দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলো নিছকই সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। সাধারণত, রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগ নেতা-কর্মী হয় ক্ষমতা ভোগ করেন অথবা ক্ষমতার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন এবং ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে যান। নির্বাচনী ব্যবস্থায় এই দুটি বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে দলের সব মনোযোগ ও শক্তি নির্বাচনের দিকেই নিবদ্ধ থাকে। এ নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ প্রথম কিস্তি।
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার সমন্বয় সমিতি থেকে আমার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে টেলিফোনে প্রশ্ন আসতে শুরু করল, “কী হয়েছে? মোর্চায় বিভেদ তৈরি হল নাকি?” আমি উত্তর দিলাম, “একদমই না। আমি স্বেচ্ছায় সমন্বয় সমিতি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলাম। সেই ইচ্ছার কথা ৪ সেপ্টেম্বরের সভায় উপস্থাপন করা হয়। আমার পরিবর্তে জয় কিষাণ আন্দোলনের সভাপতি অভীক সাহা মোর্চার সমন্বয় সমিতির কাজে যুক্ত থাকবেন। তাছাড়াও আমাদের জয় কিষাণ আন্দোলনও সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার সঙ্গে জুড়ে আছে। একজন সহযোদ্ধা হিসেবে আমি মোর্চার যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সর্বদা প্রস্তুত থাকব। ফোনে আরেক ধরনের প্রশ্ন ছিল, “মোর্চার সঙ্গে যদি কোনো না কোনোভাবে যুক্তই থাকেন, তাহলে সমন্বয় সমিতি ছাড়তে গেলেন কেন? শুনছি আপনিও আসলে কোনো একটা রাজনৈতিক দলের হয়েই কাজ করতে চান?” কেউ কেউ আবার গণমাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে যে আমি নাকি কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছি! আমার এইসব বন্ধুদের প্রতি সোজাসাপ্টা উত্তর, “আমি আজ নতুন নয়, অন্তত বিগত ১০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। আমি সব সময় বলে এসেছি, শুভ যা কিছু, তাকে সত্যে পরিণত করার নামই রাজনীতি। তাই রাজনীতি হচ্ছে আমাদের এই যুগের ধর্ম। দেশকে প্রগতির পথে অগ্রসর করাতে হলে, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই রাজনীতি করতে হবে। আমি স্বরাজ ইন্ডিয়া নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার মতো সৌভাগ্যবান। এখনও পর্যন্ত এই দলে, যেটা কিনা আমার রাজনৈতিক গৃহও বটে, সেখানেই আছি। কংগ্রেস আয়োজিত ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’-কে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত আমার ব্যক্তিগত নয়।
এটা আমার দলের সকল সহযোদ্ধাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। আমার পদত্যাগ সংক্রান্ত এই বক্তব্য এখানে উত্থাপন করার উদ্দেশ্য এটা নয় যে আমি আমার এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি আলোকপাত করতে চাইছি। আসলে এই ছোট্ট উদাহরণটি আমাদের জনজীবনে একটি বড় অসঙ্গতি নির্দেশ করে। আজ আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলো নিছকই সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। সাধারণত, রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগ নেতা-কর্মী হয় ক্ষমতা ভোগ করেন অথবা ক্ষমতার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন এবং ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে যান। নির্বাচনী ব্যবস্থায় এই দুটি বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে দলের সব মনোযোগ ও শক্তি নির্বাচনের দিকেই নিবদ্ধ থাকে। আগে বলা হত রাজনৈতিক দল গঠনে দলীয় কর্মী, দলীয় কর্মসূচী, দলীয় কার্যালয় ও দলীয় তহবিলের মতো চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মুখ্য হয়ে ওঠে। এখন রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমশই ফাঁপা হয়ে যাওয়ায় এই চারটি স্তম্ভ এখন ক্রমশই আবছা হয়ে গেছে। একালে রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল জনসমর্থন আছে, অর্থ ও মিডিয়ার বিশাল নেটওয়ার্ক আছে, নেতাদের দরবার আছে কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তা ও চর্চার বড়ই অভাব। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তাপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার মতো উপযুক্ত কোনো পরিকাঠামো নেই।
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: অতনু সিংহ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct