জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য রয়েছে নানা শর্ত। প্রকৃতপক্ষে এগুলোই হচ্ছে কেরিয়ার কাউন্সিলং এর অন্যতম প্রধান বিষয়-বস্তু। কি নিয়ে পড়বে, কত টাকা খরচ হবে ? এটা বলে দেওয়ার অর্থ কখনোই কেরিয়ার কাউন্সেলিং নয়। কর্মসংস্থান, মানবসম্পদ ও উন্নয়ন গবেষক এ এম জিন্নাত বাপী তুলে ধরেছেন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নানা পথ। (অনুলিখন: মোহাম্মদ নাজমুস সাহাদাত)
জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার প্রধান শর্তগুলো সম্পর্কে জেনে নিন। উচ্চশিক্ষা অথবা যে কোন প্রথাগত শিক্ষা আজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই এই সমস্ত শিক্ষা নেওয়ার আগে অত্যন্ত জরুরী কিছু শিক্ষা এবং শর্ত আছে যে গুলো ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে না থাকলে মা-বাবার বিপুল টাকা এবং সময় নষ্ট করে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পরেও প্রতিষ্ঠা পাওয়া কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে।শুনলে অবাক হবেন যে শুধু মাত্র এই সমস্ত কারনেই বা এই গুণাগুণ গুলো না থাকার জন্য আজ দেশের ৭০ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত বেকার অবস্থায়। তাই আগে থেকেই এই বিষয় গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে মানসিক ভাবে তৈরী থাকতে হবে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই সমস্ত শিক্ষাগুলো কিন্তু কখনোই কোন প্রথাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাবেননা। এই সমস্ত অত্যন্ত মূল্যবান বিষয়ে একরকম তাদের কোন ধারণাই নেই । আমি দীর্ঘদিন ধরে এই চাকরি দেওয়ার পেশার সাথে যুক্ত আছি তাই এটা আপনাদের শেয়ার এবং অবগত করছি, এর ফলে অসংখ্য ছেলে- মেয়ে নিজেদের সচেতন করতে পারবেন, এবং এটা পারলেই তাদের প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব হবে । এবং এটা ছাত্র ছাত্রীদের মা-বাবাদের ও জানা অত্যন্ত জরুরী।
*প্রথম শর্ত হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।
*ভীনরাজ্যে গিয়ে কাজ করার জন্য সবসময়ই মানসিক ভাবে তৈরি থাকতে হবে।
*কাজের অভিজ্ঞতা না হওয়া পর্যন্ত নূন্যতম বেতনে এমনকি প্রয়োজনে শুধুমাত্র খাওয়া-থাকার খরচ তোলার মতো বেতনে-ই কাজ করার জন্য তৈরি থাকতে হবে।
*মা-বাবা আত্মীয়স্বজন ছেড়ে ভীনরাজ্যে থেকে কাজ করার জন্য মানসিকভাবে সবসময়ই তৈরী থাকতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে ভীনরাজ্যে থাকা কোন ঘনিষ্ঠদের বা আত্মীয়ের উপর কোন ভাবেই নির্ভরশীল থাকা যাবেনা।
*নিজে রান্না করা জানতে হবে, এবং নিজে রান্না করে খাবার মানসিকতা থাকতে হবে, নিজের খাবারের থালা নিজেকেই ধুয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
*নিজের পোশাক, বিছানা নিজেকেই পরিস্কার করার মানসিকতা থাকতে এবং করতে হবে।
*কোন কাজকেই ছোট মনে করা যাবেনা, বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নতুনদেরকে যে পদে এবং যে কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু সেই কাজ না করিয়ে অন্য বিভাগে এবং অপেক্ষাকৃত নিম্ন স্তরের কাজ করাচ্ছে, এক্ষেত্রে ঐ কাজটাই করতে হবে। এটা কিন্তু অভিজ্ঞতা-ভবিষ্যতের ভালোর জন্যই এবং সংস্থাতে পর্যাপ্ত কাজ না থাকার জন্যই করতে হয় বহুক্ষেত্রে আবার সংস্থা কর্মীকে আরো দক্ষ করে নেওয়ার জন্য, এবং সেই কর্মী ভীনরাজ্যে নিজেকে কতোখানি খাপ খাওয়াতে পারছে অথবা তাকে পর্যবেক্ষনে রাখার জন্য এটা করে থাকে। সুতরাং কখনোই ঐ চাকরি ছেড়ে পালিয়ে আসা যাবে না, হাজার-হাজার বাঙালি ইঞ্জিনিয়ারকে আমি দেখেছি শুধু মাত্র এই কারনেই চাকরি ছেড়ে পালিয়েছে এবং আজও বেকার আছে ।
*যেকোন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। অর্থাৎ কাজের স্থানে প্রথমে থাকার-খাওয়ার এমনকি জলের সমস্যা হতে পারে। শহর-বাজার থেকে দুরে গ্রাম এবং জঙ্গল এলাকাতেও থাকার মানসিকতা থাকতে হবে। নতুন জায়গাতে এই রকম খাওয়া-থাকার-যাতায়াতের সমস্যা হবেই। এক্ষেত্রে সব সময়ই নিজের প্রতিষ্ঠা পাবার উদ্দেশ্যকেই একমাত্র ধ্যান দিতে হবে। কখনোই ঐ খাওয়া-থাকার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যাবেনা। কারণ এগুলো সাময়িক সমস্যা, কিছু দিন পর অবশ্যই সমাধান হয়ে যাবে। তাই এর জন্য কিন্তু কখনোই চাকরি ছেড়ে বাড়ি পালাবেন না। পালালে হয়তো জীবনে আর কোন দিন এই চাকরির সুযোগ নাও পেতে পারেন।
*জাতিগত এবং ধর্মীয় দিক থেকে মানসিক ভাবে নিজেকে অত্যন্ত মুক্তমনের এবং নিরপেক্ষ থাকতে হবে। প্রতিটা সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে সমস্ত ভেদা-ভেদ ভুলে একসাথে থাকা খাওয়ার মানসিকতা থাকতেই হবে।
* অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে বিশেষ করে বিয়ের মতো অনুষ্ঠান, মেলা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্যাগ করতে হতে পারে। এর জন্য মানসিকভাবে তৈরী থাকতে হবে। যেমন, আমি নিজে আমার নিজের ৩ ভাই-বোনের কারো বিয়েতেই হাজির থাকতে পারিনি এবং আমার স্কুল-কলেজের হাজার বন্ধুদের মধ্যে মাত্র এক জন বন্ধুর বিয়েতে হাজির থাকতে পেরেছি। সুতরাং চাকরি ছেড়ে কোন দিন ঐ সমস্ত অনুষ্ঠানে থাকা যাবে না।
*কাজের বিষয়ে বেশি-বেশি শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। না জানা অতি সাধারণ কিন্তু ইগোর কারণে কিছু না জেনে ভুল করা অত্যন্ত জঘন্য। এবং কাজ শেখাবার বহু মানুষ সেখানে পাবেন, আপনার দরকার শুধু তাদের কাছে প্রমান করা। আপনার কাজ শেখার মানসিকতাটা ।
*ভিনরাজ্যে কাজ করতে
গিয়ে একমাত্র ভিনরাজ্য থেকে আসা অন্যদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারো, তবে অবশ্যই নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রেখে। কিন্তু কখনোই ওখানকার স্থানীয়দের সাথে কোন প্রকার ঘনিষ্ঠতা করা যাবেনা বা তাদের বাড়ি যাওয়া-আসা করা যাবেনা ।
* ভিনরাজ্যে থেকে কাজ কারার সময় আবেগ-প্রবণ সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করতেই হবে। সম্পর্ক অবশ্যই রাখা যাবে যদি সেটা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেরণা দায়ক হয় । প্রেমিক-প্রেমিকা, মা-বাবার জন্য মন খারাপ করা যাবেনা। এই সমস্ত সম্পর্ক গুলোকে কখনোই কাজের থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যাবেনা,
*অত্যন্ত জরুরী কোন কারণ ছাড়া কারো সাথে বেশি টাকা ধার দেয়া-নেয়া করা যাবে না এব্যপারে সবসময়ই সচেতন থাকতে হবে। এবং কোন প্রকার নেশাগ্রস্থ কারো সাথেই কোন প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেনা।
* ভীনরাজ্যে সব সময়ই নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হবে যেমন চলা-ফেরা, মেলা-মেশে, রাস্তা পারাপার, দ্রুত গতিতে গাড়ি (বাইক) চালানো ইত্যাদির ক্ষেত্রে।
*কখনোই কারো সাথে কোন প্রকার অযথা তর্ক করবেননা। সাধারণত এই সমস্ত বিষয় এবং শর্ত গুলো যদি কোন ছাত্র-ছাত্রী মেনে চলতে পারে তবে ১০০ শতাংশ সে তার পেশাতে উচ্চপ্রতিষ্ঠা পাবেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct