সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বিশ্বের দরবারে দুর্গা পুজোকে পৌঁছে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রেড রোডে সম্মান যাপন অনুষ্ঠান মঞ্চে পেছনে বড় বড় করে লেখা ছিল- আমরা গর্বিত, দেশ গর্বিত, বিশ্ব গর্বিত। এদিনের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ইউনেস্কোর তরফে এই স্বীকৃতি আমাদের আরও উৎসাহ জুগিয়েছে। এটাই ভবিষ্যতের পাথেয়। আজকের এই মঞ্চ সর্ব ধর্ম-বর্ণের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। মনে রাখতে হবে মানবতাই সবথেকে বড় ধর্ম। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ কাউন্সিলকে দিয়ে একটি সমীক্ষা করিয়েছিলাম আমরা। সেই সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে এ রাজ্যে ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কত মানুষ উপকৃত হন এর মাধ্যমে। অতএব আমাদের ধর্মই আমাদের উৎসব। আমাদের জাত আমাদের একতা। আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ।” একইসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, “আজকে থেকে পুজো শুরু হয়ে গেল। সবাই নিজের মতো করে আনন্দে মেতে উঠুন । যে যেমন করে পারুন আনন্দ করুন। মনটাকে খুশি রাখুন। সবুজ রাখুন। মানবিক ও উন্মুক্ত রাখুন। হৃদয়টাকে বড় করুন। হৃদয় খোলা রাখুন। একতাই সবথেকে বড় জাত , ধর্ম, বর্ণ বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলা নতুন করে জাগাক সকলকে। আবেগের সঙ্গে বলে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে মহামিছিল শেষে রেড রোডে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
যেখানে নৃত্য পরিবেশন করেন বিনোদন জগতের প্রথম সারির অভিনেত্রীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর ও লেখায় গাওয়া গানে নৃত্য পরিবেশন করেন সায়ন্তিকা, মিমি, সৌমিতৃষা সহ টলিউড ও টেলিভিশনের নায়িকারা। এছাড়াও মঞ্চে বসেছিল চাঁদের হাট। রাজ চক্রবর্তী, জশের মতো অভিনেতারা উপস্থিত ছিলেন মঞ্চে।এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই উপস্থিত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। দুর্গাপুজোর এই স্বীকৃতি নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন সৌরভ ও। পাশাপাশি এদিন মোহনবাগান , মোহামেডান স্পোর্টিং এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিনিধিরাও সম্বর্ধনা জানান ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের।সুবিশাল উৎসব উদযাপনের সাক্ষী থাকতে পারব ভাবিনি। কলকাতায় মেগা ব়্যালিতে অংশ নিয়ে এমনভাবেই ভাষণে মনের ভাব ব্যক্ত করেন ইউনেস্কোর প্রতিনিধি এরিক ফাল্ট। রেড রোডের মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “ইউনেস্কোর তরফে দুর্গাপুজোকে ইনট্যানজিবল কালচালার হেরিটেজের স্বীকৃতি দেওয়ার তিনমাস পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি জানিয়েছিলেন ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে একটি বড় মিছিলের আয়োজন করবেন। কিন্তু, আমি সত্যিই ভাবতে পারনি এত বিশাল আয়োজন হবে। সত্যি এখানে না এলে দুর্গাপুজোর মাহাত্ম, ব্যাপ্তি বুঝতে পারতাম না।” এখানেই শেষ নয়, এরিক ফাল্ট আরও বলেন, “আমি এই উৎসবের পাঁচদিন আবার কলকাতায় আসতে চাই। গ্র্যান্ড উৎসবে সামিল থাকতে উৎসুক হয়ে আছি।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে পেরে আমরা অত্যন্ত খুশি। ৫০ হাজার সেলফ হেল্প গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সহ বিদেশি সকল প্রতিনিধিদের দুর্গাপুজোর সময় এবং রেড রোডের কানিভাল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য আগাম আমন্ত্রণ জানান। এদিন শহরের বুকে এই মিছিল ও রেড রোডের ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠান ঘিরে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ।প্রায় তিন হাজার পুলিশের পাশাপাশি করা নজরদারি ছিল ড্রোনের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct