বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে শুরুতেই বলতে হয়, লম্বা সময় ধরে কোভিড ভুগিয়েছে আমাদের। ক্ষুদ্রকায় এ ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে গিয়ে নাকাল হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ। সর্বত্রই দুর্দশার চিত্র দৃশ্যমান এখনও। আমার মতে, এ সকল পুরোনো দুঃসংবাদের মধ্যে কিছু ভালো খবর আছে। কোভিড প্রশ্নে আজকের দিনে স্বস্তির বিষয় হলো এই যে, ‘অবস্থা এখন অনেকটাই উত্তরণের পথে’। তবুও এখন মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর হয়নি। এ নিয়ে লিখেছেন ড্যানি অল্টম্যান। আজ প্রথম কিস্তি।
দীর্ঘ সময় ধরে করোনা ভাইরাস এবং এর দ্বারা আক্রান্ত রোগের ওপর (কোভিড-১৯) ইমিউনোলজি (রোগ প্রতিরোধ বিদ্যা) নিয়ে কাজ করে আসছি আমি। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আমি ভালো করেই জানি যে, আসন্ন শরত্কালকে সামনে রেখে ও শিক্ষাকার্যক্রমে পুরোদমে ফিরে আসার প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে আরও বেশি কোভিড বিভ্রান্তির (কোভিড মহামারি ঠিক কবে দূর হবে এবং এর নির্দিষ্ট চিকিত্সা বা ঔষুধ-পথ্য কি, তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা) মুখোমুখি ব্রিটেন। একই ধরনের বিভ্রান্তিতে আছে আক্রান্ত প্রতিটি দেশ, এলাকা। সবার মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন—সামনের দিনগুলোতে কি ঘটতে যাচ্ছে? নতুন করে কি কিছু ঘটতে যাচ্ছে? কোভিড কি শেষ হয়ে গেল? নাকি ‘বড় বিপদ’ হয়ে ধেয়ে আসবে আবারো? এবং যদি আবারো ফিরেই আসে, তবে করোনা মহামারির শেষ কোথায়? এর থেকে পরিত্রাণ মিলবে কবে? বলা বাহুল্য হবে, কোভিড নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত কথা বলে যাচ্ছি। কাজ করছি। অবিরত লিখে যাচ্ছি। ক্লান্ত স্বরে লাগাতার বলে যাচ্ছি। কিন্তু মোটাদাগে একটি প্রশ্নই শুনতে হচ্ছে বার বার—উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা কাটবে কবে, নাকি অপেক্ষা করতে হবে আরও লম্বা সময়? বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে শুরুতেই বলতে হয়, লম্বা সময় ধরে কোভিড ভুগিয়েছে আমাদের। ক্ষুদ্রকায় এ ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে গিয়ে নাকাল হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ। সর্বত্রই দুর্দশার চিত্র দৃশ্যমান এখনও। আমার মতে, এ সকল পুরোনো দুঃসংবাদের মধ্যে কিছু ভালো খবর আছে। কোভিড প্রশ্নে আজকের দিনে স্বস্তির বিষয় হলো এই যে, ‘অবস্থা এখন অনেকটাই উত্তরণের পথে’। বিশেষ করে, লং কোভিডের (করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার পরও নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতাকে লং কোভিড সিনড্রোম বলা হয়)’ ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি করেছি আমরা। গত কয়েক মাস ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার পর ‘অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স ডেটা’ তুলে ধরেছে এক পরিসংখ্যান, যাতে দেখা গেছে—লং কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। মে মাসে লং কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ লাখ। সেখান থেকে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে এখন তা ১৮ লাখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি মনে করি, এর অর্থ হচ্ছে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন অনেকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার পর আবারও আক্রান্ত হয়ে পড়েন অনেকে। নতুন করে আক্রান্তের কারণে ভুগতে থাকেন নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতায়। অনেকের বুক ধড়ফড়ানি, অবসন্নতা, দুর্বলতা, কাশি, কিংবা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বলা যায়, অবস্থা বেশ বেগতিক হয়ে পড়ে অনেক ক্ষেত্রে। এমনকি কেউ কেউ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েন যে হাঁটাচলা পর্যন্ত করতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া। নতুন করে তথা পুনঃ পুনঃ আক্রান্তের বিষয়টি ভালো কোনো লক্ষণ নয় মোটেও।
মনে রাখতে হবে, ওমিক্রন (করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন) সংক্রমণের মধ্যেও এটা স্পষ্টভাবে দেখা গেছে যে, লং কোভিড থেকে সেরে উঠছেন বহু রোগী। অর্থাত্ ওমিক্রনের প্রকোপ বৃদ্ধির মধ্যেও লং কোভিড থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী। এ কথা মানতেই হবে, ওমিক্রনের আবির্ভাবে চরমভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আক্রান্ত কিংবা সুস্থ ব্যক্তিরাও। চরম উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় পড়েন প্রতিটি মানুষ। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। লং কোভিডের নতুন কেস (সংক্রমিত রোগী) কমে এসেছে। আমার সিঙ্গাপুরের সহকর্মীদের থেকে জেনেছি, কোভিড মহামারির প্রাথমিক ধাক্কার পর ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও লং কোভিড থেকে সেরে উঠেছে মানুষ। লং কোভিড খুব একটা প্রকোপ ছড়াতে পারেনি দেশটিতে। ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোর বেডে রোগী নেই। কিছু জায়গায় থাকলেও তার পরিমাণ অনেক কম। অনেকটা শান্ত হয়ে হয়ে এসেছে এক সময়ে কোভিড আক্রান্ত রোগীতে গিজগিজ করা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। এটি অনেক বড় সুসংবাদ যে, লং কোভিডের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করেছি আমরা, যার ফলে দিনদিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে—কোভিডকে মোকাবিলা করতে পারছি আমরা (যদিও বিপদ কাটেনি এখনও!)। বিশেষ করে, লং কোভিডকে থামানো গেছে। প্রকৃত অর্থেই, লং কোভিডকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে, বিশ্লেষণ করে এর বিরুদ্ধে ঠিকঠাক চিকিত্সা ব্যবস্থা প্রণয়নের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা—তথ্য-উপাত্ত সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এ কথা না বললেই নয়, সারা বিশ্বে ব্যাপক গবেষণা করা হয়েছে, হচ্ছে। এ সকল গবেষণাকর্ম সম্পাদন করতে গিয়ে ‘দ্রত সেরে ওঠা’ রোগীর কেসের সঙ্গে লং কোভিডে আক্রান্ত রোগীর কেস তথা আক্রান্তের ধরন-ধারণ ও উপসর্গ মিলিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ তৈরি করা হয়। যারা কোভিড থেকে দ্রুত কিংবা সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেছেন তাদের কেসগুলোকে বিশ্লেষণ করে মিলিয়ে দেখা হয়। অ্যান্টিবডি, হরমোন, ইমিউন সেল ও অন্যান্য স্তরের পার্থক্য খুঁজে বের করা হয়, যাতে করে সাধারণ আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে লং কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যগুলোকে মিলিয়ে দেখা সহজ হয়। রক্ত পরীক্ষার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় কেস স্টাডিগুলোতে। ‘বায়োমার্কারের (রক্ত, শরীরের অন্যান্য তরল বা টিস্যুতে পাওয়া একটি জৈবিক অণু যা একটি স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া বা একটি অবস্থা বা রোগের চিহ্ন) মতো বিষয়গুলো গেম-চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে আগামী সময়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct