গেলে তামিলনাডু ওয়াকফ বোর্ডের ‘নো অবজেকশন’ লাগছে। তাদের সম্মতি ছাড়া বিএলআরও অপিস জমি রেজিস্ট্রি করতে চাইছেন না। তামিলনাডু ওয়াকফ বোর্ডের দাবি, ৩৮৯ একর জমির মালিক তারা। ১৯৫৪ সালে সরকার অনুমোদিত একটি সমীক্ষার পর এই জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল। বিষয়টি প্রথম নজরে আসে যখন মুল্লিকারুপপুর গ্রামের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সি রাজাগোপাল তার জমি বিক্রি করতে যান। নিকটবর্তী আন্দানাল্লুর ব্লকের তিরুচেনথুরাই গ্রামে তার কৃষিজমি রয়েছে। তিনি তার মেয়ের বিয়ের জন্য তার প্রতিবেশীর কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের জন্য জমি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অফিসার তাকে জানান, এর জন্য ওয়াকফ বোর্ডের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) জরুরি। রাজাগোপাল জানান, সাব-রেজিস্ট্রার মুরলী বলেছেন, ওয়াকফ বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী এই দলিলটি নিবন্ধিত হতে পারে না। চেন্নাইয়ের ওয়াকফ বোর্ডের কাছ থেকে একটি নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নেওয়া উচিত। এই কথা শোনার পর আমি প্রায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। রাজাগোপাল জানান, সাব-রেজিস্ট্রার রাজাগোপালকে ২৫০ পাতার ওয়াকফ বোর্ডের চিঠির একটি অনুলিপিও দেখিয়েছিলেন। চিঠিতে ওয়াকফ বোর্ড জানিয়েছে, পুরো গ্রামটি তাদের। এটাও বলা হয়েছে যে, যারা গ্রামে জমির জন্য দলিল নিবন্ধন করতে আসবেন, তাদের কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিতে হবে। এরপর রাজাগোপাল গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা জানালে গোটা গ্রাম উত্তাল হয়ে ওঠে।
এ ব্যাপারে তামিলনাডু ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারপার্সন এম আব্দুল রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘সমাজসেবীরা সাধারণ মানুষের জমি দান করার জন্য ওয়াকফ করে থাকেন। ১৯৫৪ সালে তামিলনাডু সরকার যখন জমি সার্ভে করে, তখন তারা তাদের সমীক্ষা রেকর্ডে এই সকল জমি সমাজসেবীদের দ্বারা ওয়াকফ করা বলে চিহ্নিত করা হয। সেই সার্ভে নম্বরও আছে। নিয়ম মেনে সেই জমি তামলিনাডু ওয়াকফ বোর্ডে নথিভুক্ত হয়। আবদুল রহমানের দাবি, ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে ৩৮৯ একর জমি রয়েছে যা সরকার স্বীকৃত সার্ভেয়ারদের দ্বারা পরিমাপ করা হয়েছিল এবং ১৯৫৪ সালে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছিল। সেই সার্ভে নম্বর বা গ্রামের নাম সহ সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে বিশদ পাঠিয়েছি। রহমান আরও বলেন, আমরা গর্বিত যে ওয়াকফ সম্পত্তি মন্দির ও মন্দিরের পুকুর নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়েছিল। আমরা একজন হিন্দু কৃষকদের কৃষির জন্য ৩০০ একর জমি দিয়েছি। উল্লেখ্য, এই গ্রামে যেমন প্রাচীন মন্দির রয়েছে তেমনি মসজিদ ও দরগাহও রয়েছে। আর সেগুলি যেসব জমির উপর রযেছে সবই ওয়াকফ সম্পত্তি বলে দাবি রহমানের। তিনি আরও বলেন, গ্রামবাসীরা জবরদখল করে কিংবা দীর্ঘদিন ধরে ওয়াকফ জমিতে বসবাস করছে। কিন্তু ওয়াকফ জমি অন্যকে হস্তান্তর করতে ওয়াকফ বোর্ডের অনুমতি দরকার। উল্লেখ্য, তিরুচেনথুরাইয়ে ৭,০০০ টি পরিবার বাস করে। তাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন।এ ব্যাপারে তিরুচেনথুরাইয়ের নাথারশা পাল্লিভাসাল স্ট্রিটের ৫৫ বছর বয়সি এন সৈয়দ জাকির, জানান, তাদের ১৭ একর সম্পত্তি রয়েছে। ছয় প্রজন্মেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছি। এখন আমাদের বাড়ি, দরগা, দোকান যা আছে সমস্ত কিছুই ওয়াকফ বোর্ডের অন্তর্গত। এ নিয়ে বিতর্ক ওঠায় শ্রীরঙ্গমের রাজস্ব জেলা কর্মকর্তা (আরডিও) বৈদ্যনাথন জানান, রাজ্য প্রশাসন এই সমস্যাটির সমাধানের জন্য গ্রামবাসীদের ও ওয়াকফ বোর্ডের সদস্যদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct