সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির নাম উচ্চারণ না করে তার ' মন কি বাত' অনুষ্ঠানের নাম 'মন কি ব্যথা' বলে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকারকে রাজনৈতিক নিশানা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি সরকার দেশের রেল থেকে উড়োজাহাজ সহ সব সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে। ওরা বিদেশে অর্থ পাচার করছে। বিজেপির বিরুদ্ধে তাই দলীয় কর্মীদের স্লোগান বেধে দিয়ে মমতা বলেন, এবার আওয়াজ তুলুন, 'বিজেপি এজেন্সি নয়, চাকরি দাও'। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত কর্মীসভা থেকে বৃহস্পতিবার মমতা সাম্প্রতিক কালের ইডি ও সিবিআই তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘দেখানো হচ্ছে, ওর ঘরে এত টাকা পাওয়া গেল। কার টাকা, কিছু প্রমাণ হয়েছে কি? মলয় ফাইট করে বলে দিয়েছে সব মিথ্যা। অনুব্রত মণ্ডল প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ভাবছেন, ওকে জেলে পুরে বীরভূমের দুটো আসন জিতে নেবেন? সে গুড়ে বালি।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘সিবিআই ও ইডি চব্যচোষ্য খেয়ে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ল। মলয়, ববি, অরূপ। অভিষেকের দু’বছরের বাচ্চাটাও ঘুরে এসেছে। কী দেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি! রাজনীতিতে লড়াই করো, দেখে নিচ্ছি। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ২০২১ সালে কী না করেননি! আমার পা ভেঙে চৌচির করে দিয়েছিল। এখনও ঠিক হয়নি। ভাবছে, কয়েক জনকে জেলে ঢুকিয়ে দিলে সবাই ভয় পেয়ে যাবে। নিহত সিংহ থেকে আহত সিংহ কিন্তু বেশি ভয়ঙ্কর। আমাকে চমকালে আমি ধমকাই। ধমকালে গর্জাই। কলকাতায় ‘নতুন তৃণমূল’ হোর্ডিং পড়ার পরেও জোর চর্চা শুরু হয় বিরোধী শিবিরে। পরে উত্তর কলকাতায় এমন হোর্ডিং দেখা যায়, যেখানে লেখা ছিল, ‘পুরাতনই ভিত্তি, নতুনই ভবিষ্যৎ’। এটা নিয়েও বিরোধীরা ‘পিসি-ভাইপো’ লড়াইয়ের দাবি তোলে। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের কর্মী সম্মেলনে এ নিয়ে যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তিনি জানালেন, এ সবই বিরোধীদের চক্রান্ত।বৃহস্পতিবার প্রথমে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার পরে মঞ্চে ওঠেন মমতা।
তিনি বলেন, ‘‘কখনও শতাব্দীর সঙ্গে লাগিয়ে দিচ্ছে কেষ্টকে। আবার আমার সঙ্গে অভিষেকের লাগিয়ে দিচ্ছে।’’ তিনি বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করে দেন যে, দলে কারও সঙ্গে কারও লড়াই নেই। অভিষেকের বক্তব্যেও সেই ছোঁয়া ছিল। অভিষেক বলেন, ‘‘এই দলে কোনও লবি নেই। একটাই লবি। মমতার লবি। যিনি বুক চিতিয়ে লড়াই করবেন, বলবেন মমতা জিন্দাবাদ, তাঁকে দল সম্মান দেবে।’’’’মমতার অভিযোগ, তাঁকে ‘আন্ডার সেক্রেটারি’ পর্যায়ের কোনও আমলা কেন্দ্রের পক্ষে রেড রোডের নেতাজির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান। সে কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘আমাকে একটা চিঠি দিয়েছে আন্ডার সেক্রেটারি। বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ৭টায় উদ্বোধন করবেন, ৬টায় আপনি উপস্থিত থাকবেন। বন্ডেড লেবার নই। এখানে আসার আগেই নেতাজির মূর্তিতে মালা দিয়ে এলাম।’’গত সোমবার ভারত সফরে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সফরে মোদীর সঙ্গে হাসিনার বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কেন ডাকা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কিছু বলতে চাই না। হাসিনার সঙ্গে আমার সঙ্গে সম্পর্ক খুব ভাল। এই প্রথম দেখলাম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এলেন কিন্তু বাংলা বাদ।’’ হাসিনার সঙ্গে যে তাঁর পুজো বা ইদের উৎসবে উপহার দেওয়ার সম্পর্কে তা উল্লেখ করে মমতা দিল্লির বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘এত রাগটা কিসের? এত গুস্সা কিঁউ? বড়া বড়া বাবু লোগো কো ইতনা গুস্সা কিউ হ্যায়!’’ এর পরে অতীতের কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে মমতা অভিযোগ তোলেন, শিকাগো থেকে আমন্ত্রণ পেলেও তাঁকে আটকে দেয় কেন্দ্র। চিনে যেতে দেয়নি। এ নিয়ে তাঁর যে কোনও আক্ষেপ নেই তা বুঝিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বাংলায় ঘুরলেই সারা বিশ্বে ঘোরা হয়ে যাবে।’’নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত ‘কর্তব্য পথ’-এর উদ্বোধন করেন বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির আবরণ উন্মোচন হয়। ইন্ডিয়া গেটের সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ভার্চুয়াল মাধ্যমে থাকার অনুরোধ করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে। তবে মমতা ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন না। সে কথা বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের কর্মী সম্মেলনে স্পষ্ট করে দেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি কারও বন্ডেড লেবার নই।’’মমতার অভিযোগ, তাঁকে ‘আন্ডার সেক্রেটারি’ পর্যায়ের কোনও আমলা কেন্দ্রের পক্ষে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান। সে কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘আমাকে একটা চিঠি দিয়েছে আন্ডার সেক্রেটারি। বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ৭টায় উদ্বোধন করবেন, ৬টায় আপনি উপস্থিত থাকবেন। বন্ডেড লেবার নই। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম আসার আগেই নেতাজির মূর্তিতে মালা দিয়ে এলাম।’’ কেন্দ্রে থাকা বিজেপি সরকার ২০২৪ সালে টাটা বাই বাই হয়ে যাবে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই দাবি তুলে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড সহ পাঁচটি রাজ্যে বিজেপি আগামী লোকসভা নির্বাচনে কুপোকাত হবে ।আর সেই খেলা শুরু হবে বাংলা থেকে।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সমাবেশ থেকে আরও একবার প্রিয় ‘কেষ্ট’র পাশে থাকার বার্তা দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে সিবিআই, ইডি সহ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেন মমতা। অনুব্রত মণ্ডল প্রসঙ্গে মমতা এদিন বলেন, “বেচারা কেষ্টর নিজেরই শরীর খারাপ। বগটুইয়ের ঘটনার সময়ও কেষ্টকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে ওঁকে নজরবন্দি করে রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে কি কেষ্টকে আটকানো সম্ভব হয়েছে? ভাবছেন কেষ্টকে জেলে বন্দি করে রেখে লোকসভার দুটি আসন দখল করবেন? সে গুড়ে বালি।” এরপরই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নেতাজি ইন্ডোরে উপস্থিত বীরভূম জেলার দলীয় ব্লক সভাপতিদের উঠে দাঁড়াত বলেন মমতা। এমনকী বীরভূম থেকে আসা দলীয় কর্মীদের উঠে দাঁড়াতে বলেন তিনি। তাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “কেষ্ট যতদিন ফিরে না আসছে, লড়াই আরও তিনগুণ বাড়বে। বীরের সম্মান দিয়ে কেষ্টকে জেল থেকে বের করে আনতে হবে। এই মানসিকতা নিয়ে তৈরি থাকুন। এদিন নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে বলতে শোনা যায়, যাকে খুশি জেলে ভরুন।আর জেলে নিয়ে গেলে কোন চিন্তা নেই ।ওখানে যে ভাত খাবেন সেই চালটাও আমরা (রাজ্য সরকার) দিই। নিশ্চিন্তে ওখানে বসে খাওয়া-দাওয়া করবেন। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের বুথকর্মী সম্মেলনে মমতার ধমক খেতে হয় সাংসদ মহুয়াকে। বক্তৃতা করার সময়েই মমতার নজর পড়ে মহুয়ার দিকে। তখনই তিনি বলেন, ‘‘করিমপুর আর মহুয়ার জায়গা নয়। ওটা আবু তাহেরের জায়গা। উনি দেখে নেবেন। তুমি তোমার লোকসভা নিয়ে থাকো।’’ প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে প্রথমবার করিমপুর থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন মহুয়া। কিন্তু ২০১৯ সালে তাঁকে তাপস পালের বদলে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে প্রার্থী করে তৃণমূল। ভোটে জিতে নিজের বিধায়কপদ ছেড়েও দেন মহুয়া। ওই আসনে উপনির্বাচনে জেতেন বিমলেন্দু সিংহ।এ বার সাংগঠনিক এলাকা ভাগ নিয়েই মহুয়াকে ধমক দিলেন মমতা। জানিয়ে দিলেন, নিজের লোকসভা এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে কৃষ্ণনগরের সাংসদকে। দলের কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, মানুষের পাশে থাকুন। মানুষের জন্য কাজ করুন। কোন কারনে নিজের ব্যক্তি স্বার্থ দেখবেন না ।জানি অধিকাংশ কাউন্সিলার ভালো কাজ করেন। কিন্তু কিছু কিছু কাউন্সিলার কে নিয়ে অভিযোগ আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই ধরনের অভিযোগ এলে প্রথমে এক দুবার সাবধান করব। তাতে যদি নিজেকে সংশোধন করতে পারেন ভালো, না হলে একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনি ঘেচাং ফুক হয়ে গিয়েছেন। নেত্রীর মুখে এই বক্তব্য শোনার পর করতালিতে ফেটে পড়ে গোটা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম। পুজোর সময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকার পাশাপাশি এজেন্সি ইস্যুতে দলীয় কর্মীদের সতর্ক থাকতে এবং জেলা পরিষদ থেকে পঞ্চায়েত কর্মী নেতা ও প্রধানদের অতি দ্রুত জমে থাকা কাজ শেষ করার বার্তা দেন দলনেত্রী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct