নিজস্ব প্রতিনিধি, আপনজন: শুক্রবার বিগত বাম জমানায় মঙ্গলকোটের এক বোমা বিস্ফোরণ মামলায় আদালতের রায়ে নির্দোষ হলেন অনুব্রত মন্ডল সহ ১৪ জন। বিধাননগর এমএলএ এমপি আদালতে শুক্রবার এই রায়দান ঘটে। এর আগে এই রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছিল। এদিন অনুব্রত মন্ডল কে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সংশোধনাগার থেকে এই আদালতের এজলাসে আনা হয়।আদালতের এই রায়ে 'উজ্জীবিত' অনুব্রত মন্ডল। শুক্রবার দুপুরে বিধাননগর এমএলএ এমপি আদালতে মঙ্গলকোট হিংসা মামলায় বেকসুর খালাস পান বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। চার্জশিটে নাম থাকা সকলকেই বেকসুর খালাস করল আদালত। মূলত তাদের কারোর বিরুদ্ধে যথাযথ কোন তথ্যপ্রমাণ না থাকার ফলেই এই নির্দেশ দিল বিধাননগর আদালত ।গত ২০১০ সালের ৫ মার্চ মঙ্গলকোটের বোমা বিস্ফোরণ মামলায় চলতি মাসে প্রথম দিকে বিধাননগরের এমপি-এমএলএ আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল।শুক্রবার ওই মামলার রায়দান ঘটে। সেই কারণে এদিন সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ আসানসোল সংশোধনাগার থেকে অনুব্রতকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা।গত ২০১০ সালে মঙ্গলকোটের মল্লিকপুরে বোমা বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণ আহত হন বেশ কয়েকজন। বিস্ফোরণ মামলার চার্জশিটে নাম রয়েছে অনুব্রত মণ্ডল, কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ সহ আরও ১৩ জনের। গত ২০১০ সালে মঙ্গলকোটের সেই বোমা বিস্ফোরণের মামলায় আদালতে গত ১ সেপ্টেম্বর হাজিরা দিয়েছিলেন অনুব্রত সহ আরও ১৪ জন।এদিন সেই মামলায় রায়দান হল। গত ২০১০-এর মঙ্গলকোটে অশান্তি ও খুনের চেষ্টার মামলায় অনুব্রত ছাড়া পুলিশের চার্জশিটে নাম রয়েছে কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ ও তার ভাই নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখের। গত ২০১০ সালের ৫ মার্চ মঙ্গলকোটের লাখুরিয়ার মল্লিকপুর গ্রামে বোমা বিস্ফোরণ হয়। তাতে কেবুলাল শেখ নামে এক ব্যক্তি জখম হয়েছিলেন। এই ঘটনায় চার্জশিট দেয় মঙ্গলকোট থানার পুলিশ । তাতে অনুব্রত মণ্ডল, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনাওয়াজ, নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখ-সহ ১৫ জনের নাম ছিল। অন্যতম অভিযুক্ত আজাদ মুন্সি মারা গেছেন। অন্যান্য অভিযুক্তদের কারোর বিরুদ্ধেই কোন যথাযথ তথ্য প্রমাণ মেলেনি। তাই সবাইকেই বেকসুর খালাস করা হল আদালতের তরফে। গত ১ সেপ্টেম্বর বিধাননগর এমএলএ এমপি আদালতে এক পুরাতন মামলা পেশ করা হয় অনুব্রত মন্ডল সহ ১৪ জন কে। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানায় বিগত বাম জমানায় এক বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ষড়যন্ত্রকারী অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছেন এই ১৫ জন।অভিযুক্তদের মধ্যে কেতুগ্রামের স্থানীয় বিধায়ক সেখ শাহনওয়াজ রয়েছেন। তাই এই মামলা কাটোয়া মহকুমা আদালত থেকে বিধাননগর এমএলএ এমপি আদালতে বদল ঘটেছে। এর আগে রাজনৈতিক হিংসার মামলায় বিধাননগর আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন এই মুহুর্তে জেল হেফাজতে থাকা বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডল ।গত ১ সেপ্টেম্বর এজলাসে বিচারকের সামনে অনুব্রত দাবি করেছিলেনন -'তিনি নির্দোষ'। গত ২০১০ সালের ৫ ই মার্চ ওই মামলায় অভিযুক্ত মোট ১৫ জন ওইদিন আদালতে হাজিরে দিয়েছিলেন। এর আগেকার শুনানিতে অনুব্রতর আইনজীবীকে বিচারক প্রশ্ন করেছিলেন,-'অনুব্রতর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে তাঁর কী বলার আছে?' প্রতুত্তরে অনুব্রতর আইনজীবীর দাবি,-' বিচারকের সামনে অনুব্রত বলেছেন, আমি নির্দোষ। পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে বোমাবাজির ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। ২০১০ সালের ৫ মার্চ মাসে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ ওঠে মঙ্গলকোটে। সেই সময় রাজ্যে ছিল বামেদের শাসন। বোমাবাজির ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েকজন। অনুব্রত-সহ মোট ১৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়। আজাদ মুন্সির রহস্যজন খুন হয়েছিলেন ২০১৪ সালে।বোমা বিস্ফোরণ মামলাটি প্রথমে কাটোয়া মহকুমা আদালতে চলছিল । পরে সেই মামলা চলে যায় বিধাননগর আদালতে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যেই। গত ১ সেপ্টেম্বর তাই স্বশরীরে হাজিরা দেন ১৪ জন।এই মামলায় এখনও পর্যন্ত মোট ১৩ জনের স্বাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সেই স্বাক্ষীরা যে বয়ান দিয়েছেন, তার ওপর ভিত্তি করেই অভিযুক্তদের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল আদালত। সেই কারণেই ওইদিনের শুনানিতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল অভিযুক্তদের।উল্লেখ্য, মঙ্গলকোটের মল্লিকপুর এলাকায় এই বোমা বিস্ফোরণ ঘটার পরেই মধ্যে খুন হয়েছিলেন হাসমত সেখ নামে এক তৃণমূল কর্মী। এই খুনের অভিযোগ উঠে তৎকালীন সিপিএম নেতা ডাবলু আনসারির দলবলের বিরুদ্ধে। সেসময় নিহত তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়। প্রসঙ্গত গত ২০০৮ সালের পর থেকে তৃনমূলের পক্ষে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম - আউশগ্রামের পাশাপাশি মঙ্গলকোট দেখতেন অনুব্রত মন্ডল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct