সম্প্রীতি মোল্লা, আসানসোল, আপনজন: বৃহস্পতিবার দুপুরে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল আদালতে পেশ করা হয় চিটফান্ড মামলায় অভিযুক্ত রাজু সাহানি। এদিন তাঁর ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজুর জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। সিবিআইয়ের আইনজীবী সেই আবেদনের পাল্টা বিরোধিতা করেন।রাজুর হয়ে যে কোনও শর্তে জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবীরা। আইনজীবীরা সওয়ালে বিচারককে এদিন এজলাসে বলেন, - 'বর্ধমান সন্মার্গের সঙ্গে রাজু সাহানির সরাসরি যোগ রয়েছে, এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি সিবিআই। রাজু একজন ব্যবসায়ী। তাঁর কাছে ওই পরিমাণ টাকা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মুখ্য অভিযুক্তদের জামিন হয়ে গিয়েছে। তাঁরা বাইরে ঘুরছেন। তাঁরা প্রমাণ নষ্ট করতে পারছেন না, তা হলে রাজু কী করে প্রমাণ নষ্ট করবেন?'এরপর প্রতুত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন - , 'হংকং, তাইল্যান্ড ও ব্যাঙ্ককে রাজুর তিনটি সংস্থার হদিস মিলেছে। তাইল্যান্ডে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও রয়েছে সৌম্যরূপ ভৌমিকের ঘনিষ্ঠ এক জনের নামে। রাজুর সহযোগিতা নিয়েই ওই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে সিবিআই জানতে পেরেছে।তদন্তে দেখা গিয়েছে, সৌম্যরূপ ফেরার থাকাকালীন রাজুর বাড়িতেই আত্মগোপন করে ছিলেন। মোবাইল টাওয়ার লোকেশন-সহ আরও কিছু তথ্য সিবিআইয়ের হাতে এসেছে।' এই অবস্থায় রাজুকে জামিন দিলে তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজুকে জেল হেফাজতে দেওয়ার আবেদন জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী । আদালত দু'পক্ষের সওয়াল, জবাব শোনার পর রাজুকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।গত শনিবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল আদালতে পেশ করা হয়েছিল হালিশহর পুর চেয়ারম্যান রাজু সাহানি কে।ওইদিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আবেদন কে মান্যতা দিয়ে ৫ দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ জারি করেছিল আসানসোল আদালত।চিটফান্ড কান্ডে গত শুক্রবার সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাজু সাহানি। ওইদিন ধৃত কে আসানসোল আদালতে তোলা হয়েছিল। এদিন অর্থাৎ ৮ ই সেপ্টেম্বর পুনরায় ধৃত কে তোলা হয় আসানসোল আদালতে। গ শনিবার আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী এজলাসে জানিয়েছিলেন , -' জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় কোন রকম সহযোগিতা করেন নি রাজু সাহানি। যে কারণে তাঁকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে'।পাশাপাশি , ধৃতের আইনজীবীর দাবি, -' রাজু সাহানির পরিবারের সকলেই ব্যবসা করেন। তাই তাঁদের বাড়িতে ওই টাকা থাকা অবাক হওয়ার কিছু নয়'। ৮ সেপ্টেম্বর ফের আদালতে তোলা হয় ধৃত কে । গত শুক্রবার হালিশহর পুর চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে নগদ ৮০ লক্ষ টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ উদ্ধারের পর রাজু সাহানিকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ।শুক্রবার রাতেই তাঁকে কলকাতায় নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসা হয়। এরপর শনিবার ভোরে সেখান থেকে রাজুকে আসানসোলের উদ্দেশ্যে আনা হয়।গাড়িতে তোলার আগে অবশ্য রাজু দাবি করেছিলেন,-'চিটফান্ডের সঙ্গে আমি যুক্ত নই। শীঘ্রই আপনারা সব বুঝতে পারবেন।' এর পাশাপাশি নগদ টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধারের ঘটনাকে 'ভুল' বলেও দাবি করেন রাজু। এরপর শনিবার আসানসোল আদালতে তোলা হয় হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যানকে। সওয়াল জবাব শেষে ৫ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।জানা গেছে,অংশুমান রায় দায়িত্ব ছাড়ার পর হালিশহর পুরসভার মুখ্য প্রশাসক হয়েছিলেন রাজু সাহানি । এবার পুরভোটের পর পুরচেয়ারম্যান হন। তার আগে থেকেই অবশ্য সিবিআই চিটফান্ড মামলায় রাজু সাহানির উপর নজরদারি চালাচ্ছিল বলে প্রকাশ । 'বর্ধমান সন্মার্গ ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন' নামে ওই চিটফান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ দায়ের হয় গত ২০১৪ সালে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার কুলটি থানায় অভিযোগ জমা পড়েছিল। কোটি কোটি টাকা তছরূপের ঘটনায় ২০১৮ সালে সিবিআই তদন্ত শুরু করে থাকে । চার্জশিটও জমা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গত বছর ১২ ডিসেম্বর তৃণমূল নেতা তথা বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। যদিও বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত। এই মামলাতেই এবার সিবিআইয়ের জালে পড়লেন রাজু সাহানি ।একদা দাপুটে সিপিএম নেতা তথা কাউন্সিলর লক্ষ্মণ সাহানির ছেলে রাজু সাহানি । হালিশহরের লালকুঠিতে তাঁর পৈতৃক বাড়ি। লোহার ছাঁট এবং পাটের ব্যবসা করতেন। তবে মাত্র কয়েক বছরেই নাকি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান রাজু ৬। হালিশহরে গঙ্গার ধারে হাইনেস্ট গেস্ট হাউস, নিউটাউনে ফ্ল্যাট এবং সিটি সেন্টারের কাছে বাড়িও রয়েছে। তাঁর বাড়ি থেকে সিবিআই ৮০ লক্ষ টাকা, প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পত্তির দলিল, থাইল্যান্ডে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে সিবিআই । ৮ সেপ্টেম্বর অবধি সিবিআই হেফাজতে ছিলেন রাজু সাহানি। এবার ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে রাজু সাহানির।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct