সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বাগুইআটি-কাণ্ডে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই ছাত্র খুনের ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মাললবর সামনেই বুধবার তিনি ভর্ৎসনা করলেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকারকে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্তে ‘অবহেলা’ হয়েছে বলেও ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের মুখ্য সচিব জানান, বাগুইহাটি জোড়া ছাত্র খুনের ঘটনায় থানার আইসি কল্লোল ঘোষ এবং তদন্তকারী অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে । পুলিশি তদন্তে স্বয়ং পুলিশমন্ত্রী মমতা ‘দায়সারা মনোভাব’ দেখছেন বলে প্রশাসনিক বৈঠক সূত্রে খবর। এ কথা তিনি সরাসরি জানিয়েছেনও পুলিশকর্তাদের। কেন বাগুইআটি থানার ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করাই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা নিয়েও প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার নবান্নে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বিধান নগর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিমও উপস্থিত ছিলেন। গোটা ঘটনার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সেই বৈঠকে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সুপ্রতিমকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন সিআইডির মিসিং স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হল না?’’ বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে তিনি স্পষ্ট বলেন, ওই ঘটনার তদন্তে ‘‘অবহেলা হয়েছে।’’ মমতার প্রশ্ন, ‘‘সমন্বয় নেই কেন? কেন এত দায়সারা মনোভাব?’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই জোড়া ছাত্র খুনের ঘটনা তদন্ত সিআইডিকে দেওয়া হয়।বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্র অতনু দে এবং অভিষেক নস্কর। পুলিশ সূত্রে খবর, দুই স্কুল পড়ুয়া নিখোঁজ হয় গত ২২ অগস্ট। দু’দিন তাদের কোনও খোঁজ না পেয়ে বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানায় পরিবার। পরিবারের অভিযোগ ছিল, দু’জনকেই অপহরণ করা হয়েছে। পুলিশের কাছে অতনুর বাবা অভিযোগ করেন, তিনি মুক্তিপণ চেয়ে ‘মেসেজ’ পেয়েছিলেন। অপহরণকারীরা বার বার মুক্তিপণের অঙ্ক বদলায় বলেও অভিযোগ। এর প্রায় ১৩ দিন পর মঙ্গলবার বসিরহাট পুলিশ জেলা থেকে উদ্ধার হয় অতনু এবং অভিষেকের দেহ। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে সত্যেন্দ্র চৌধুরি নামে এক ব্যক্তি ওই দু’জনকে খুন করেছে। অতনুর পরিবারের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক ওই সত্যেন্দ্রর। পুলিশ ওই কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে অধরা সত্যেন্দ্র এবং আরও এক জন। তাঁর পরিচয় পুলিশ অবশ্য বলতে নারাজ।কিন্তু ওই কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবার। পুলিশ আরও আগে ‘সক্রিয়’ হলে হত্যা ঠেকানো যেত বলে মত নিহত দুই ছাত্রের পরিবারের। এই বিতর্কের প্রেক্ষিতেই বুধবার দুপুরে বাগুইআটি থানার আইসি কল্লোল ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর তাঁর কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে খবর মিলেছে। বাগুইআটি থানার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বাগুইহাটি থানার কর্তব্যরত আইসি কল্লোল ঘোষের বিরুদ্ধে সরব হন। বুধবার সন্ধ্যায় নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হোন রাজ্যের মুখ্য সচিব হরে কৃষ্ণ দ্বিবেদী । তিনি বলেন, বাগুইআটিতে জোড়া ছাত্র খুনের ঘটনায় একজন সিনিয়র অফিসার কে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । এর পাশাপাশি এই খুনের ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে । একই সঙ্গে গাফিলতির অভিযোগে বাগুইহাটি থানার আইসি কল্লোল ঘোষ এবং এই খুনের ঘটনাতে যিনি তদন্তকারী অফিসার ছিলেন, সেই দু’জনকেই সাসপেন্ড করা হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct