দেশে কিছুকাল ধরে সরকার দখলের যে একমুখী স্রোত বহমান, আচমকাই তা ঘুরিয়ে দিল বিহার। প্রবীণ নীতীশ কুমার ও নবীন তেজস্বী যাদবের নিঃশব্দ বিপ্লব প্রবল প্রতাপান্বিত বিজেপিকে হতবাক করে দিয়েছে। এতটাই যে পালাবদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা নির্বাক! বিরোধীরা এই পালাবদলে কতটা উৎফুল্ল ও আশান্বিত, তার প্রমাণ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবাই নতুন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থনের কথা জানিয়েছে। লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ প্রথম কিস্তি।
ভারতীয় রাজনীতিতে কিছুকাল ধরে সরকার দখলের যে একমুখী স্রোত বহমান, আচমকাই তা ঘুরিয়ে দিল বিহার। প্রবীণ নীতীশ কুমার ও নবীন তেজস্বী যাদবের নিঃশব্দ বিপ্লব প্রবল প্রতাপান্বিত বিজেপিকে হতবাক করে দিয়েছে। এতটাই যে পালাবদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা এখনো নির্বাক! বিরোধীরা এই পালাবদলে কতটা উৎফুল্ল ও আশান্বিত, তার প্রমাণ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবাই নতুন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থনের কথা জানিয়েছে। এমন ঘটনা বিহারের রাজনৈতিক ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। হিন্দিবলয়ে বিহার একমাত্র ভূখণ্ড, যেখানে বিজেপি কখনো একা ক্ষমতায় আসেনি। টানা দুই দশক জাতপাতভিত্তিক এই রাজ্যের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক সমাজবাদী নীতীশ কুমার, এটাও বিস্ময়ের! ক্ষমতায় থাকতে নীতীশ বারবার নীতির সঙ্গে আপস করেছেন। হিন্দুত্ববাদী বিজেপির হাত ধরেছেন, ছেড়েছেন, আবার ধরেছেন, আবার ছেড়েছেন। লালু-তেজস্বীকে কাছে টেনেছেন, দূরে ঠেলেছেন। প্রতিবারই নিজের শর্তে। এত রংবদল সত্ত্বেও বিজেপি তাঁকে কাছে টেনেছে, বিজেপিবিরোধীদের কাছেও তিনি গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। এর কারণ তিনটি। প্রথমত, বিজেপির ঘর করলেও সাম্প্রদায়িকতার রঙে তিনি কখনো নিজেকে রাঙাননি।
দ্বিতীয়ত, মোদির প্রতাপ সত্ত্বেও নীতীশ তিন তালাক ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের বিরোধিতা করেছেন। সিএএ-এনআরসির তীব্র সমালোচনা করেছেন। নিন্দা করেছেন নোট বাতিল সিদ্ধান্তের। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশায় সরব হয়েছেন। হালে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন এবং বিজেপির আপত্তি সত্ত্বেও জাতভিত্তিক জনগণনার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। বিজেপির কোনো সঙ্গী এভাবে বিরোধিতা কখনো করেনি। তৃতীয় কারণ, এত বছর রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে রাজনীতি করছেন, একটিবারের জন্যও কাউকে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার সুযোগ দেননি। এ বৈশিষ্ট্যগুলো সমসাময়িক অধিকাংশ রাজনীতিকের চেয়ে তাঁকে আলাদা রেখেছে। যার ফলে ধার ও ভার কমলেও উপেক্ষণীয় হননি। বিজেপি যে ধীরে ধীরে তাঁর পায়ের তলার জমি কাড়ছিল, নীতীশ তা বুঝতে পারছিলেন। গত বিধানসভা ভোটে লোক জনশক্তি পার্টির চিরাগ পাসোয়ানকে দিয়ে জেডিইউর আসন কমানোর ‘কৌশল’ ধরতে নীতীশ ভুল করেননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, বিজেপি তাঁকে দুর্বল করছে এবং বিরোধী পরিসর ক্রমেই দখল নিচ্ছে লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। মহারাষ্ট্রের পালাবদলও এই সময়। প্রায় পিঠোপিঠি ঝাড়খন্ডে সরকার ফেলার ছকও ধরা পড়ে যায় পশ্চিমবঙ্গে তিন কংগ্রেস বিধায়কের গ্রেপ্তারের ঘটনায়। নীতীশ তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। তেজস্বী তৈরিই ছিলেন। ৭১ বছরের নীতীশ তাই স্রোতের বিপরীতে অবগাহন করলেন।
সৌজন্যে: প্র. আ.
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct