নিষ্ঠুর পরিহাস
শীলা সোম
অভিজিৎ ও বিশ্বজিৎ খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো ভাই। একান্নবর্তী পরিবার তাদের। অভিজিতের মা মানে বড়ো মার কাছেই মানুষ হয়েছে বিশ্বজিৎ। আজ অভিজিৎ ইঞ্জিনীয়ার আর বিশ্বজিৎ নাম করা ডাক্তার। তাদের দুজনের সাথে বড়ো হয়েছে বিলাসকাকুর মেয়ে মল্লিকা। বিলাসকাকু আবার অভিজিৎ ও বিশ্বজিতের বাবার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। গ্রামের পড়াশোনা শেষ করে সেই যে বাবার সাথে কোলকাতায় চলে গেলো আর ফিরে আসেনি মল্লিকা।
একদিন বিলাস কাকু হঠাৎ গ্রামে এসে হাজির। বিশ্বজিৎ কে বললেন, তুমি তো বড়ো ডাক্তার, মল্লিকা কে বাঁচাও। কেন? ওর কী হয়েছে? ও কোথায়? বিলাস কাকুর মুখে সব শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলোনা বিশ্বজিৎ। বিলাস কাকু ভালো ছেলে দেখে মল্লিকার বিয়ে দিয়েছিলেন। যদি ও মল্লিকার এ বিয়েতে মত ছিল না। একরকম জোর করেই বিয়ে দিয়েছিলেন। ছেলেটা ভালো, উচ্চ শিক্ষিত, বাবা মা র একমাত্র ছেলে, মেয়ে সেখানে ভালোই থাকবে। বাইরে থেকে ছেলেটা ভালো হলেও ও ছিল এক নম্বরের শয়তান। বিলাস কাকুর সম্পত্তির দিকেই ছিল ওর নজর। বার বার সে মল্লিকাকে চাপ দিতো যাতে সে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসে। চার, পাঁচ বার নিয়ে আসার পর মল্লিকা বেঁকে বসে, সে কিছুতেই বাবার কাছে টাকা চাইবে না। তারপরের দিন সবাই জানলো গায়ে কেরোসিন ঢেলে মল্লিকা আত্মহত্যা করেছে। বলে বিলাস কাকু কেঁদে উঠলো। বললো অনেক ডাক্তার দেখিয়ে ছি কিছু তেই সারাতে পারছেনা। শরীরের অনেক টা অংশ পুড়ে গেছে। বিশ্বজিৎ আশ্বাস দিলো আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো । ভাই অভিজিৎ কে নিয়ে বিলাস কাকুর সাথে তার বাড়িতে এলো। বিলাস কাকু গাড়ি থেকে নেমে ই হন্ হন্ করে হাঁটা দিয়ে একটা বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেলো। ওরাও পিছুপিছু গেলো। কাকু কাকু করে ডাকতেই কাকুর গলা শুনতে পেলো। এ ঘরে এসো। দরজা ঠেলে ঢুকেই তারা অবাক হয়ে গেলো একী দেখছে তারা? দেওয়ালে মল্লিকার বড়ো একটা ছবি। চন্দন দিয়ে সাজানো, গলায় ফুলের মালা। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে কাছে র এক দোকানী কে জিজ্ঞাসা করতে বললো। ওই বাড়ি তে তো কেউ থাকে না বাবু। অত সুন্দর মেয়েটাকে জামাই পুড়িয়ে মারল,নিজে মেরে বলে বেড়িয়েছে মেয়েটা নাকী আত্মহত্যা করেছে। সেই শোক সামলাতে না পেরে বাবা টা গাড়ি চাপা পড়ে কবেই মারা গেছে।।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct