সাদ্দাম হোসেন মিদ্দে, ভাঙড়, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিষদীয় দফতরের উদ্যোগে সারা রাজ্যজুড়ে চলছে যুব সংসদ প্রতিযোগিতা। সংসদীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতা ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙড়ে।সাধারণত ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয় শনিবার বন্ধ থাকে। অথচ ছুটির দিনেই ব্লক পর্যায়ের যুব সংসদ প্রতিযোগিতা আয়োজন করল ভাঙড় ১ নম্বর ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির যুব দফতর। বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। এদিন স্থানীয় বিধায়ক বা সাংসদ ও উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন না বিচার বিভাগ ও সংবাদ মাধ্যমের কেউ। এমনকি প্রতিযোগিতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রচার চালানো হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উৎসাহী সাধারণ মানুষ উপস্থিত হতে পারেননি। ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকে ভাঙড় ও ক্যানিং পূর্ব দুটি বিধানসভা রয়েছে। এদিন দেখা যায়নি ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী কিংম্বা ক্যানিং পূর্বর বিধায়ক সওকাত মোল্লা কাউকেই। অন্য দিকে যাদবপুর ও জয়নগর দুটি লোক সভা ক্ষেত্র রয়েছে এই ব্লকে। যাদবপুরের সাংসদ মিমি চক্রবর্তী অথবা প্রতিমা নস্কর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন না কোনো মন্ত্রীও। উপস্থিত ছিলেন না বিচার বিভাগ ও সংবাদ মাধ্যমের কোনো সদস্য। অন্যদিকে ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকে যুব সংসদ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার। একই রকম ভাবে সেখানেও স্থানীয় বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী বা স্থানীয় সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকে দেখা যায় নি। যদিও ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন সেদিন। এখানেও উপস্থিত ছিলেন না বিচার বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমের কোন সদস্য। ছিলেন না কোনো মন্ত্রীও।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সংসদীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে সচেতনতা প্রতিযোগিতায় গণতন্ত্রের প্রথম স্তম্ভ আইন বিভাগ ও দ্বিতীয় স্তম্ভ নির্বাহী বিভাগ, তৃতীয় স্তম্ভ বিচার বিভাগ ও চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যমের কারও উপস্থিত না থাকা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সংসদীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে যাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদের অনুপস্থিতিতে এই ধরণের কর্মসূচি গুরুত্বহীন। উল্লেখ্য সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ব্লকে ব্লকে চলা যুব সংসদ প্রতিযোগিতায় স্থানীয় বিধায়ক বা সাংসদের উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে অন্যথা হয়েছে ভাঙড় ১ ও ২ নম্বর ব্লকে। এবিষয়ে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় আপনজন প্রতিনিধির পক্ষে। নওসাদ সিদ্দিকী আপনজনকে বলেন, “আমার আমন্ত্রণ ছিল না। আমি হয়তো উপযুক্ত ছিলাম না।” তবে এবিষয়ে বিধায়ক সওকাত মোল্লা, সাংসদ মিমি চক্রবর্তী ও প্রতিমা নস্করের সঙ্গে আপনজন প্রতিনিধি যোগাযোগ করতে পারেন নি। ফলে তাঁরা আমন্ত্রিত ছিলেন না? নাকি বিশেষ কাজে উপস্থিত থাকতে পারেন নি? তা জানা সম্ভব হয়নি আপনজন প্রতিনিধির পক্ষে। গণতন্ত্র সচেতনতার কর্মসূচিতে গণতন্ত্রের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্তম্ভের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না এটা একটা দিক। অন্য দিকটি হল ছুটির দিনেই ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির মাঠে অনুষ্ঠিত হল যুব সংসদ প্রতিযোগিতা। আরও একটি দিক হল যুব সংসদ প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি। সব মিলিয়ে গণতন্ত্র সচেতনতার প্রতিযোগিতায় ধরা পড়ল প্রশাসনের চরম অসচেতনতা। এবিষয়ে আইনজীবী তথা বঙ্গবিভূষণ আব্দুল ওহাব আপনজনকে বলেন,” যেভাবে ভাঙড়ের দুটো ব্লকে যুব সংসদ প্রতিযোগিতা হল তা সম্পূর্ণ অবৈধ। কি আর বলব এই ব্যবস্থা সম্পর্কে। এই প্রতিযোগিতার যারা নিয়ামক তারা এর জবাব দিক।” ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রীড অঞ্চলের বাসিন্দা মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম আপনজনকে বলেন, “ যেভাবে অতি সংগোপনে কোনো প্রচারণা ছাড়াই যুব সংসদ প্রতিযোগিতা হল তা দূর্ভাগ্যজনক। খবর পেলে উপস্থিত থাকতাম। গণতন্ত্র সচেতনতার প্রতিযোগিতায় অন্ধকারে রাখা হল জনগণকে।”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct