জিয়াউল হক, চুঁচুড়া, আপনজন: তৃণমূলের প্রাক্তন উপ প্রধান খুনে যাবজ্জীবন তৃণমূলেরই প্রাক্তন প্রধান সহ ৮ জনের। সাজা ঘোষণার পর আদালতের সামনে ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মৃত্যুঞ্জয় অনুগামীদের। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে, অভিযোগ প্রাক্তন প্রধানের পরিবারের। চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারাক ফার্স্ট ট্রাক কোর্টে অভিযুক্তদের সাজা ঘোষনা করেন বিচারক কাজি আবুল হাসেম। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়,২০১৮ সালে ধনিয়াখালীর কুমরুলে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপ প্রধান মৃত্যুঞ্জয় বেরাকে পিটিয়ে খুন করা হয়। অভিযোগ ওঠে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফলে উপ প্রধানকে পিটিয়ে খুন করে তৎকালীন প্রধান চিত্তরঞ্জন সাঁতরা ও তার দলবল। ২০১৩-১৮ সাল পর্যন্ত ধনিয়াখালীর গোপিনাথপুর-২ পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বেরা।চিত্তরঞ্জন প্রধান ছিলেন ২০০৮-১৩ সাল পর্যন্ত। ২০১৮ সালের মে মাসে পঞ্চায়েতের ফল ঘোষণা হয়। সেবার গ্রাম সভা ও পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীরা মনোনয়ন করতে না পারায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। এরপর পঞ্চায়েত কার দখলে থাকবে তা নিয়ে তৃণমূলের দুই নেতা চিত্তরঞ্জন সাঁতরা ও মৃত্যুঞ্জয় বেরার মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয়।
ঐক্যমত না হওয়ায় ২৩ মে ধনিয়াখালী বিডিও পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের জন্য সভা ডাকেন।সেই সভা থেকে বাইক নিয়ে ফেরার পথে দুপুর তিনটে নাগাদ কুমরুল আলুপট্টিতে আক্রান্ত হন মৃত্যুঞ্জয় বেরা।রড শাবল ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে মারা হয় তাকে।গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তারকেশ্বর গ্রামীন হাসপাতাল সেখান থেকে হাওড়ার একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। ২৫ মে মৃত্যু হয় মৃত্যুঞ্জয় বেরার।এই ঘটনায় উপ প্রধানের স্ত্রী শিপ্রা বেরা ১৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন ধনিয়াখালী থানায়। ঘটনার পর পলাতক ছিল অভিযুক্তরা। পুলিশ তদন্তে নেমে মূল অভিযুক্ত প্রধান চিত্তরঞ্জন সাঁতরাকে নদীয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার হয় সুরজিৎ সাঁতরা,বিশ্বজিৎ সাঁতরা ও বিশ্বজিৎ ঘোষ।হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে গ্রেফতার হয় অরূপ সিং। বিদ্যুৎ রায়, দীপু বাউড়ি, কাজি মহম্মদ বাদশাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পাঁচজন অভিযুক্ত এখনো পলাতক রয়েছে। চুঁচুড়া আদালতে অভিযুক্তদের বিচার পর্ব শুরু হয়।২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।বুধবার বিচারক অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেন।আজ তাদের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেন।২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের অতিরিক্ত জেল হবে। আজ অভিযুক্তদের আদালতে নিয়ে আসা হয়।সাজা ঘোষণার পর তাদের প্রিজনভ্যানে তোলার সময় বিক্ষোভ শুরু করে মৃত্যুঞ্জয় অনুগামীরা।মৃত্যুঞ্জয়ের ছবি নিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকে ফাঁসির দাবিতে। পাল্টা চিত্তরঞ্জনের বোন অভিযোগ করেন তার দাদাই তৃণমূল এনেছিল গ্রামে।দাদা ও ভাইপোদের ফাঁসানো হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের মা এবং মেয়ে আদালতে হাজির ছিলেন। ছেলেকে নৃশংস খুনে অভিযুক্তদের সাজা শুনতে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct