সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: পুজোর আগে এ যেন চোখ টানার ‘ড্রেস রিহার্সাল’! আর এই ড্রেস রিহার্সালে নিজেদের দিকে নজর ঘোরাতে চেষ্টায় কসুর রাখল না পুজো কমিটিগুলি। বাহারি পোশাকের সঙ্গে রংবেরঙের ছাতার ব্যবহারে নজর ঘোরাল কেউ, আবার কেউ মিছিলে আনল বিশাল ঢাকির দল থেকে মুখোশের সম্ভার। কোনও পুজো কমিটি আবার থিমের মতো চমক দিল প্রাক্ পুজোর মিছিলে। গত বছর ডিসেম্বরে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আদায় করেছে কলকাতার দুর্গাপুজো। জায়গা করে নিয়েছে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি অংশে। এই স্বীকৃতিস্বরূপ ধন্যবাদ জানাতে ১ সেপ্টেম্বর প্রাক্ পুজো মিছিলের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সেই মিছিল ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে একাধিক নির্দেশিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল পুজো কমিটিগুলির কাছে। কোনও ট্যাবলো না রেখে মূলত রঙিন মিছিল করার ওপরে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল নির্দেশে। বিধি মেনে মিছিল করে নজর টানল শহরের একাধিক পুজো কমিটি। মুখে প্রতিযোগিতার কথা না বললেও কার্যত কেউ কাউকে জায়গা ছাড়ল না এক ইঞ্চি।রঙিন ছোট-বড় ছাতার সঙ্গে সুসজ্জিত ঢাকির দল নিয়ে মিছিলে চমক দিল ত্রিধারা উৎসব কমিটি। সেই সঙ্গে ক্লাবের তরফে মিছিলে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট পোশাকের বন্দোবস্ত করেছিলেন ক্লাবকর্তারা। পিছিয়ে রইলো না চেতলার মিছিলও। মূলত পোশাকের চাকচিক্যে মাত করলেন তাঁরা। পুজোর মিছিলে ঢাকের সঙ্গী ছিল শঙ্খধ্বনি। মোহাম্মদ আলী পার্ক এক ঝাঁক তরুণীকে নিয়ে আয়োজন করেছিল জ্যান্ত দুর্গার ।পুজোর থিমের সঙ্গে মিল রেখে মিছিল সাজায় বকুলবাগানও। এই পুজোর সম্পাদক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা এ বার পুজোয় অন্য রকম থিম করছি। তার সঙ্গে মিল রেখেই মিছিল করলাম। সকলকে জানানোর এমন সুযোগ ছাড়লে চলে!’’ চমকের তোড়জোড় ছিলো শ্রীভূমি, চক্রবেড়িয়া, দেশপ্রিয় পার্কও চেতলা অগ্রণীর পুজোকর্তাদের মধ্যেও।মিছিলের রং বাড়াতে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে ছো-নৃত্য, রঙিন মুখোশ, ব্যান্ড, হরেক ছাতা ছিল বৃহস্পতিবার এর মিছিলে।
তবে পুজোর এক মাস আগে ব্যস্ততার মধ্যে মিছিল সাজাতে গিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান অনেক পুজোকর্তা। গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সাবেকিআনার চমক ছিল মিছিলে। বৃহস্পতিবারের দুপুরের বেশ কিছুক্ষণের বৃষ্টি দমাতে পারিনি পুজো উদ্যোক্তাদের এই উদ্যমকে যান চলাচলে ব্যস্ত সেন্ট্রাল এভিনিউ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে রূপ নিয়েছিল এক মহামিলনের রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ মোবাইল নিয়ে সেই মুহূর্ত বন্দি করেছিল। ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেদের পোশাক পরে মেডিকেল কলেজের নার্সরা বাইরে বেরিয়ে এসে হাতে পোস্টার নিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ভাদ্র মাসের অপরাহ্ন আকাশের কালো মেঘ সরিয়ে মাইকে ভেসে আসা গানের সুর জানান দেয় অকাল শরতের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct