এম মেহেদি সানি, আপনজন: সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এ অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে আল আমীন মিশন। আল আমীন মিশন থেকে এ বছরেও পাঁচশোরও বেশি ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাবেন বলে তাদের রেজাল্ট বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন আল আমীন মিশনের কর্ণধার। এ বিষয়ে আল আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৩৬ বছর আগে ১৯৮৭ সালে আল আমীন মিশন তাদের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ডাক্তারি কোচিং শুরু করে। সবচেয়ে বড় সাফল্য এ বছর পেলাম। এবছর নিট-এ ৬০০ ও তার বেশি নাম্বার পাওয়া আল আমীন মিশনের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দুশোর উপর হতে চলেছে। মেডিক্যালে যারা ভর্তি হবে আল আমীন মিশনের ছাত্রছাত্রীদের সেই সংখ্যাটা পাঁচশোর উপরে। অাগে এক বছরে পাঁচশো ছাত্রছাত্রী এখান থেকে ডাক্তারিতে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু এ বছরে তার থেকে বেশি। আর এদের বেশিরভাগই একেবারেই গ্রামগঞ্জে থেকে আসে। সারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এরা উঠে আসছে। এটা দেখে বোঝা যায়, চেষ্টা করলে, সাধনা করলে, লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই। এই সাফল্যে আল আমীন মিশনের পরিবার দারুণভাবে আনন্দিত। কিন্তু যাদের জন্য এই সাফল্য সেই ছাত্রছাত্রীদের আল আমীনের তরফ থেকে অশেষ মুবারকবাদ। সেই সঙ্গে আল আমীনের যেসব িশক্ষক, শিক্ষক কর্মী কিংবা মিশনের সঙ্গে যুক্তরা তাদেরকে আগলে রেখে মনিটরিং করেছেন তাদেরকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
নুরুল ইসলাম আরও জানান, পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি অবধি আল আমীন মিশনের প্রায় ৭২টি ক্যাম্পাস আছে। দ্বাদশ শ্রেণির ক্যম্পাস থেকে নিট প্রশিক্ষণের পর তারা সাফল্য পেয়ে আসছে তেমনি চলতি বছরের ছাত্রছাত্রীরাও সাফল্য পাচ্ছে। এ বছর বেশি সাফল্য পাওয়া গেছে। তাদেরকে একেবারে একাদশ শ্রেণি থেকেই তৈরি করা হয়েছে। ধারাবািহকভাবে তাদের এই সাফল্য। আগামীতে আরও বেশি সাফল্য পাবে বলে আশা রাখেন নুরুল ইসলাম।
এ বছরে নিট-এ আল আমীন থেকে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন যারা তাদের মধ্যে অনাবাসিক ও আবাসিক উভয় ক্ষেত্রের পড়ুয়ারা রয়েছেন। আল আমীন মিশনের অনাবাসিক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন কুশঙ্কুর ভৌমিক। নিট-এ ৭২০ নম্বরে মধ্যে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৬। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তার স্থান ৪২৭। তবে, মিশনের আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন কোচবিহারের তুফানগঞ্জের দেওচরাই গ্রামের বাসিন্দা প্রান্তিক চাষি আবদুল সোবহানের পুত্র ইরফান হাবিব। ইরফান হাবিব নিট-এ এ বছর ৬৮৫ নম্বর পেয়েছে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তার স্থান ৫৯৪। এছাড়া, আল আমীন মিশনের বহু পড়ুয়া ৬৫০-এর বেশি নম্বর পেয়েছেন নিট-এ। আর আল আমীন মিশনের ছাত্রীদের মধ্যে উজ্জ্বল ফল করেছেন আখতারা পারভিন। বীরভূম জেলার মুরারই থানার বাসিন্দা আল আমীন মিশনের এই ছাত্রী ২০১৫ সালে আল আমীন মিশনের খলতপুর ক্যাম্পাসে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সেখানেই পড়াশুনা করছেন। আখতারি বলেন, মাধ্যমিকে ৯৬ শতাংশ ও উচ্চমাধ্যমিকে ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছি। লকডাউনে বাড়িতে থাকায় প্রস্তুতি নিতে না পারায় নিট-এ মাত্র ৪৮০ নম্বর পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর আল আমীন মিশনের সহযোগিতায় ৬৫৩ নম্বর পেয়েছি। অল ইন্ডিয়ায় স্থান ৩৯১৫। এই ক্যাম্পাসে মেয়েদের সুপার সোনালি ম্যাডাম (নুরুল ইসলামের কন্যা) যাবতীয়ভাবে সহায়তা দিয়েছেন। সেক্রেটারি স্যর এসে আমাদের সঙ্গে বন্ধুসলভ ব্যবহার করে উৎসাহ দিতেন ডাক্তার হওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে শিক্ষকরাও তো আছেন।
আর এক কৃতী ছাত্রী স্বগুপ্তা ফিরোজ। বাবা সেখ ইসমাইল ফিরোজ। ২০২১ সালে আল আমীন মিশনে নিট পরীক্ষার কোচিংয়ে যোগ দেন। নিট-এ তার নাম্বার হয়েছে ৬০৬। স্বগুপ্তা জানান, উলুবেড়িয়া ক্যাম্পাসে পড়াশুনা করেছি। তবে একটা ব্যাপার ইচ্ছা থাকলে সফল হওয়া যাবে। কিন্তু শুধু একটা বিষয় ভাবতে হবে, একটা অপশন ভাবতে হবে যে আমাকে নিট পেতে হবে। তাহলেই সাফল্য আসবে। তার এই সাফল্যে সম্পাদক নুরুল ইসলাম সহ আল আমীন পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তবে, নিট-এ পড়ুয়াদের এই সাফল্যে আল আমীন মিশনে এখন উৎসবের মেজাজ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct