আজিজুর রহমান, আউসগ্রাম: সাড়ে তিনশো বছরের মোগল সময়কালের দারিয়া খান মসজিদ আজও বিদ্যমান। যা দেখতে বেশ কিছুটা তাজমহলের মতো। মসজিদটি পূর্ব বর্ধমান জেলার আউসগ্রামের ২ ব্লকের এড়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের সরগ্রামে অবস্থিত। মসজিদে নিত্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন গ্রামের মানুষের এক অংশ। যেটি আনুমানিক ১৬৬০ খ্রীষ্টাব্দে নির্মাণ করেছিলেন তখনকার ওই এলাকার জমিদার দারিয়া খান। পরিবার সুত্রে জানা গেছে, চুন সুরকির দিয়ে তাজ মহলের আদলে তৈরী করা হয়েছিল ওই মসজিদ। মসজিদ নির্মাণে উত্তরপ্রদেশ থেকে মিস্ত্রিও এনে ছিলেন দারিয়া খান। সুন্দর ডিজাইনে সাজানো হয় মসজিদের ভিতর বাহির। চারপাশে রাখা হয় মিনার। মাঝে গোলকাকৃতির বড় গম্বুজ। যা দুর থেকে তাজমহলের মতো দেখতে লাগে। মসজিদের ভিতরে আঠারো জন নামাজী একত্রে নামাজ পরতে পারেন। তবে মুসুল্লির সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ায় ২০১৪ সালে বাইরে একটি বড় বারান্দা নির্মাণ করেন মসজিদের সেক্রেটারী তথ পরিবার সদস্য ইয়াসিন খান ও তার ভাই মহসিন খান। যুগের পর যুগ মসজিদের ইমামের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে দারিয়া খান পাঁচ একর সম্পত্তি রেখেছিলেন মসজিদের নামে। যা ওয়াকফ করা হয় অওলাদদের নামে। সেখান থেকে মসজিদের রক্ষনবেক্ষন করা থেকে দেওয়া হয় ইমামের বেতন। বংশ পরম্পরায় দারিয়া খানের ওয়ারিশনরা ওই সম্পত্তি থেকে মসজিদের দেখাশোনা করেন। জানতে পারা গেছে, মসজিদ লাগোয়া দেড় বিঘা একটি পুকুর রয়েছে। যেখানে ওজু গোসল করার জন্য একটি সান বাঁধানো ঘাট তৈরি করা আছে। দারিয়া খানের বংশধর ইয়াসিন খান জানিয়েছেন, চার কাঠা জায়গায় উপরে মসজিদটি নির্মান করা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, দারিয়া খানের পুত্র সন্তান না থাকায় তার মৃত্যুর পর মসজিদের সম্পত্তির মালিক হন বড় জামাই গুলাম খান তারপর দিদার খান। এরপর দিদারের পুত্র মকবুল খান। মকবুল খানের পর সাহাদত খান। তারপর সম্পত্তির মালিক হন মকলেব খান।
বর্তমান ওই সম্পত্তির মালিক তিনি ও তার ভাই মহসিন খান। তারাই এখন মসজিদের সেক্রেটারি পদে রয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের পূর্ব পুরুষরা ওই মসজিদ তৈরী করেন। তখন গ্রামে গুটি কয়েক মানুষ বাস করতেন। ওই এলাকার জমিদার ছিল দারিয়া খান। তাই এলাকায় প্রচুর জমিজায়গা ছিল দারিয়া খানের নামে। তিনি বলেছেন, এলাকার পাশের অবস্থিত দারিয়াপুর গ্রাম। যেটি দারিয়া খানের নামেই নামকরণ করেন তখনকার বর্ধমানের রাজা। তাছাড়া আউসগ্রামের কলাই ঝুঁটি গোটা গ্রামটি তাদের ছিল। প্রজা বিলির পর তা জনসাধারণের হয়ে যায়। তবে এখনও বিদ্যমান গ্রামের বৃহৎ খাঁ পুকুর। সেইসব পুরাতন কাগজপত্র আছে তাদের কাছে। ইয়াসিন খান আরও বলেন, বর্তমানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয় ওই মসজিদে। তাছাড়াও প্রতিমাসে একবার জিকিরের মজলিসের আয়োজন করেন মহল্লাবাসীরা। যেখানে গোটা গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা দারিয়া খান মসজিদ এলাকার নাম উজ্জ্বল করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct