নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: কথায় আছে মনের জোর ও ঐকান্তিক ইচ্ছে থাকলে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে বিশ্বজয় করা যায়। এমনই এক শিক্ষক কাজ করে দেখালেন। দীর্ঘ তিন বছর এর বেশি সময় ধরে গলাতে দুরারোগ্য ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন। কিন্তু তবুও কর্তব্যে অবিচল। প্রত্যন্ত গ্রামীন এলাকার প্রাথমিকের পড়ুয়াদের দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী এবং জীবনমুখী শিক্ষা দান করে চলেছেন হরিশ্চন্দ্রপুর দক্ষিণ চক্র-এর কনুয়া ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক রাহানুল ইসলাম।এবারে শিক্ষা জগতে রাহানুল ইসলামের এই ধরনের অবদানকে কুর্নিশ জানালো রাজ্য সরকার। এ বছর রাজ্য সরকারের শিক্ষারত্ন সম্মানে জন্য নাম ঘোষণা হওয়ার তালিকায় মালদা জেলার দুজন শিক্ষকের মধ্যে তিনি একজন। শিক্ষক রাহানুল ইসলামের এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে খুশি হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দারা।আজ ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে শিক্ষারত্ন পুরস্কার গ্রহণ করবেন কনুয়া ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক রাহানুল ইসলাম। কেন তিনি এই শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন তা কনুয়া ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল এক অনন্য দৃশ্য। স্কুলের বাইরে থেকে শুরু করে ভেতর পর্যন্ত সমস্ত দেওয়াল বিভিন্ন রকমের ছবি দিয়ে সাজানো। বিদ্যালয়ের ভবনের বাইরের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে সহজ পাঠের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের বিভিন্ন পাতার ছবি।বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর সুন্দর করে সাজানো।আঁকা রয়েছে মহাপুরুষদের ছবি সাথে তাদের বাণী।স্কুলে গড়ে তোলা হয়েছে কিচেন গার্ডেন,ফুলের বাগান। রয়েছে স্মার্ট ক্লাসরুম সেখানে প্রোজেক্টর সহযোগে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেন শিক্ষকরা।রয়েছে ছাত্র ছাত্রীদেরদের জন্য সমবায়।সেখান থেকেই ছাত্ররা সুলভ মূল্যে তাদের ব্যবহারের জন্য খাতা কলম রুল পেন রাবার খেলার সামগ্রী পর্যন্ত কিনে থাকেন এবং সেটাও পরিচালনা করেন ছাত্র ছাত্রীরা। ছাত্র-ছাত্রীদের কম্পিউটার শেখানোর ব্যবস্থা পর্যন্ত রাখা হয়েছে বিদ্যালয়ে।এমনকি স্কুল প্রাঙ্গনে রয়েছে রঙিন মাছের একুরিয়াম এবং ফোয়ারা। আর সবটাই তৈরি হয়েছে রাহানুল বাবু এই স্কুলে বদলি হয়ে আসার পর।হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে এমন সুদৃশ্য স্কুল রয়েছে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বুক লাইব্রেরী। পাঠ্য বই ছাড়াও ছাত্র ছাত্রীদের বিভিন্ন সাহিত্য পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন স্কুলের শিক্ষকরা। রাহানুল ইসলামের গলায় বিগত কয়েক বছর ধরে গলায় বাসা বেধেছে মারন রোগ ক্যান্সার। কিন্তু তবুও পিছিয়ে পড়েননি, হাল ছাড়েননি তিনি। মারণ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেই গ্রামের প্রত্যন্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিত্যনতুন পদ্ধতিতে শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তুলছেন ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। শুধু তাই নয় রাহানুল বাবু ইতিমধ্যেই তার নিজস্ব পরিকল্পনা লিখে পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষার সিলেবাস কমিটিকে। রাহানুল বাবুর কথায় ‘আমি তিন বছর আগে এই বিদ্যালয়ে ট্রান্সফার হয়ে আসি প্রধান শিক্ষক হিসাবে। তারপর থেকে ইস্কুলকে নতুন করে ঢেলে সাজাবার পরিকল্পনা করি।’ হরিশ্চন্দ্রপুর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শর্মিলা ঘোষ জানান,’আমি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে রাহানুল বাবুকে চিনি। দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক হিসাবে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন। এর আগে এই চক্রেরই যে সমস্ত স্কুলে উনি ছিলেন সমস্ত স্কুলকে তিনি নতুনভাবে সাজিয়ে তুলেছিলেন। প্রাথমিক পড়ুয়াদের জন্য নিত্যনতুন ভাবে কিভাবে পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করা যায় তার পরিকল্পনা দেখে অবাক হতে হয়।ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে তিনি একনিষ্ঠভাবে গ্রামীণ পড়ুয়াদেরকে সাহায্য করে চলেছেন যা সত্যি অনুকরণযোগ্য। উনি শিক্ষারত্ন পেয়েছেন শুনে খুব ভালো লাগছে।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct