আইসল্যান্ড: যে দেশে একটি মশাও নেই
ফৈয়াজ আহমেদ
গত কয়েক দশকে মশার কামড়ে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে বেশ কয়েকবার মহামারি সৃষ্টি হয়েছিল আফ্রিকায় এবং এশিয়ায়। এছাড়াও প্রতিবছর প্রায় ৭০ কোটি মানুষ প্রায় মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হন। আইসল্যান্ডে যেহেতু মশা নেই, তাই মশাবাহিত রোগের বিস্তার ঘটবে এমন সম্ভাবনাও নেই। দেশটিতে কেন মশা নেই এর পেছনে দুটো ব্যাখ্যা রয়েছে। একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, আইসল্যান্ডের আবহাওয়া এত বেশি প্রতিকূল যে মশার টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনাই নেই সেখানে। মশার বংশবৃদ্ধির জন্য কিছুটা উষ্ণতার প্রয়োজন হয়। এজন্য আমরা দেখতে পাই যেসব দেশের আবহাওয়ার উষ্ণতা যত বেশি, সেসব দেশে মশার উৎপাত তত বেশি এবং মশাবাহিত রোগের সংক্রমণও তত বেশি। গত কয়েক দশকে মশার কামড়ে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে বেশ কয়েকবার মহামারি সৃষ্টি হয়েছিল আফ্রিকায় এবং এশিয়ায়
আফ্রিকা যেহেতু পৃথিবীর উষ্ণতম মহাদেশগুলোর একটি, তাই এই দেশের সহায়ক আবহাওয়ায় মশার বংশবৃদ্ধি খুব বেশি হয়। মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপও বেশি দেখা দেয় এই মহাদেশে। আইসল্যান্ডের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এখানে বছরে তিনবার ভয়াবহ শীত নেমে আসে। শীতল আবহাওয়া যেহেতু মশার বংশবৃদ্ধির পক্ষে প্রতিকূলতার সৃষ্টি করে, তাই দেশটির বিরুদ্ধে আবহাওয়ায় মশার বংশ বৃদ্ধি ঘটে না। দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয়, মশার বংশবৃদ্ধির জন্য জলাশয় দরকার হয়। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, আইসল্যান্ডের জলাশয়গুলোতে রাসায়নিক পদার্থের যে অনুপাত রয়েছে, সেটি মশার বংশবৃদ্ধি কঠিন করে তোলে। এর পাশাপাশি বদ্ধ জলাশয়ের দরকার হয়, যেখানে স্রোত নেই। আইসল্যান্ডে স্রোতহীন বদ্ধ জলাশয়ের বেশ অভাব রয়েছে। আইসল্যান্ডে বছরে তিনবার ভয়াবহ শীত নেমে আসে, তাই জলাশয়গুলোর জল তিনবার বরফে পরিণত হয় আইসল্যান্ডে বছরে তিনবার ভয়াবহ শীত নেমে আসে, তাই জলাশয়গুলোর জল তিনবার বরফে পরিণত হয় এছাড়া প্রথম ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যেহেতু আইসল্যান্ডে বছরে তিনবার ভয়াবহ শীত নেমে আসে, তাই জলাশয়গুলোর জল তিনবার বরফে পরিণত হয়। এভাবে চরম প্রতিকূল পরিবেশে যে মশার বংশবৃদ্ধি হওয়া সম্ভব নয়, সেটি সহজেই অনুমেয়।
কিন্তু আইসল্যান্ডে প্রচণ্ড শীতের কারণে যেহেতু মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না, তাহলে ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলোতে কীভাবে মশার অস্তিত্ব আছে? এর উত্তর খুঁজতে আইসল্যান্ডের পার্শ্ববর্তী দেশ গ্রিনল্যান্ডের দিকে তাকানো যায়। গ্রিনল্যান্ডে যখন শীতকাল শুরু হয়, তখন মশা শীতনিদ্রায় চলে যায়। এরপর যখন শীত শেষে বরফ গলা শুরু হয়, তখন মশা ডিম পাড়তে শুরু করে। আইসল্যান্ডের মতো এখানে শীত শেষ হওয়ার পর আবার হঠাৎ শীত নেমে আসে না। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উষ্ণতা বিরাজ করে। তাই এই দেশে মশা বংশবৃদ্ধির সময় পেয়ে থাকি। এজন্য পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসেবে আইসল্যান্ডে মশার বংশবৃদ্ধি না ঘটলেও ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য শীতপ্রধান দেশে মশার বংশবৃদ্ধি ঠিকই ঘটতে থাকে। তবে আইসল্যান্ড ভবিষ্যতে ঠিক কতদিন ‘মশাবিহীন দেশ’-এর স্বীকৃতি ধরে রাখতে পারবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নের ফলে যে হারে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে, তাতে যদি একসময় আইসল্যান্ডের আবহাওয়া পরিবর্তিত হতে শুরু করে। তবে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো পৃথিবীর বাকি সব দেশের মতো আইসল্যান্ডেও মশার প্রজনন শুরু হবে। বর্তমানে মশার অনুপস্থিতে মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ শুন্যের কোঠায় শূন্যের কোঠায় থাকায় আইসল্যান্ড যেভাবে নির্ভার রয়েছে, হয়তো একসময় এরকম নির্ভার থাকা হবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct