প্রিম্যাচিওর শিশুদের অধিকাংশ কারও সঙ্গে মিশতে পারে না
ডা. পার্থসারথি মল্লিক (এম.ডি (কল)
সন্তান যদি সময়ের আগে জন্মায় তাহলে তাকে বলা হয় প্রিম্যাচিওর বেবি, তাদের নানারকম যত্রআত্তিতে রাখতে হয়। তবে সদ্য হওয়া একটি সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা গিয়েছে যে প্রিম্যাচিওর বাচ্চাদের ছোটবেলায় খুব অল্প বন্ধু থাকে এবং তারা সামাজিক মেলামেশায় খুব কম সময় ব্যয় করে। কিন্তু এইসব বাচ্চারা বড় হয়ে যখন স্কুলে যায়, তখন একপাশে চুপচাপ বসে না। সহৃদয় শিক্ষক ও সমবয়সিরা অনেকসময়েই তাদের দিকে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ার উইকের অধ্যাপক ডায়েটার ওক্ষের মতামত এ-বিষয়ে প্রণিধানযোগ্য। তার মতামত হল, “ছোটবেলায় বন্ধুবান্ধব থাকা, তাদের সঙ্গে খোলধুলো করা এবং সকলের কাছে গুহণযোগ্যতা থাকাটা প্রিম্যাচিওর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুব দরকার । কেন না জন্মগত কারণেই এদের মস্তিষ্কের গঠন বা চিন্তাশক্তি এমন হয় যে এরা সকলের সঙ্গে চট করে মিশতে পারে না। সামাজিক দিক থেকে সকলের সাহায্য দরকার, যা এই বাচ্চাগুলোকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
তিনি আরও জানান, “যেসব বাচ্চার হাতেগোনা বন্ধুসংখ্যা, বা এক-দুজন ছাড়া বন্ধু নেই বললেই চলে, তারা যদি সমাজে চারপাশের লোকজনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব না পায়, এবং কেউ তাদের গোটানো মনোভাবের জন্য তুরে সরিয়ে রাখে তাহলে তাদের মধ্যে আরও বেশি করে চেপে বসে একাকীত্ব। “দ্য জার্নাল অব পেডিয়াট্রিক্স” সাময়িকীতে এই নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। এর জন্য প্রায় হাজারখানেক বাচ্চার উপর পর্যবেক্ষক তথা মনোবিদরা পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। এইসকল বাচ্চাদের মধ্যে ১৭৯ জন প্রিম্যাচিওর বেবি (গর্ভাবস্থার ৩২ সপ্তাহের আগেই জন্মগ্রহণ করেছে), ৭৩৭ জন প্রিম্যাচিওর হলেও খুব একটা আগে জন্মায়নি (গর্ভাবস্থার ৩২-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে জন্মেছে) এবং বাকি ২৩১ জন সুস্থ বাচ্চা যারা নির্দিষ্ট সময়েই জন্মেছে (৩৭-৪১ সপ্তাহের গর্ভাবস্থার মধ্যে)। গবেষকরা এইসব বাচ্চা ও তাদের অভিভাবকদের জিজ্ঞেস করেছিলেন যে সেই বাচ্চাদের কতজন বন্ধু আছে, কতটা গ্যাপে সেইসব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। এমনকী ছবি এঁকে অভিভাবক ও বাচ্চাদের বোঝাতে কীরকম অনুভূতি হয়। যারা সময়ের কিছুটা আগে জন্মেছিল সেইসব বাচ্চাদের গড়ে চারজন ও সঠিক সময়ে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের গড়ে পাঁচ থেকে ছয়জন বন্ধু আছে, গবেষণার শেষে দেখা গেছে। এইসব বাচ্চাদের গড় বয়স ছিল ছয় বছর। এইসব প্রি ম্যাচিওর বাচ্চাদের কখনও স্কুলে দেরি করে দেওয়া উচিত না। আরও একটু বহির্মুখী হোক, কথা বলুক, তারপর স্কুলে যাবে, তা না ভেবে সময়মতো স্কুলে দিলে সামাজিক মেলামেশা ও চেনাপরিচিতর গণ্ডি বাড়ে, যার ফলে আখেরে লাভ হয় বাচ্চারই। বড় হতে হতে সমস্যাটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তারা আরও বলেন, “এইসব প্রি ম্যাচিওর বাচ্চাদের দ্রুত প্রি স্কুলে দেওয়া দরকার, যাতে তারা নানাবিধ সামাজিক গণ্ডি বাড়াতে পারে, কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা শেখে, যত দেরি হবে তত মানসিক ও স্বভাবগত সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct