ডা. পার্থসারথি মল্লিক
এম.ডি (কন্)
নাসিকা গর্জন সত্যিই বিড়ম্বনার। এর জন্য কত যে সম্পর্ক ভেঙে যায় তার কোনো ইয়ত্তাই নেই। নাসিকা গর্জন শুধু যে নাক ডাকছে তার কাছেই বিড়ম্বনার নয় ওই ব্যক্তির আশপাশে যারা ঘুমোচ্ছে তাদের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সমস্যার। নাসিকা গর্জন সত্যিই বিরক্তিকর আর সমস্যারও বটে। রিপোর্ট বলছে, প্রতি রাতে ৩ জন পুরুষ আর ৪ মহিলা নাক ডাকে। নাক ডাকা যে সত্যিই সমস্যা তা আদৌ সেভাবে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নাক ডাকার সমস্যা বাড়ে। সেদিকে সত্যিই নজর দেওয়া প্রয়োজন। নাক ডাকার পাশাপাশি অনিয়মিত নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের অসুখও বাড়ায় নাক ডাকার সমস্যা। স্লিপ অ্যাপনিয়ায় বন্ধ হয় ফের আপনা আপনি চালু হয়ে যায়।
ওষুধ ছাড়া কীভাবে নাক ডাকার সমস্যা কমাবেন
স্থূলতা বা ওজন বেশি থাকলে নাক ডাকার সমস্যা থাকে। তাই ওজন কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। স্থুলকায় ব্যক্তিদের গলার কাছে অতিরিক্ত টিস্যু আর চর্বি জমতে থাকে। এতে এয়ারওয়ে বা শ্বাসপ্রশ্বাস বাহিত প্যাসেজ কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ওজন কমলে নাক ডাকাও কমে। কোন দিকে ফিরে ঘুমোচ্ছেন তার ওপরও নির্ভর করে নাক ডাকা কমবে কি কমবে না। চিত হয়ে ঘুমালে নাক ডাকা বাড়ে। কারণ এয়ারওয়ের পাশে থাকা টিস্যুকে টেনে ধরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। এয়ারওয়ের প্যাসেজ আরো সরু হয়ে যায়। চিৎ হয়ে শোয়ার সময় জিভ আর সফট প্যালেট গলার পেছন দিকে চলে যায়, এতে ঘুমোনোর সময় একটা ভাইব্রেটিং সাউন্ড তৈরি হয়। ফলে নাক ডাকার পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু যদি পাশ ফিরে শোন তখন নাক ডাকার পরিমাণ কমে যাবে। পাশ ফিরে শুলেও যদি নাক ডাকার সমস্যা না কমে। তা হলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্লিপ আ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত। ন্যাজাল প্যাসেজ বা নাকের ফুটো সব সময় পরিষ্কার রাখবেন। ন্যাজাল প্যাসেজ বন্ধ থাকলে সর্দিতে বাতাস জোরে জোরে চলাচল করে। তাতে নাক ডাকার পরিমাণ বাড়ে। হট অয়েল ম্যাসাজ বা ন্যাজাল অয়েল ড্রপে খুলে যায় বন্ধ নাক। এছাড়া ঘুমোনোর আগে উষ্ণ গরম জলে স্নান করলেও বন্ধ নাক খুলে গিয়ে নাক ডাকার সমস্যা কমে। শরীর আর্দ্র রাখা প্রয়োজন। শারীরিক সুস্থতারম জন্য শরীরকে অবশ্যই আর রাখবেন। পরিমাণমতো জল থাকেন। শরীরে জলের অভাব হলেই নাক আর সফট প্যালেটের নিঃসারণ আঠা হয়ে যায়। নাক দিয়ে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়, বাড়ে নাক ডাকার সমস্যা। পুরুষদের দৈনিক ৩-৪ লিটার জল খাওয়া দরকার। আর মহিলাদের দরকার প্রতিদিন ২-৩ লিটার জল খাওয়া ধূমপান ও মদ্যপান কমাতে হবে নাক ডাকা কমাতে চাইলে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে ইডিমা আর আপার এয়ারওয়ে ফুলে গেলে নাক ডাকার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই ধূমপানের পরিমাণ কমালেই নাক ডাকার সম্ভাবনা কমবে। মদ এয়ারওয়ের পাশে থাকা পেশিকে রিল্যাক্স করে দেয়। তাই যাঁরা সমস্যা বাড়ে।
ঘুমোনোর সময় দীর্ঘক্ষণ
কম্পিউটার বা মোবাইলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাজ করবেন না। এতেও নাক ডাকার সমস্যা বাড়ে। এছাড়া নিয়মিত মাথার বালিশ ও পাশবালিশ বদলান। বিশেষ করে বালিশের ঢাকা কাচুন। বালিশের ঢাকা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ময়লা ও ধুলোবালি জমে। এরা এক ধরনের আ্যালার্জেন বা আযালার্জি তৈরি করে। অ্যালার্জি থেকেও নাক ডাকার সমস্যা হয়। ঘরের সিলিং ফ্যান নিয়মিত পরিষ্কার করুন। নিয়মিত মশারি কাচতে হবে। এসবে বাসা বাঁধে “ডাস্ট মাইট” যার থেকে আ্যালার্জি হয়। এছাড়া যেখানে ঘুমোবেন সেই একই বিছানায় পোষ্যকে নিয়ে শোবেন না। পোষ্যের লোম থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে। তাতে নাক ডাকার সমস্যা বাড়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct